তালা (সাতক্ষীরা): ‘তিন বেলা খাবার জুটছে না, আবার ঈদ! খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি। গ্রামে এখনও পানি বাড়ছে।
শুধু রোজিনার পরিবারই নয়, কপোতাক্ষ তীরে জলাবদ্ধতার কারণে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তিনটি গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবার এবার কোরবানির ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গত তিন মাস ধরে পানিবন্দি অবস্থায় বসবাস করছে। অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। আবার পানির মধ্যে বসবাস করছে অনেকে। এখনও পর্যন্ত তাদের মাঝে দেওয়া হয়নি ত্রাণ সামগ্রি।
জালালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু বাংলানিউজকে জানান, তার ইউনিয়নের কানাইদিয়া, কৃষ্ণকাটি ও চরকানাইদিয়া গ্রামের এক হাজার পরিবার তিন মাস ধরে পানিবন্দি অবস্থায় বসবাস করছে। ঈদ উপলক্ষে তিনটি গ্রামের ২৫০ জনের মাঝে ১০ কেজি করে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হবে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তুলনায় বরাদ্দ অনেক কম।
স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, কপোতাক্ষ খননে বরাদ্দ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা দিয়ে সঠিকভাবে কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যে কারণে প্রতিবছরই তাদের জলাবদ্ধতায় পড়তে হয়। খাবার জুটছে না, আবার ঈদ। গ্রামে এমনকি দেওয়া হয়নি কোন ত্রাণ। পানিও কমছে না। গ্রামে পানি বাড়ছে। যে কারণে ঈদের আনন্দ বিলীন হচ্ছে তাদের।
![](files/September2015/September23/Tala_2_213236706.jpg)
এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনটি গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কপিলমুনি বাজারের ভাড়াটে বাসাসহ বিভিন্ন এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। পৈত্রিক ভিটা দেখতে দিনে এক থেকে দুই ঘণ্টার জন্য আসেন তারা। পরে ফিরে যান ভাড়া বাসায়। আর যাদের বাসা ভাড়ার সামর্থ নেই, তারা পানির মধ্যে বসবাস করছেন।
সোমবার বিকেলে কানাইদিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, চারদিকে থই থই পানি। পানির মধ্যে বসবাস করছে মানুষ। রাস্তার উপর দিয়ে চলছে নৌকা। তারা বাড়িতে যাতায়াতের জন্য তৈরি করা হয়েছে সাঁকো। অনেকে তাদের ছেলে-মেয়ের আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। পানির কারণে গরু-ছাগল নিয়ে রাস্তার ধারে আশ্রয় নিয়েছে। এ অবস্থায় কোরবানির ঈদ কি ভাবে করবে তারা। এমন প্রশ্ন অনেকের।
কানাইদিয়া গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী আসমা বেগম বাংলানিউজকে জানান, গত তিন মাস ধরে তারা পানিবন্দি অবস্থায় বসবাস করছেন। খেয়ে না খেয়ে দিন চলছে তাদের। ছেলে-মেয়ে নিয়ে পানির মধ্যে খুব কষ্টে আছেন তারা।
তিনি বলেন,‘পেটের খাবার জুটছে না। আবার কিসের ঈদ। কি দিয়ে ঈদ করবো। কাছে কোনো টায়া-পয়সা নেই। ’
এই গ্রামের গৃহবধূ আকলিমা বেগম বাংলানিউজকে জানান, পানিবন্দি অবস্থায় বসবাস করছে তার পরিবার। কপোতাক্ষ খনন না হওয়ায় প্রতিবছরই আমরা পানিতে ডুবছি। মনে হয় দেখার কেউ নেই।
![](files/September2015/September23/Tala_3_110754625.jpg)
তিনি বাংলানিউজকে বলেন,‘বাড়ির চারপাশে থই থই পানি। তলিয়ে গেছে সবকিছু। কারও হাতে কাজ নেই। টাকা না থাকলে তো আর ঈদ করা যায় না। ’
চরকানাইদিয়া গ্রামের নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন,‘পানিবন্দি অবস্থায় বসবাস করছি। কোনো সাহায্য-সহযোগিতাও পাইনি। চারপাশে পানিতে তলিয়ে থাকায় বেকার হয়ে বাড়িতে বসে আছি। ’
কপিলমুনি বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার সিমা বাংলানিউজকে জানান, তিন মাস পানিবন্দি অবস্থায় বসবাস করছি। বাড়ির সকলে বেকার হয়ে আছে। কার হাতে টাকা-পয়সা নেই। কি দিয়ে ঈদ করবে। ঈদের আনন্দ কপোতাক্ষ বিলীন করে দিয়েছে।
কানাইদিয়া গ্রামের আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন,কপোতাক্ষ খনন না হলে এলাকার মানুষকে বাঁচানো যাবে না। এমন বক্তব্য ওই গ্রামের শত শত মানুষের।
জালালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু বাংলানিউজকে বলেন, এলাকার মানুষের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য জোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে যে বরাদ্দ তিনি পেয়েছেন, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
বাংলাদেশ সময়: ০৩২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৫
পিসি