মেহেরপুর: ঢাকায় সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হওয়া মেহেরপুর গাংনী পৌর এলাকার পূর্ব মালসাদহ গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম কাওছারের (৩৮) বাড়িতে এখন শুধুই কান্নার রোল। একমাত্র ছেলের শোকে বিহবল হয়ে পড়েছে কাউছারের বাবা নজরুল ইসলাম, মা আনজিরা খাতুন ও স্ত্রী রোকসানা খাতুনসহ তার দুই ছেলে মেয়ে।
জাহাঙ্গীর আলম কাওছার গাংনী পৌর এলাকা পূর্ব মালসাদহ গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে।
এদিকে কাউছার হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গাংনীর শীর্ষ সন্ত্রাসী ফয়সাল আহমেদ ওরফে পেডিকে ঢাকার খিলক্ষেত পুলিশ আটক করেছে এমন খবরে এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করেছে স্থানীয় জনতা।
বর্তমানে কাউছার হত্যা ও পেডি আটক এখন গাংনী টপ অফ দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। উপজেলা শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে চলছে আলোচনার ঝড়।
১৫ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) বণিক বার্তা পত্রিকার সহকারী ম্যানেজার (মার্কেটিং) কাউছার আলীকে অপহরণের পর শুক্রবার সকালে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার একটি ছয়তলা বাড়ির পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটে স্যুটকেসের ভেতর থেকে তার গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকায় গাংনী পৌর এলাকার শিশিরপাড়া গ্রামের মাহাতাব আলী ও এলজিইডিতে কর্মরত মরিয়ম বেগমের ছেলে শীর্ষ সন্ত্রাসী ফয়সাল হোসেন ওরফে পেডিকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ। ব্যবসায়ীক কারণে পূর্ব বিরোধের জের ধরে পেডি ও তার লোকজন কাউছারকে হত্যা করেছে বলে ধারণা পুলিশের।
খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল হক মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে জানান, খিলক্ষেত এলাকার নামাপাড়ার এলাকার একটি ছয়তলা ভবনের পঞ্চম তলায় সন্ত্রাসী ফয়সাল আহমেদ ওরফে পেডির ভাড়া থাকতেন। সেই কক্ষ থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে থানায় খবর দেন ফ্ল্যাটের অন্যান্য বাসিন্দারা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সেখানে গিয়ে একটি স্যুটকেসের ভেতর থেকে জাহাঙ্গীরের আলম ওরফে কাউছারের গলিত লাশ উদ্ধার করে।
এদিকে লাশ উদ্ধারের পর পরই ধামরাই এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই কক্ষের ভাড়াটিয়া ফয়সাল আহমেদ ওরফে পেডিকে গ্রেফতার করে খিলক্ষেত থানা পুলিশের একটি দল।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পেডির মেসের আরো চারজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। কৌশলে জাহাঙ্গীর আলম ওরফে কাউছারকে অপহরণ করে পেডি তার মেসের কক্ষে নিয়ে আসে বলে জানায় পুলিশ। ওই ভবন থেকে কাওছারের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও উদ্ধার করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলমের বাবা নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করার সময় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় কাজ শুরু করেন কাউছার। পরে প্রথম আলো পত্রিকায় যোগ দেন। দীর্ঘদিন ধরে প্রথম আলো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বিভাগে চাকরির পর ১ সেপ্টেম্বর বণিক বার্তা পত্রিকার সহকারী ম্যানেজার (মার্কেটিং) হিসেবে যোগ দেন।
এদিকে কাউছারের মৃত্যুতে পরিবারসহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঢাকার তেজকুনি পাড়ায় নিজস্ব ফ্ল্যাটে স্ত্রী রোকসানা খাতুন ও তার দুই শিশু পুত্র নিয়ে বসবাস করতেন তিনি।
নিহতের স্ত্রী রোকসানা খাতুন বাংলানিউজকে জানান, ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে তিনি ঢাকার বাড্ডা এলাকায় যান। সেখান থেকেই নিখোঁজ হন তিনি। গভীর রাত পর্যন্ত তিনি বাসায় না ফিরলে পরিবারের পক্ষ থেকে অফিসের মাধ্যমে থানায় একটি জিডিও করা হয়। ঘটনার পর থেকে তার মোবাইল ফোনটি পাওয়া যায়।
গাংনী থানা সূত্রে জানা গেছে, গাংনী ও মেহেরপুর সদর থানায় ফয়সাল আহমেদ ওরফে পেডির নামে বিস্ফোরক, অস্ত্র ও ছিনতাই, ডাকাতিসহ অর্ধ ডজন মামলা রয়েছে। তিনি পুলিশের তালিকাভূক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। এছাড়াও বান্দরবান থানায় তার নামে একটি হত্যা মামলা রয়েছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে সন্ত্রাসী পেডি দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা শহর ছাড়াও ঢাকায় ও বান্দরবান এলাকায় গড়ে তুলেছে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক। তার দলে রয়েছে একাধিক সুন্দরী নারী কর্মী।
এদিকে জাহাঙ্গীর হত্যাকাণ্ডে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনরা।
জাহাঙ্গীরের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠনো হয়েছে বলে জানিয়েছেন খিলক্ষেত থানার ওসি।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৫
এসএইচ