ঢাকা, বুধবার, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

ঝুঁকিতে যাওয়া, শূন্য বগিতে গেল সুবর্ণ!

আদিত্য আরাফাত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৫
ঝুঁকিতে যাওয়া, শূন্য বগিতে গেল সুবর্ণ! ছবি: শাকিল/বাংলানিউজেটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ঈদ-উল আযহায় ঘরমুখো যাত্রীদের কাছে ট্রেনের টিকিট ছিল যেন সোনার হরিণ। ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা পর্যন্ত খেয়ে না খেয়ে, শুয়ে, বসে কিংবা দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট জোটেনি অনেকের ভাগ্যে।



সাধারণ মানুষ কষ্ট করে টিকিট না পেলেও মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেসের পুরো একটি বগিই (কোচ) খালি গেছে। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের।

রেলওয়ের একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, সুবর্ণ এক্সপ্রেসে ভিআইপিদের জন্য রাখা হয়েছিল ৬২১৮নং বগিটি। শেষ পর্যন্ত এ বগির টিকিট ভিআইপি কোটায় না যাওয়ায় কমলাপুর স্টেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বগিটির টিকিট বিক্রি করতে ভুলে গিয়েছিলেন। এ কারণে শেষ পর্যন্ত বগিটির কোনো আসনের টিকিট বিক্রি হয়নি।

জানা গেছে, ওই বগিতে ৬০টি আসন ছিল। প্রতি আসনের টিকিটের বিক্রি মূল্য ছিল ৩৫৫ টাকা। জানতে চাইলে এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি কমলাপুর স্টেশনের ম্যানজার সিতাংশু চক্রবর্তী। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে দেখা হবে’।

জানা গেছে, ১৮ বগি নিয়েই চলে সুবর্ণ এক্সপ্রেস। ঈদ উপলক্ষে এ ট্রেনে অতিরিক্ত তিনটি বগি যোগ করা হয়েছিলো।

৬২১৮নং বগিটি খালি যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। মঙ্গলবার সুবর্ণ এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাত্রাকালে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ বগিটি পুরোই খালি যাচ্ছে। সম্ভবত ভিআইপি কোটার জন্য এ কোচটি রাখা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত এ কোটায় টিকিট না যাওয়ায় তা বিক্রি করতে হয়তো রেলওয়ের কর্মকর্তারা ভুলে গেছেন।

তিনি বলেন, সারারাত জেগে মানুষ ট্রেনের টিকিট নিশ্চিত করতে পারেন না। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এ ট্রেনের পুরো একটি বগিই খালি যাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না হওয়ার শর্তে রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ঈদ উপলক্ষে টিকিট বিক্রি সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বেলা ১১-১২টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের ৪ ভাগের ১ ভাগ মাত্র টিকিট পান। অপরদিকে ভিআইপি কোটায় টিকিটের চাহিদা অনুযায়ী তালিকা তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ আরও ১০-১২ জন। ভিআইপি টিকিটগুলো বিকাল ৫টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত দেওয়া হয়। ৫ শতাংশ দেওয়ার কথা থাকলেও ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ টিকিট ভিআইপি নামধারীদের দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী ভিআইপিদের জন্য টিকিটের ৫ শতাংশ বরাদ্দ থাকলেও এর প্রায় ৪ থেকে ৫ গুণ (২৫ থেকে ৩০ শতাংশ) টিকিট ভিআইপিদের নামে চলে যাচ্ছে। রেলের টিকিট বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য, তারা নিরুপায়। এমপি, মন্ত্রী, সাংবাদিক, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাসহ ভিআইপি নামধারীদের চাপে (মোবাইল ফোন কিংবা ডিও লেটার) বাধ্য হয়েই তাদের কোটার অনেক বেশি টিকিট দিতে হচ্ছে।

ঝুঁকিতে ফিরছে মানুষ
বাস লঞ্চের পাশাপাশি ট্রেনেও নাড়ির টানে ঘরে ফিরছেন রাজধানীর মানুষ। স্বজনদের উষ্ণ সান্নিধ্যে ঈদ-উল আযহা উদযাপনের জন্য যানবাহনে জীবনের ঝুঁকি, পথের ভোগান্তি ভুলে ছুটে সবাই চলেছেন আপন ঠিকানায়।

মঙ্গলবার কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে ঝুঁকিতে ট্রেনে উঠতে দেখা গেছে যাত্রীদের। ট্রেন প্লাটফর্মে আসা মাত্রই হুড়মুড়িয়ে উঠছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে অনেককেই প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে ট্রেনের জানালার ফাঁক দিয়ে তাদের শিশু সন্তানকে ট্রেনের ভেতরে প্রবেশ করাতে দেখা গেছে।

রাজশাহীগামী সিল্ক সিটিতে দেখা গেছে, দুই বছরের শিশু সন্তানকে জানালা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করাচ্ছেন বাবা ফয়জুল কাদের। এভাবে ঝুঁকি নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটুতো ঝুঁকি নিতে হবে। বাড়িতো যেতে হবে। বাচ্চাকে নিয়েতো আর দৌঁড়ে ট্রেনে উঠতে পারবো না। ’

এদিকে মঙ্গলবার কমলাপুর স্টেশন ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলেন হাজারো ঘরমুখো মানুষ৷ ঈদের সময়ে যাত্রীর চাপের কারণে ট্রেনের সময়সূচি ঠিক রাখতে পারছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ৷ তবে আগের বছরের তুলনায় এ বছর এ চিত্র অনেক ভালো বলছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।

কমলাপুরের স্টেশন মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দু-তিনটি আন্ত:নগর ট্রেন বিলম্বে ছাড়লেও বেশিরভাগ ট্রেনই ঠিক সময়ে ছেড়েছে।

এদিকে বিমানবন্দর স্টেশন থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠেছেন অনেক যাত্রী। ছাদে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ হলেও প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে ব্যাকুল মানুষের কাছে এ নিষেধাজ্ঞা হয়েছে উপেক্ষিত৷

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৫
এডিএ/এএসআর

** ঈদে গণপরিবহন থেকে ‘বকশিস’ ১১ হাজার কোটি!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।