ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

পশুর হাটে বৃষ্টি-কাদায় অতিষ্ঠ খামারিরা

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৫
পশুর হাটে বৃষ্টি-কাদায় অতিষ্ঠ খামারিরা ছবি:কাশেম হারুন/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ইটের তৈরি ঘরে শীতের সময় তাপ দেওয়ার জন্য একাধিক লাইট জ্বালাতেন, আর গরমে চালাতেন ফ্যান। কিন্তু এখন সেই আদরের গরুকে রাখতে হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টির পানি ও কাদার মধ্যে।

দিতে পারছেন না সময় মতো খাবার, পরিচর্যাও করতে পারছেন না মনের মতো।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়ে আসা গরুর খামারিরা এভাবেই নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানালেন। সেই সঙ্গে পশুর হাটের নানা অব্যবস্থাপনার কথাও উল্লেখ করলেন তারা।

টয়লেট সংকট, বৃষ্টি-কাদা ও জোঁকের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এসব গরুর খামারিরা।

রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে রাজধানীর বিভিন্ন গরুর হাটে সরেজমিনে গিয়ে ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে এমন পরিস্থিতিরি কথাই জানা যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, পাতলা পলিথিন দিয়ে কোনো রকমে বৃষ্টির পানি থেকে গরুগুলোকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। কাদা আর বৃষ্টির পানি জমে আছে হাটের ভেতর ও সরু রাস্তায়।

সারাদিন ক্রেতাদের সঙ্গে সময় কাটানোর পরও বিশ্রাম নেওয়ার পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে গভীর রাতেও জেগে আছেন খামারিরা। অনেকেই গরুর পাশেই পলিথিন বিছিয়ে বসে আছেন। গরুর মল ও কাদার দুর্গন্ধে হাঁপিয়ে উঠেছেন কেউ কেউ। সবার চোখে-মুখে হতাশা আর দুশ্চিন্তার ছাপ।

রাত একটার দিকে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় বনরূপা গরু-ছাগলের হাটে কথা হয় পাবনা থেকে আসা খামারি মো. সোহেলের সঙ্গে। গত শুক্রবার চারটি গরু বিক্রির করার উদ্দেশে তিনি ঢাকায় এসেছেন।

তিনি বলেন, বাড়িতে লালন-পালন করার সময় কষ্ট কী জিনিস গরুকে বুঝতে দেইনি। কিন্তু এখানে এসে কষ্ট কাকে বলে গরু হাড়ে হাড়ে বুঝেছে। সারা বছর পরিশ্রম করে এদের (গরু) বড় করছি। কিন্তু শেষ সময়ে তাদের যত্ন করতে পারছি না।

পাশেই বসা কুষ্টিয়া থেকে আসা আরেক খামারি জাহাঙ্গীর আলম জানান, একটু বসে বা শুয়ে যে বিশ্রাম নিবেন তারও উপায় নেই। জোঁকের জ্বালাতন হজম করতে হচ্ছে তাদের। দিনে পরিশ্রম করে রাতে একটু বিশ্রাম পর্যন্ত করতে পারছেন না। চরম দ‍ুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে তাদের সময় যাচ্ছে।

রাত আড়াইটার দিকে বাড্ডা এলাকা পার হতেই মাইকে শোনা গেল-আফতাব নগর গরু ছাগলের হাটের নানা তথ্য।

ওই হাটে ঢু মারতেই একই দৃশ্য চোখে পড়লো। সিরাজগঞ্জ এলাকার খামারি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বৃষ্টি আর কাদা থেকে গরুকে রক্ষা করতে গিয়ে নিজেদের খাবার ও আরাম আয়াশের কথা ভুলেই গেছি। কিন্তু তাতেও গরুগুলোকে রক্ষা করতে পারছি না।

প্রতিটি হাটে প্রায় হাজারের অধিক করে খামারি থাকলেও নেই টয়লেটের সুব্যবস্থা জানালেন ঝিনাইদহের খামারি সেকেন্দার আলী। তিনি বলেন, এখানে সব ধরনের ব্যবসায়ীরা আছেন। কিন্তু ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। পরিবেশ যে এতোটা খারাপ হবে কল্পনাও করতে পারিনি।

রাজধানীর প্রায় সব গরুর হাটের একই অবস্থা দাবি করে আরেক খামারি আনসার আলী বলেন, রোববার তিনি বিভিন্ন গরুর হাট ঘুরে দেখেছেন। সব হাটগুলোর একই অবস্থা। খামারিদের কোনো মূল্যায়ন নেই। অথচ আমাদের জন্যই হাজার-হাজার টাকা উপার্জন করছে হাট কমিটি।

খামারিরা জানান, বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিজেরাই পলিথিন দিয়ে কোনো রকমে আগলে রেখেছেন গরুগুলো। নেই কোনো পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। ফলে চারপাশে জমে আছে পানি আর কাদা। কেউ কেউ জানালেন, কোনো দিন এতো দ‍ুর্ভোগে তারা পড়েননি।

তবে হাট কমিটি এ বিষয়ে একেবারেই নির্বাক। যেন এ অব্যবস্থাপনার জন্য সব দায়ভার খামারিদের। তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই।

আফতাব নগর গরু ছাগলের হাটের ইজারাদার মোহাম্মদ রায়হানের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করতেই তিনি বলেন, গরু রাখার জন্য উঁচু জায়গা রাখা হয়েছে। কিন্তু খামারিরা নিচু জায়গায় গরু বাঁধছেন। আমাদের হাটে বালু থাকায় তেমন কাদা নেই।

মাত্র তিন দিন বাদেই কোরবানি ঈদ। সবারই দৃষ্টি এখন পশুর হাটের দিকেই। আর সেই পশুর হাট হয়েছে দুর্ভোগের অপর নাম। এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ব্যবস্থানার মাধ্যমে পশুর হাটে স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশ নিশ্চিত হোক-এটাই সবার প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৫
একে/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।