ঢাকা: দু’টির মধ্যে একটিকে নিষ্ক্রিয় করে একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করেছে সরকার।
মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়।
আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে ট্রাইব্যুনাল-২ নিষ্ক্রিয় এবং ট্রাইব্যুনাল-১ সক্রিয় রেখে পুনর্গঠন করা হয়েছে। একইসঙ্গে দুই ট্রাইব্যুনাল একীভূত হয়ে পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হিসেবে কাজ করবে বলে জানানো হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
তবে, অপর ট্রাইব্যুনালটি পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত অগঠিত অবস্থায় থাকবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ পুনর্গঠন করা হয়েছে বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল হককে চেয়ারম্যান করে। নতুন এ চেয়ারম্যান একই ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলের সদস্য হিসেবে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। পুনর্গঠিত এ ট্রাইব্যুনালের সদস্য করা হয়েছে ট্রাইব্যুনাল-২ এ কর্মরত সদস্য বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ও সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দীকে। বিচারপতি সোহরাওয়ার্দীকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমে নতুন ট্রাইব্যুনাল সদস্য করার কথাও উল্লেখও রয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
প্রজ্ঞাপনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এর বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বিবেচনায় ট্রাইব্যুনাল দু’টিকে একীভূত করে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এর প্রশাসনিক ও বিচার সংক্রান্ত সকল বিষয়াদি পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সম্পন্ন হবে বলেও জানানো হয়েছে ।
এ পুনর্গঠনের ফলে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এবং ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও সদস্য বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া সুপ্রিম কোর্টে ফিরে যাবেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও জানানো হয়েছে, পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল থেকে হাইকোর্ট বিভাগে প্রত্যাবর্তনকারী বিচারপতিদের অনুকূলে ট্রাইব্যুনালে কর্মরত থাকাকালে প্রদত্ত সকল নিরাপত্তা সুবিধাসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য সুবিধাদি অব্যাহত থাকবে।
এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মোহাম্মদ জহিরুল হক সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করেন। এর পর ট্রাইব্যুনাল-২ থেকে বিচারিক কার্যক্রম চলমান থাকা তিনটি মামলা ট্রাইব্যুনাল-১ এ হস্তান্তর করা হয়।
আইন সচিব সে সময় বলেন, এখন মামলা কম। তাই দুই নম্বর ট্রাইব্যুনাল নিষ্ক্রিয় রাখা হচ্ছে, তবে বাতিল হচ্ছে না। সরকার চাইলেই আবার সক্রিয় করা যাবে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর দু’টি বিধি সংশোধন করা হয়েছে। দু’টি ট্রাইব্যুনালের মধ্যে একটি না থাকলে যেন একটিই অনুপস্থিত ট্রাইব্যুনালের কাজ করতে পারেন, এমন বিধান রেখে বিধি দু’টি সংশোধন করা হয়।
স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়। মামলার সংখ্যা বাড়ায় এবং বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তিন সদস্যের দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয় ২০১২ সালের ২২ মার্চ।
রাজধানীর পুরনো হাইকোর্ট ভবনে স্থাপিত হয়েছে ট্রাইব্যুনাল এবং ধানমণ্ডির সেফহোমে রয়েছে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়।
দুই ট্রাইব্যুনাল মিলিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর মধ্যে এ পর্যন্ত ২১টির রায় দিয়েছেন, যেগুলোতে ২৪ যুদ্ধাপরাধীর সাজা ঘোষিত হয়েছে। তাদের বেশিরভাগেরই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে দু’জনের ফাঁসির রায় কার্যকরও হয়েছে। একটি মামলায় অভিযুক্ত বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালে মারা যাওয়ার কারণে মামলাটির নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
বর্তমানে একটি মামলার দু’জনের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম চলছে ট্রাইব্যুনাল-১ এ। তদন্ত শেষ হয়ে চার মামলায় গ্রেফতারকৃত ও পলাতক ২৮ জনের বিচার শুরুর পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া আরও ২৩ মামলায় ৫৬ জন আসামির বিরুদ্ধে তদন্ত করছেন তদন্ত সংস্থা।
দলবদ্ধ যুদ্ধাপরাধের বিচারে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতাকারী জামায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনও জমা আছে প্রসিকিউশনে, আইন সংশোধিত হলে যার ভিত্তিতে দলটির বিচার শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।
সবমিলিয়ে ৫০ মামলায় মোট ১১৩ ব্যক্তি এবং দলগতভাবে জামায়াতকে বিচার অথবা তদন্তের মুখোমুখি করা গেলেও এখন পর্যন্ত ৬১৮ মামলায় ৩ হাজার ৩শ’ ৭৬ জন আসামির নাম এসে জমেছে ট্রাইব্যুনালে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৫
এসএমএ/এএসআর
** হাইকোর্টে ফিরছেন চার বিচারপতি, আসছেন একজন
** নিষ্ক্রিয় হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২