সিরাজগঞ্জ: কয়েক দফা বন্যায় সিরাজগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমির আউশ, রোপা আমন, বোনা আমন, পাট, আখ, ধুইনচা নষ্ট হয়ে গেছে।
বন্যার পানি নেমে গেলেও এসব ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় প্রায় ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চাষ করা হয় আউশ, রোপা ও বোনা আমন। এছাড়াও তৈরি করা হয় প্রায় ১৫০ হেক্টর বীজতলা। কিন্তু চলতি বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের কয়েক দফা বন্যায় জেলার ৫টি উপজেলায় জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর রোপা ও বোনা আমন ধান এবং বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়।
![](files/September2015/September21/paddy_damege_ML1_931141849.jpg)
এতে চলতি মৌসুমে নির্ধারিত ফসল ঘরে তুলতে না পারার আশঙ্কার পাশাপাশি পরবর্তী চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এখানকার কৃষকেরা। সরেজমিনে বন্যাকবলিত জেলার বেশ কিছু অঞ্চল ঘুরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সঙ্গে কথা বললে তারা তাদের নানা সমস্যার কথা জানান বাংলানিউজকে।
চলনবিল অঞ্চলের তাড়াশ উপজেলার চক গোপিনাথপুর গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান প্রায় ১৮ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ করেছিলেন। তিনি জানালেন, ১৮ বিঘার মধ্যে ১৫ বিঘা জমিই বন্যার পানিতে ডুবে যায়। এসব জমির পানি বের হতে না পারায়, পুরো ফসল নষ্টের পাশাপাশি পরবর্তী বোরো কিংবা শীতকালীন সবজির চাষও করা সম্ভব হচ্ছে না।
একই উপজেলার সাস্তান গ্রামের প্রান্তিক কৃষক শ্রীশ চন্দ্র বসাক বাংলানিউজকে জানান, তার ৫ বিঘা জমির ধান পুরোটাই নষ্ট হয়েছে।
![](files/September2015/September21/paddy_damege_ML2_161404639.jpg)
মাধবপুর গ্রামের আব্দুস সামাদ, আসান মণ্ডল, আবুল কালাম, সাইদুল ইসলামসহ অনেকেরই ১ থেকে ১০/১২ বিঘা জমির ধান পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও এসব জমিতে বন্যার পানি আটকে থাকায় পরবর্তী ফসলের আবাদও হচ্ছে না।
সদর উপজেলার চরপাড়া গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, চলতি বন্যায় তার আড়াই বিঘা জমির ধান পুরোপুরি পচে গেছে।
বেলকুচি উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের আবুল হোসেন, চৌহালী উপজেলার খাস পুকুরিয়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা, কাজিপুর উপজেলার চর বুরুঙ্গি গ্রামের মোজাম্মেল, নতুন মাইজবাড়ী গ্রামের মোহাম্মদ আলী, সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের বিয়ারাঘাট এলাকার আব্দুল বারিকসহ জেলার শতশত কৃষকের একই অবস্থা।
তাড়াশের মাধবপুর গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, তার মোট জমি চার বিঘা। ধারদেনা করে তিনি সব জমিতেই ধান চাষ করেছিলেন। কয়েক দফা বন্যায় তার সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এখন তিনি কিভাবে ঋণের টাকা শোধ করবেন আর কিভাবে চলতি বোরো মৌসুমের ধানবীজ ও সার কিনবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
![](files/September2015/September21/paddy_damege_ML3_323416441.jpg)
কাজিপুরের মাইজবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার জাহাঙ্গীর আলম, সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, তাড়াশ উপজেলার তাড়াশ সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খন্দকারসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বাংলানিউজকে জানান, প্রান্তিক কৃষকেরা কেউ ব্যাংক থেকে আবার কেউবা মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেছিলেন। ফসল ঘরে তুলতে না পারায় এসব কৃষকেরা চরম বিপাকে পড়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ওমর আলী শেখ বাংলানিউজকে জানান, এবারের বন্যায় জেলায় প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হওয়ায় ১ লাখ ২৩ হাজার কৃষকের প্রায় ১১৫ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. বিল্লাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি অচিরেই ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সহায়তা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০২২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৫
পিসি/