খুলনার রূপসা গরুরহাট থেকে ফিরে: ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই’ প্রচলিত এ প্রবাদটির সত্যতা মিলেছে খুলনার রূপসা গরুরহাটে।
নামে গরুরহাট হলেও প্রায় দুইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ হাটে এখন আর গরুর দেখা মিলছে না।
মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সাপ্তাহিক এ গরুরহাটে গিয়ে এমন দৃশ্যের দেখা মিলেছে। যে হাটে কোরবানির আগে হাজার হাজার গরু আসতো, এখন সেখানে গরু নেই। সে জায়গা দখল করেছে ছাগল ও ভেড়ার পাল।
কোরবানির গরু কিনতে এসে গরু না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বাগেরহাটের কাঁটাখালী থেকে গরু কিনতে আসা মজিদ মাস্টার বাংলানিউজকে জানান, দুইশ বছরের পুরনো এই হাটে এ বছর গরুর দেখা মিলছে না। অনেক আশা করে এ হাটে গরু কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু না পেয়ে খালিহাতে ফিরে যাচ্ছি।

রূপসা গরুরহাটের ইজারাদারেরা জানালেন, গরু না আসায় হাটে কেনাবেচায় মন্দা দেখা দিয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে গরু না আসায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। হাটে গরু না থাকায় মাত্রাতিরিক্তভাবে ছাগলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রূপসা গরুরহাট সংলগ্ন বাসিন্দা ও ইজারাদার ইশারাত বাংলানিউজকে বলেন, রূপসার এ হাটে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি গরু আসতো। সে কারণে এর নাম হয়- গরুরহাট। কিন্তু সেই ‘গরুরহাট’ এখন ‘ছাগলেরহাট’-এ পরিণত হয়েছে।
তিনি জানান, কোরবানির আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এখনো গরু না আসায় হাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে।
তিনি বলেন, গত বছর লোকসানের পর এবার সরবরাহ সংকট আর দাম বেশি হওয়ার কারণে মোটাতাজা করার হারও কমে গেছে। ফলে, এবার কোরবানিতে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে, তা কেউ আঁচ করতে পারছেন না!

হতাশা ব্যক্ত করে ইশারাত বলেন, রূপসা ঘাটে ফেরি উঠে যাওয়ার পর থেকে এ বাজারে গরু আসা কমে গেছে।
এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গরু ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের কারণে এ হাটে গরু আসা কমে গেছে।
ডুমুরিয়া এলাকার বেপারী রইস উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুনেছি, ভারত থেকে নাকি গরু আসছে। কিন্তু সে গরু যাচ্ছে কই! আর কবে সে গরু বাজারে উঠবে! আমাদের তো খামারিদের কাছ থেকে বেশি দামে গরু কিনতে হচ্ছে।
সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার রূপসার এখানে গরুরহাট বসে। চলতি সপ্তাহের এ দুইদিন গরুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, গরুর হাট দখল করেছে ছাগল। আর যত ছাগল এসেছে, তার চেয়ে মানুষের সংখ্যাই বেশি।

শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ৬টি ও মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ৫টি গরুর দেখা মিলেছে মাত্র। এর মধ্যে আবার দুধের গাভিও রয়েছে।
খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার সেনেরবাজার, পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী, ডুমুরিয়া উপজেলার আঠার মাইল, খর্ণিয়া, শাহপুর, তেরখাদা উপজেলার ইখড়িকাটেঙ্গা, ফুলতলা উপজেলা সদর, দাকোপ উপজেলার বাজুয়া, চালনা ও কয়রা উপজেলার ঘুগরাকাটি হাটে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, এসব হাটেও গত বছরের তুললায় কম গরু উঠেছে।
বেপারীরা জানিয়েছেন, আগের বছরগুলোতে ভারতীয় গরুর আমদানি ছিল অনেক বেশি। এ হাটে শতকরা ৬০ ভাগ ভারতীয় গরুই বেচাকেনা হতো। কিন্তু এবার হাটে ভারতীয় গরুর সরবরাহ একেবারেই নেই। দেশি গরু যা আছে, বাড়িতে ও হাটে আসার পথে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।

খুলনার জিরোপয়েন্ট এলাকার ক্ষুদ্র গরু ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল জানান, তিনি প্রায় আট বছর থেকে গরুর ব্যবসা করেন। এ হাট থেকে প্রতি হাটবারে দুই থেকে তিনটি ছোট আকারের গরু কেনেন তিনি। এরপর বাড়ি থেকে কিছু লাভে তা বিক্রি করে দেন। কিন্তু বর্তমানে চিত্র ভিন্ন।
তিনি জানালেন, এখন হাটে গরুর আমদানি কম। আগে যেভাবে হাটে গরুর সরবরাহ ছিল, এখন তা নেই। গরু সরবরাহ কম থাকায়, দাম বেড়ে গেছে। ফলে, গরু কিনতে পারছেন না তিনি। এ কারণে তার ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে।
খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বাংলানিউজকে বলেন, আসন্ন কোরবানিতে গরু, ছাগল বা ভেড়ার কোনো সংকট নেই। সারাদেশে কোরবানিযোগ্য গরু রয়েছে ৩০ লাখ। ছাগল ও ভেড়া রয়েছে ৬৯ লাখ, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
তিনি বলেন, ভারত থেকে গরু না এলেও এবারের কোরবানিতে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। ইতোমধ্যে, মায়ানমার থেকে বৈধপথে অনেক গরু আসছে, যা কোরবানির জন্য যথেষ্ট।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫
এমআরএম/এবি