ঢাকা: ‘সিরিয়াল দেবেন তো টিকেট পাবেন। তাই রাত জেগে কাউন্টার আর সিরিয়াল পাহারা দেওয়া।
কথাগুলো কিশোরগঞ্জের যুবক মো. মোস্তফার। রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে ২১ সেপ্টেম্বরের অগ্রিম টিকিটের জন্য মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে সিরিয়াল দিয়েছেন তিনি।
মোস্তফা জানালেন, বন্ধু আল-আমিন ও তিনি প্রতিবছর সন্ধ্যায় এসে টিকিটের জন্য সিরিয়াল দেন। এভাবেই দু’বন্ধুর পালাক্রমে রাত জেগে চলে সিরিয়াল দেওয়া।
তিনি বলেন, অনেকে বিকেল থেকে সিরিয়াল দিয়েছেন। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগ করে নিতে রাত জেগে অনেকে দাঁড়িয়ে থাকেন। বহু কষ্টে সকালে হাতে টিকিট পেলেই সব কষ্ট দূর হয়ে যায়।
মোস্তফা জানান, কষ্ট হলেও কাগজে সবাই নাম লিখে পালাক্রমে ঘুরতে যান। ফজরের সময় সবার নাম ডাকা হয়। যারা থাকেন তারা লাইনে দাঁড়ানোর সুযোগ পান।

কেউ দেরিতে এলেই আর টিকিট পাবেন না। যাত্রীরা নিজ উদ্যোগে সিরিয়াল প্রথা শুরু করলেও, সকালে আনসারদের কারণে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ মোস্তফার।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে কমলা রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে রাত জেগে মোস্তফার মতো সিরিয়ালে রয়েছেন আরও অনেকে। তাদের বেশিরভাগ বিকেল ও সন্ধ্যায় এসেছেন।
১১নং কাউন্টারের সামনে লম্বা সিরিয়ালের তালিকা নিয়ে বসে থাকা টিকিট প্রত্যাশী সুরুজ মিয়া বাংলানিউজকে জানান, বিশৃঙ্খলার ভয়ে এ তালিকা। নাম লিখিয়ে কেউ ঘুমান, কেউবা খোশ গল্প করে সময় পার করেন। অনেকে মেতে ওঠেন কার্ড খেলায়।
সুরুজ বলেন, অনলাইনের যুগে রাত পার করা তো সহজ ব্যাপার। বেশিরভাগ টিকিট প্রত্যাশী রাত পার করতে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন।

৯নং কাউন্টারে বজলু মিয়া নামে এক টিকিট প্রত্যাশী কাউন্টার দখল করে ফেসবুক চ্যাটিংয়ে মগ্ন।
কাছে যেতেই চমকে উঠে প্রশ্ন, ভাই, সিরিয়াল! নো কম্প্রোমাইজ। সন্ধ্যা থেকে পালাক্রমে আট বন্ধু পাহারা দিচ্ছি। নাম বলে কাগজে সিরিয়াল দিয়ে যান। সিরিয়াল দিলেই টিকিট নিশ্চিত।
সাংবাদিক শুনেই এক গাল হাসিতে বললেন, প্রতিবছর আনসার আর সিরিয়াল বাটপারদের যন্ত্রণায় টিকিট পেতে সমস্যা হয়। তাই নিজেদের উদ্যোগে এ পদ্ধতি।
বজলু বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও আট বন্ধু কিশোরগঞ্জ যেতে সন্ধ্যায় এসে সিরিয়ালে দাঁড়িয়েছি। ঘণ্টা হিসেবে একেক বন্ধু পাহারা দেই।
রেলমন্ত্রী মো. মজিবুল হকের ঘোষণা অনুযায়ী, ১৫ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) থেকে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। ১৫ সেপ্টেম্বর বিক্রি হয়েছে ২০ সেপ্টেম্বরের টিকিট।

এছাড়া বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ২১ সেপ্টেম্বরের, ১৭ সেপ্টেম্বর ২২ সেপ্টেম্বরের, ১৮ সেপ্টেম্বর ২৩ সেপ্টেম্বরের ও ১৯ সেপ্টেম্বর ২৪ সেপ্টেম্বরের টিকিট বিক্রি হবে।
প্রতিবছরের মতো এবারও ঢাকার কমলাপুর ও চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে।
আগামী ২৩ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর ফিরতি টিকিট বিক্রি করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৫
আরইউ/এসএস