রাজশাহী: অবশেষে মৃত্যুর কোলেই ঢলে পড়লো আড়াই মাসের দগ্ধ শিশু মুসরাত জাহান। পুড়ে ফেলার দায় নিয়ে তার চিকিৎসা করছিল রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নওদাপাড়া শাখা।
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত তিনটার দিকে মারা যায় শিশুটি। বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মুসরাত জাহানের বাবা মিজানুর রহমান জানান, গত ১৪ আগস্ট সন্ধ্যায় শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ওই দিনই ভর্তি করা হয় তাকে। এর পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বুধবার আবারও অবস্থার অবনতি ঘটে।
পরে বুধবার সন্ধ্যায় তাকে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু দিবা রাত তিনটার দিকে তার মেয়ে মারা যায়। পরে বেলা ১১টার দিকে তাকে দাফন করা হয়। ঘটনার পর চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ায় হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করবেন না বলে জানান তিনি।
গত ১৪ আগস্ট রাজশাহীর নওদাপাড়ার ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আল-মামুন-অর-রশিদ মিজানুর রহমানকে শিশুটির চিকিৎসার সার্বিক দায়িত্ব নিতে চান তার বাবা। প্রয়োজনে ঢাকায় নিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়েও চিকিৎসা করানোর প্রস্তাব দেন। পরে উপপরিচালকের প্রস্তাবে রাজি হন। এতে মুসরাতকে কেবিনে নিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন তারা।
এর আগে মলদ্বার ছাড়াই জন্ম নেয় শিশু মুসরাত জাহান। তার বয়স মাত্র আড়াই মাস। তবে দুই মাসে দু’বার অপারেশন করা হয় তার। শেষ অস্ত্রোপচারের সময় অপারেশন থিয়েটারে হিট দিতে গিয়ে শিশুটির শরীরের বিভিন্ন স্থান পুড়িয়ে ফেলেন হাসপাতালের এক চিকিৎসক। শিশুটির অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ে। এছাড়া তার আরও একটি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়।
রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জয়নব খাতুন গত ১৯ মে মুসরাত জাহানকে জন্ম দেন। জন্মের পরে দেখা যায়, শিশুটির মলদ্বার নেই।
জয়নব খাতুন জানান, ২০ মে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুটির পেটের সামনের দিকে মলদ্বার প্রতিস্থাপন (কলোস্টমি) করেন ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. মোজাম্মেল হক।
পরে ১০ জুলাই মলদ্বারের নাড়িটি পেটের বাইরে বের হয়ে এলে ১১ জুলাই শিশুটিকে ডা. মোজাম্মেলের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ডা. মোজাম্মেল হক ১১ জুলাই রাতেই শিশুটির পেটে দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচার করে নাড়িটি পেটের ভেতের ঢুকিয়ে দেন। ৩-৪ ঘণ্টা পর অপারেশন থিয়েটার থেকে শিশুটিকে বের করে তার বাবা-মার কাছে দেওয়া হয়। তখন তারা দেখেন শিশুটির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পোড়া।
পোড়ার কারণ জানতে চাইলে চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের জানান, অপারেশন থিয়েটারে এসির ঠাণ্ডায় শিশুটির জ্ঞান ফিরছিল না। তাই সামান্য হিট দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫
এসএস/বিএস