ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

শিল্প নগরী বগুড়া

বিপুল সম্ভাবনাময় টেক্সটাইল শিল্পের মৃত্যু !

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫
বিপুল সম্ভাবনাময় টেক্সটাইল শিল্পের মৃত্যু ! ফাইল ফটো

বগুড়া: বগুড়ার বিপুল সম্ভাবনাময় টেক্সটাইল শিল্প সাময়িক আশার আলো ছড়িয়েও টিকে থাকতে পারেনি। ভারতীয় নিম্নমানের কাপড়ের আধিপত্য, অপরিকল্পিতভাবে অর্থ বিনিয়োগ এবং উদ্যোক্তাদের অনভিজ্ঞতায় কালের আবর্তে এই শিল্পের মৃত্যু ঘটেছে।



সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে এই শিল্পে তৎকালীন সরকার কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেও জন্মের পরেই তা মুখ থুবড়ে পড়ে। গত ৩০ বছরেও এখানকার মিলগুলো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। প্রায় ১৪টি টেক্সটাইল মিলের সবগুলোর অস্তিত্বই বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে মিলগুলোর স্মৃতি চিহ্ন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এক সময়ের শিল্প নগরী বগুড়ার অতীত ও বর্তমান সম্পর্কে জানতে বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন) এবং জেলা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানুষের অত্যাবশকীয় পণ্য কাপড়ের চাহিদা স্থানীয়ভাবে মেটানোর জন্য ১৯৮৫ সালে তৎকালীন সরকার দেশে টেক্সটাইল শিল্প বিকাশের উদ্যোগ নেয়। এ জন্য বিসিকের সহায়তায় বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট বস্ত্রকল স্থাপনে উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করা হয়।

এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সে সময় সোনালী, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ও শিল্প ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় বগুড়া বিসিক এলাকায় মেসার্স শিল্পালয় লি., মেসার্স সিদ্দিক টেক্সটাইল মিলস, নিশাত টেক্সটাইল মিলস, কানোকা টেক্সটাইল মিলস, স্পেশালাইজ টেক্সটাইল মিলস, সুজাবাদে মেসার্স খান এন্ড জামান টেক্সটাইল মিলস (প্রা.) লি., গন্ডগ্রামে মেসার্স মিলন টেক্সটাইল মিলস (বিডি) লি., সাবগ্রামে মেসার্স জামান টেক্সটাইল মিলস, রাণীরহাটে মেসার্স চৌধুরী টেক্সটাইল মিলস, গোকুলে মেসার্স গোকুল টেক্সটাইল মিলস, শহরদীঘিতে মেসার্স মন্ডল টেক্সটাইল মিলস (প্রা.) লি., সাজাপুরে মেসার্স বেগম টেক্সটাইল মিলস, অনন্যা টেক্সটাইল মিলস ও অর্কিড টেক্সটাইল মিলস গড়ে ওঠে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এ শিল্পের ব্যাপারে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের অতীত কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রথমেই উইভিং মেশিন স্থাপন করে। অথচ এর আগে সুতা বুনোন উপযোগী করতে সাইজিং মেশিনের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়াও ডাইং ও প্রিন্টিং মেশিন একটি বস্ত্র কলের পূর্ণাঙ্গতা এনে দেয়।

কিন্তু তৎকালীন সময়ে ব্যাংকগুলো কেবলমাত্র উইভিং মেশিন স্থাপন করতে সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ কোটি থেকে সর্বনিম্ন ৭ লাখ টাকা ঋণ দেয়। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় কম ঋণ দেয়ায় মিল চালু করতে গিয়েই শুরুতেই প্রচণ্ড হোঁচট খান মালিকরা।

মোহাম্মদ আলী, আবুল হোসেন, জামাল উদ্দিনসহ এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন শ্রমিক বাংলানিউজকে জানান, সুতা উইভিং মেশিনে দেওয়ার উপযোগী করতে সেই সময় তাদের শাহজাদপুর ও সিরাজগঞ্জে যেতে হতো। সেখান থেকে রাইজিং মেশিনের সাহায্য নিয়ে কাপড় তৈরি করতে হতো। তা বাজারজাত করার আগে আবারও সেসব মেশিনের সাহায্য নিতে হতো। এভাবে এখানকার টেক্সটাইল মিলগুলোতে কাপড় উৎপাদিত হতো। আবার উত্তরাঞ্চলে কাপড়ের মার্কেট না থাকায় ঢাকার ইসলামপুর কেন্দ্রিক মার্কেটের ওপর নির্ভর করতে হতো এসব মিল মালিকদের।

এতে উৎপাদন ব্যয় আশঙ্কাজনকহারে বাড়তে থাকে। চোরাইপথে আনা ভারতীয় পণ্যের ছড়াছড়ি আর অতিরিক্ত উৎপাদন ব্যয়ের কারণে মিল মালিকদের প্রচুর লোকসান গুনতে হয়। ফলে সময়ের ব্যবধানে প্রায় সবগুলো মিলই রুগ্ন হয়ে পড়ে। আর ৩০ বছরের মাথায় এসে শিল্প নগরীখ্যাত বগুড়ার এক কালের বিপুল সম্ভাবনাময় এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে পড়ে।

বগুড়া বিসিক শিল্প নগরীর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক এবং জেলা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাব্যবস্থাপক তবিবর রহমান তালুকদার বিষয়গুলো বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন।     
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫
এমবিএইচ/আরআই                                                                                                                                                                             

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।