ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ফাল্গুন ১৪৩১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বগুড়ায় জমে উঠেছে পশুর হাট

গরুর জোড়া ৫ লাখ, খাসির ৯০ হাজার!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫
গরুর জোড়া ৫ লাখ, খাসির ৯০ হাজার! ছবি: আরিফ জাহান/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বগুড়া: খামারি আলাল উদ্দিন। মথুরা গ্রামের বাসিন্দা।

বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী মহাস্থান হাটে ২০টি গরু নিয়ে আসেন। এরমধ্যে ৩টি ক্রেতাদের নজরকাড়ে। তাই গরুগুলো ঘিরে ছিল ক্রেতাদের প্রচণ্ড ভীড়।
 
ক্রেতাদের কাছে প্রত্যেকটি গরুর দাম দুই লাখ টাকা করে হাঁকান এই খামারি। বেশ কয়েকজন ক্রেতা এক লাখ থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত দরদামও করেন। কিন্তু দামে বনিবনা না হওয়ায় গরুগুলো বিক্রি করেননি তিনি।

অবশ্য অন্য গরুগুলোও দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। ওইগুলোর দাম রকমভেদে হাঁকান ৫০-৮০ হাজার টাকা।
 
হাফিজার নামে অপর এক ব্যবসায়ী এই হাটে একজোড়া ভারতীয় গরু আনেন। তিনি ওই জোড়ার দাম হাঁকান ৫ লাখ টাকা। শেষ পর্যন্ত দাম ওঠে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী দাম না ওঠায় শেষ পর্যন্ত গরু দু’টি নিয়ে বাড়ি ফিরে যান এ ব্যবসায়ী।
 
অপরদিকে গাবতলীর কাগইলের মাহবুব হোসেন এই হাটে ২টি খাসি নিয়ে আসেন। তিনি খাসি দু’টির দাম হাঁকান ৯০ হাজার টাকা। ক্রেতারা ৫৫-৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বললেও আগামী হাটে এর চেয়ে বেশি দাম পাবেন- এমন আশায় খাসি দু’টি বিক্রি না করে বাড়ি ফেরেন।
 
বুধবার ঐতিহ্যবাহী মহাস্থান হাটসহ বেশ কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা হলে এ তথ্য জানা যায়।
 
সবমিলে আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। জেলার ৭২টি স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাটের মধ্যে স্থায়ী ১৭টি হাটে পুরোদমে শুরু হয়েছে পশু কেনাবেচা। হাটগুলোতে প্রচুর পরিমাণ পশুর আমদানি দেখা গেছে।
 
ছোট ও মাঝারি আকৃতির পশুর চাহিদা অনেক বেশি। তবে এখন পর্যন্ত ক্রেতারা দামে তেমন একটা সুবিধা করে উঠতে পারছেন না। বিশেষ করে দামের ব্যাপারে নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষগুলো চরম বিপাকে রয়েছেন।
 
তাদের ভাষায়, গেল বারের তুলনায় এবার সব ধরনের পশুর দাম বেশি। সাধ ও সাধ্য মেলাতে না পারায় অনেককে পশু না কিনে বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
 
খামারি আলাল উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও ২০টি গরু কোরবানিযোগ্য করে তুলেছেন। এরমধ্যে ১১টি বড় ও ৯টি তুলনামূলক একটু ছোট আকৃতির।
 
তিনি জানান, প্রত্যেকটি গরুর পেছনে তাকে অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এসব পশু বিক্রিযোগ্য করে তুলতে পরিবারের লোকজনও প্রচুর শ্রম দিয়েছেন। কিন্তু সে অনুপাতে দাম উঠছে না বলে এই খামারি জানান।

ভারতীয় গরুর প্রভাবে তাদের মতো খামারিদের এবার মনে হয় কম দামেই পশুগুলো ছেড়ে দিতে হবে। তবে লাভ-লোকসানের ব্যাপারে এই খামারি কোনো মন্তব্য করেননি।
 
মোকামতলার আশরাফুল আলম বাংলানিউজকে জানান, ভালো দাম পাওয়ার আশায় জেলার বৃহৎ এই পশুর হাটে একটিমাত্র গরু বিক্রি করতে আনেন। তিনি গরুর দাম হাঁকান দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু ক্রেতারা যে দাম বলেন তাতে ছেড়ে দিলে লোকসান গুনতে হবে। তাই আগামী হাটের আশায় গরুটি নিয়ে বাড়ি ফিরেন তিনি।  
 
ভারতীয় গরু বিক্রেতা হাফিজার রহমান বাংলানিউজকে জানান, বড় আশা নিয়ে একজোড়া গরু বিক্রির জন্য এনেছিলাম। কিন্তু আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় বিক্রি করা হলো না। এতে খরচ আরও বেড়ে গেল। কারণ আর ক’দিন গরু দু’টো পালতে হবে কে জানে?
 
কাহালু উপজেলার পাইকাড়পাড়ার বাছেদ উদ্দিন এই হাটে বিক্রি করতে ৪টি বড় আকৃতির খাসি এনেছিলেন। প্রতিটি খাসির দাম হাঁকান ৪০-৫০ হাজার টাকা। সর্বোচ্চ দাম ওঠে ২৫-৩০ হাজার টাকা। ক্রেতারা এর বেশি দাম না করায় তিনিও খাসগুলো ফেরত নিয়ে যান।
 
বিক্রেতারা জানান, ছোট ও মাঝারি আকৃতির পশুর ব্যাপক চাহিদা। এসব আকৃতির গরু ৩৫-৫৫ হাজার টাকার মধ্যে অনেকটা সহজেই মেলানো যায়। তাই সাধারণ ক্রেতা ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যাপারী এসব আকৃতির পশু ব্যাপকহারে কিনছেন। এসব পশু তারা ট্রাকে ভরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাটবাজারে নিয়ে যাচ্ছেন।
 
তবে সেক্ষেত্রে ছাগলের ক্রেতা বেশ কম। আর বড়গুলোর দিকে তো ক্রেতা বা ব্যাপারীরা ভীড়তেই চান না। কারণ ঈদের এখনও বেশ কয়েকদিন বাকি। শেষ মুহুর্তে ছাগলের কেনাবেচা বেশি হয় বলে তারা জানান।
 
ঢাকার ব্যাপারী আশরাফ উদ্দিন, ভোলা মিয়া, গিয়াস উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, সৌখিন গরু কেনার ক্ষেত্রে লোকসানের ঝুঁকিটা অনেক বেশি। এসব পশুর ক্রেতা তুলনামূলক অনেক কম। তবে মিলে গেলে একটিতেই বেশ লাভ করা যায়। তবে ঈদের কয়েকদিন আগে তারা এ ধরনের গরু কিনে থাকেন বলে জানান।
 
আকবর আলী, আমজাদ হোসেন, সেলিম উদ্দিন, আহমদ আলী, আব্দুস শাকুর, শাহজামালসহ একাধিক ক্রেতা বাংলানিউজকে জানান, তারা নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। এবার তাদের জন্য কোরবানির পশু কেনা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। গরুর দড়ি ধরলেই দাম ৫০-৬০ হাজার টাকা হাঁকা হচ্ছে। এ অবস্থায় তাদের মতো ক্রেতারা চরম বিপাকে রয়েছেন বলে জানান।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৫
এমবিএইচ/জেডএস  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।