ঢাকা: উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড প্রচারে গণমাধ্যমের কার্পণ্য দেখছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক। গঠনমূলক সমালোচনার পাশাপাশি সরকারের সাফল্য ও উন্নয়নমূলক কাজের প্রচারে গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘জনপ্রশাসন ও গণমাধ্যম’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যে রাখেন ইসমাত আরা সাদেক। সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য দু’দিনব্যাপী এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
সরকারকে ‘মিডিয়াবান্ধব’ উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই সরকার সকল গণমাধ্যমের অবাধ তথ্যপ্রবাহে অত্যন্ত আন্তরিক। সাংবাদিকতা পেশার মর্যাদা ও গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। সরকারের প্রত্যাশাও অনেক বেশি। গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে আপনারা পারেন কল্যাণকর ভূমিকা রাখতে।
‘সরকার ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করছে, তা আপনাদের মাধ্যমে প্রচার করতে চাই। সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় আপনাদের ভূমিকা আছে। গণমাধ্যম সরকারের সাথে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করে। সরকার গণমাধ্যমের আন্তরিকতা সব সময় প্রত্যাশা করে। কিন্তু প্রচারে কিছুটা কার্পণ্য করা হয়। ’
গণমাধ্যম সরকারের পরিপূরক উল্লেখ করে ইসমাত আরা সাদেক বলেন, সরকার গণমাধ্যমের প্রতিপক্ষ নয়। সবাই চাই দেশকে এগিয়ে নিতে। আপনাদের ভূমিকা সরকার ও জনগণের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।
উন্নয়নমূলক কাজের প্রচারের বিষয়েও কথা বলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
‘আমরা অনেক কাজ করছি, প্রচার পাচ্ছি না। জনগণকে জানিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে, সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সংবাদপত্র বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। ভাল কাজগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে, না হলে তো উৎসাহ পাবো না। ’
অবাধ তথ্য প্রবাহের জন্য তথ্য অধিকার আইন থাকলেও তা বাস্তবায়নে মাইন্ড সেটিং সেভাবে হচ্ছে না বলে মনে করেন জনপ্রশাসন সচিব।
কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে যতটুকু করার কথা, মাইন্ড সেটিং সেভাবে হচ্ছে না। প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে সেল থাকা দরকার। সব তথ্যের জন্য সচিবের কাছে আসার দরকার নাই।
বর্তমান সময়ের সিভিল সার্ভিস সেবা প্রদানকারী হিসেবে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যেন জনগণকে ঠিকমত সেবা দিতে পারি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে তদবিরবাজ, দলীয় উপনেতা-পাতি নেতাদের ভীড় দেখা যায় বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সরকারি নীতি অনুসরণ করে কীভাবে কাজটি সুচারুভাবে করা যায় সেটাই তারা (আমলা) করেন।
তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সুবিধার জন্য সচিবালয়ে একজন মুখপাত্র থাকা দরকার বলে মনে করেন গোলাম সারওয়ার। তিনি বলেন, সারা দিন কী হয়, তা জানার ব্যবস্থা থাকলে খুব ভাল হয়। উপস্থিত জনপ্রশাসন সচিবকে এ বিষয়ে অনুরোধ করেন সমকাল সম্পাদক।
তিনি বলেন, তথ্য অধিকার, উদ্বুদ্ধকরণ সেভাবে হয়নি। খবর না দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। আমরা গণমাধ্যমের শৃঙ্খলা চাই, শৃঙ্খলিত গণমাধ্যম চাই না।
সচিবালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের জন্য এই প্রথম এমন কর্মশালার আয়োজন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ ধরনের আয়োজন থেকে সাংবাদিকরা মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাবেন বলে মনে করেন গোলাম সারওয়ার।
বিকালে কর্ম অধিবেশনে সরকারের কার্যবিধিমালা এবং কর্মবণ্টন বিধিমালা সম্পর্কে আলোকপাত করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের কাজের পরিধিসহ নানা বিষয়ে ধারণা দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
কর্মশালায় সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আইনের উপর অংশগ্রহণমূলক বক্তব্য রাখেন সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) মহাপরিচালক মো. ফারুক হোসেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী বলেন, সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা রয়েছে। এই দায়বদ্ধতার জায়গাটা গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৫
এমআইএইচ/আরআই