কমলাপুর স্টেশন থেকে: মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টায় কমলাপুর স্টেশনে মহানগর প্রভাতীর টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন ধানমণ্ডি থেকে আসা ফয়জুল কবির। গুণে গুণে তখন দেখলেন, লাইনে দাঁড়িয়ে সিরিয়ালে তার সামনে রয়েছেন ৮৩ জন।
বুধবার সকাল ৯টায় টিকিট কাউন্টার খোলা হলেও ফয়জুল কবিরের মতো অনেকেই মঙ্গলবার রাতে এসে সিরিয়াল দিয়েছেন। এখানেই কেটেছে রাত। খাবার, সকালের নাস্তা সবই কমলাপুর স্টেশনে।
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় কাউন্টার খোলার পরই ২১ সেপ্টেম্বরের প্রথম টিকিট পেয়েছেন এমন কয়েক জনের সঙ্গে কথা হয়। ঢাকা-রাজশাহীগামী সিল্ক সিটির প্রথম টিকিট পেয়েছেন হাসনাইন মুরসালিন নামে একজন।
তিনি জানালেন, প্রথম টিকিটটি পাওয়ার জন্য মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি সিরিয়াল দিয়েছেন। একই কথা জানালেন, ঢাকা-চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতীর ওইদিনের প্রথম টিকিট পাওয়া খন্দকার নিয়ামুল ইসলামও। তবে ভোগান্তি হলেও টিকিট পাওয়ায় তারা খুশি।
কমলাপুর স্টেশনে টিকিট বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, টিকিটের জন্য যে পরিমাণ লোক সিরিয়ালে রয়েছেন, তাদের সবাইকে টিকিট দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত আসন রয়েছে। তবে ২১ সেপ্টেম্বরের এসি চেয়ার সীমিত বলে তারা জানান।

এদিকে বুধবার কাউন্টার খোলার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে কমলাপুর স্টেশন। জনারণ্যে মুখরিত স্টেশন প্রাঙ্গণ। তৎপরতা দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও।
কমলাপুর স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, গতকালও (মঙ্গলবার) সবাই ঈদের অগ্রিম টিকিট পেয়েছেন। আজও পাবেন আশা করছি।
মঙ্গলবারের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, গতকাল বিকেল ৫টা পর্য্যন্ত যারা ছিলেন, তাদের কেউ খালি হাতে ফেরেননি। কষ্ট হলেও টিকিট পেয়েছেন।
বুধবার বিক্রি হচ্ছে ২১ সেপ্টেম্বরের টিকিট। গত মঙ্গলবার শুরু হয়েছে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি। এদিন বিক্রি হয় ২০ সেপ্টেম্বরের টিকিট।
ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও সিলেটেও একযোগে রেলের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে।
কমলাপুর স্টেশন সূত্র জানায়, ১৭ সেপ্টেম্বর বিক্রি হবে ২২ সেপ্টেম্বরের, ১৮ সেপ্টেম্বর ২৩ সেপ্টেম্বরের এবং ১৯ সেপ্টেম্বর ২৪ সেপ্টেম্বরের অগ্রিম টিকিট।
একইভাবে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাওয়া যাবে ফিরতি টিকিট। এদিন বিক্রি হবে ২৭ সেপ্টেম্বরের টিকিট। ২৪ সেপ্টেম্বর বিক্রি হবে ২৮ সেপ্টেম্বরের, ২৫ সেপ্টেম্বর বিক্রি হবে ২৯ সেপ্টেম্বরের, ২৬ সেপ্টেম্বর ৩০ সেপ্টেম্বরের টিকিট এবং ২৭ সেপ্টেম্বর বিক্রি হবে ১ অক্টোবরের টিকিট।

প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঈদুল আযহার অগ্রিম টিকিট দেওয়া হবে। একজন যাত্রী ৪টি টিকিট কিনতে পারবেন। ঈদের সময় বিক্রিত টিকিট ফেরত নেওয়া হবে না।
জানা গেছে, বর্তমানে রেলের মোট ৮৮৬টি কোচ রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ১৩৮টি কোচ ঈদের আগেই ট্রেনের বহরে যুক্ত হবে। ১৯৯টি ইঞ্জিন চালু রয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে মেরামতকৃত আরও ২৫টি ইঞ্জিন বহরে যুক্ত হবে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন সারাদেশে এক লাখ ৮০ হাজার টিকিট ইস্যু করা হয়। ঈদ মৌসুমে অতিরিক্ত চাপ মোকাবেলায় প্রতিদিন সব ট্রেন মিলিয়ে দুই লাখ ৫০ হাজার টিকিট বিক্রি করা হবে। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন রুটে পাঁচ জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানো হবে। এ ট্রেনগুলো ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ, ঢাকা-খুলনা, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে ঈদের আগে তিন দিন ও ঈদের পরে সাত দিন চলবে। এছাড়া ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ শোলাকিয়া রুটে ঈদের দিন দুই জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে।
এদিকে গত মঙ্গলবার কমলাপুর স্টেশন পরিদর্শনে এসে রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় রোধে তারা সতর্ক রয়েছেন। যাত্রী নিরপাত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ছাড়াও রেলওয়ের দু’টি নিরাপত্তা বাহিনী যাত্রীদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। যেখানেই যাত্রী হয়রানি ও অজ্ঞান পার্টির অপতৎপরতা দেখা যাবে সেখানেই যাত্রীদের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেবে এসব বাহিনী।
** বুধবার টিকিট পেতে মঙ্গলবার বিকেল থেকে সিরিয়াল
বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৫
এডিএ/আরএম