ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘কোরবানি আসলিও কাম আসিনি আমাগে’

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৫
‘কোরবানি আসলিও কাম আসিনি আমাগে’ ছবি: মানজারুল ইসলাম / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: ‘কোরবানির ঈদ আসলিও এবার বাড়লো না আমাগে কাম। তালি কও আমাগে কী অবস্থা।

আমরা তো এই সময়ের লাইগাই বইয়ে (বসে) থাহি। ’

আসন্ন কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে কামারপট্টিতে কাজ কতটা বেড়েছে জানতে চাইলে খুলনা মহানগরীর শেখপাড়ার সমর কর্মকার এ কথা বলেন।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, দ্যাহো এই কয়টা কাজ কইরে রাখছি। তাও নিতি আসিনি।  

গনগনে আগুনে লোহা তাঁতিয়ে দা তৈরি করার সময় কথা হয় কামারপট্টির কৃষ্ণ কর্মকারের সঙ্গেও।

তিনি বলেন, কর্মকারদের সুখ-দুঃখের খবর কেউ রাখে না। বছরের অধিকাংশ সময়ই যাদের বেকার থাকতে হয়, সেই গরিব মানুষগুলো এ দুর্মূল্যের বাজারে কিভাবে সংসার চালাচ্ছেন তা নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। কোরবানির ঈদ আসলে কর্মকারদের কদর বাড়তো। কিন্তু এবার তাও বাড়লো না।

কৃষ্ণ কর্মকার বলেন, বর্তমানে চাষাবাদের লাঙলের ফলা ছাড়া কামারদের তৈরি সামগ্রীর তেমন কোনো চাহিদা না থাকায় আয় উপার্জন অনেকাংশে কমে গেছে। এখন বাজারে লোহার দাম যেভাবে বেড়েছে সে হারে কামারদের তৈরি জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি। লোহাজাত সামগ্রী তৈরির প্রধান উপকরণ কাঠ-কয়লা সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রশাসনের ঝামেলা পোহাতে হয়। অনেক সময় টাকা দিয়েও কাঠ-কয়লা পাওয়া যায় না।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বর্তমানে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে পৈতৃক এ পেশা  হয়তো ছেড়ে দিতে হবে।

নগরীর সাত রাস্তার মোড় এলাকার বিধান ও বাপ্পী কর্মকার ক্ষোভ আর আক্ষেপ নিয়ে বলেন, এবার কোরবানিতে তেমন কাজ নেই। গত দু’বছর ধরে কাজ কমে আসছে।

তাদের ভাষ্যমতে, প্রযুক্তির প্রসার ও সময়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে কামারশিল্প। কাজের অভাবে কামারশিল্প এখন ধুঁকছে।

অনেকেই এ পেশা ছেড়ে যাচ্ছেন বলে জানান তারা।

এছাড়া নগরীর বড় বাজার এলাকার প্রবীণ কর্মকার বাংলানিউজকে বলেন, পরিত্যক্ত লোহাকে আগুনে পুড়িয়ে যে সব সামগ্রী বানানো হয় তা বর্তমানে চীন, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে আমদানি হচ্ছে। হাটবাজার সয়লাব হয়ে গেছে বিদেশি সামগ্রীতে। যে কারণে আমাদের কাছে মানুষ আগের মতো আসেন না।  

তিনি আরও বলেন, ওইসব সামগ্রী দেখতে সুন্দর, সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ এখন কামারদের তৈরি সামগ্রী কিনতে আগের মতো আগ্রহী নন।

একই বাজারের অনিমেষ সাহা জানান, লৌহজাত দ্রব্যকে আগুনে পুড়িয়ে গৃহস্থালী কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী তৈরির সঙ্গে খুলনায় যেখানে কয়েক বছর আগেও ৫ শতাধিক কর্মকার জড়িত ছিলেন, বর্তমানে সেখানে রয়েছে মাত্র একশ’র মতো।

তিনি আরও জানান, এক সময় বসতবাড়ির অব্যবহৃত, পরিত্যক্ত লোহা কমদামে ক্রয় করে আগুনে পুড়ে গৃহস্থালী কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী তৈরি করে তা বাজারজাতের মাধ্যমে স্বাচ্ছন্দ্যে চলতো তাদের জীবন-জীবিকা।

বর্তমানে এক ধরনের ব্যবসায়ী বসতবাড়ির ভাঙাচোড়া লোহালক্কড় ক্রয় করে বিভিন্ন ইস্পাত কারখানায় সরবরাহ করছেন। ফলে পুরানো লোহা এখন আর পাননা কামাররা। ফলে কামারদের উচ্চমূল্য দিয়ে লোহা কিনতে হচ্ছে।

ওসব লোহা দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করে যে দাম পাওয়া যায়, তা লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি বলে জানান তিনি।

অনিমেষ সাহা বলেন, কোরবানি এলে আগে কামারদের ঘুম থাকতো না। কিন্তু এখন সেটা নেই। সারা বছরই কর্মকারদের একই রকম যাচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৫
এমআরএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।