ঢাকা: সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত সাড়ে ১২টা। সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে নেমে গাবতলীর স্থায়ী গরুর হাটে ঢোকার মুখে জুতা-মোজাসহ আটকে গেলাম কাদায়।
বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট লঘু চাপের প্রভাবে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি এবং সারাদেশ থেকে আসা হাজার হাজার গরু ও গরু ব্যবসায়ীদের ক্রমাগত পদচারণায় গাবতলীর স্থায়ী গরুর হাটের ছাউনির বাইরের অবস্থা দাঁড়িয়েছে বোরো ধান ক্ষেতের মতো।
![](files/September2015/September23/2_Cow_831984575.jpg)
ছাউনির ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল কলার খোসা, পচা বিছালী, খাবারের ঠোঙা, নিষিদ্ধ পলিথিন, ব্যবহৃত পানির বোতল, ছেঁড়া কাগজ, বহুজাতিক ও দেশিয় কোম্পানির বিজ্ঞাপনের ছেঁড়া ব্যানার, পাটের রশি, পচা বস্তা, খড়-কুটা-ভাতের মাড়, ভেজা খৈল ও গোবর-চুনার মধ্যেই অসংখ্য লোক ঘুমাচ্ছেন। কেউ কেউ নিচ্ছেন ঘুমানোর প্রস্তুতি।
এসব দৃশ্য দেখার পর ছাউনির বাইরে এইমাত্র গোড়ালি সমান কাদার দুর্ভোগ পোহানোর কষ্ট মন থেকে নিমিষেই দূর হয়ে গেল।
রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে শত কিলোমিটার দূরের গ্রাম থেকে রাজধানীতে গরু বেচতে আসা ব্যবসায়ী, খামারি, সৌখিন কৃষক ও গরুর রাখাল ক্লান্ত শরীর নিয়ে স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে প্রিয় পশুটির পাশেই শুয়ে পড়েছেন।
![](files/September2015/September23/3_Cow_520852081.jpg)
বিরামহীন বর্ষণ, গরুর মল-মূত্র, মশার কামড়, গোবর-চুনার গন্ধ, মানুষের কোলাহল ও বিশালাকৃতির গরুগুলোকে সামলানোর পরও ক্লান্তিহীন গরু ব্যবসায়ীরা। কাঙ্ক্ষিত দামে প্রিয় গরুগুলো বিক্রির আগ পযর্ন্ত এদের সঙ্গেই চলবে আহার-নিদ্রা।
গত চার বছর ধরে নিজ খামারে লালন-পালন করা বিশালাকৃতির দু’টি গরু নিয়ে এ হাটে এসেছেন কুষ্টিয়ার নূর ইসলাম। দীর্ঘ ভ্রমণ ক্লান্তি তার দু’চোখে বয়ে এনেছে রাজ্যের ঘুম। কিন্তু প্রিয় গরু দু’টিকে রেখে দূরে কোথাও গিয়ে ঘুমানোর সাহস পাচ্ছেন না তিনি। অগত্যা গরু দু’টির পাশেই বালুর ঢিবির উপরে দুই হাঁটুর মধ্যে মাথা গুঁজে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলেন নূর ইসলাম।
রাত পৌনে ১টার দিকে তার বিশালকৃতির গরু দু’টির কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই চোখ মেলে তাকান তিনি। জিজ্ঞেস করতেই এ প্রতিবেদককে নূর ইসলাম বলেন, গত চার বছর ধরে পরম যত্নে বড় করেছেন গরু দু’টিকে। খড়-কুড়া-খৈল-ভুষি-কাঁচা ঘাস, চিটাগুড়, ভিট লবন, ওষুধপত্র ও ডাক্তারের ভিজিট দিয়ে গরু দু’টির পেছনে গত চার বছরে খরচ হয়েছে তিন থেকে চার লাখ টাকা।
![](files/September2015/September23/4_Cow_620428338.jpg)
বিক্রির জন্য কুষ্টিয়া থেকে ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে খরচ হয়েছে আরও ১০ হাজার টাকা। হাটের ইজারাদারদের দিতে হবে প্রতিটি গরুর জন্য ৪ হাজার টাকা করে ৮ হাজার টাকা।
প্রায় ত্রিশ মন ওজনের গরু দু’টির দাম ১১ লাখ টাকা দাম হাঁকাচ্ছেন নূর ইসলাম। তবে সোমবার মধ্যরাত পযর্ন্ত কোনো ক্রেতা তার গরুর কাঙ্ক্ষিত দাম বলেননি। তিনি আশা করছেন, মঙ্গল-বুধবারের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত দামে বিক্রি করতে পারবেন গরু দু’টি।
কুষ্টিয়ার আরেক ব্যবসায়ী মজনুর রহমান নয়টি গরু নিয়ে গাবতলী এসেছেন। হাটের একেবারে প্রথম ছাউনিতে জায়গা পাওয়া মজনুর রহমান তার গরুগুলো নিয়ে অপেক্ষা করছেন কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার জন্য। প্রতিটি গরু পাঁচ লাখ টাকা করে দাম হাঁকাচ্ছেন তিনি।
![](files/September2015/September23/5_Cow_944291295.jpg)
এ প্রতিবেদককে মজনুর রহমান বলেন, নয়টি গরু ও চারজন লোক নিয়ে ঢাকায় আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়া বাবদ এ ক’দিনে লাখ টাকার মতো খরচ হবে তার। এর মধ্যে পরিবহন খরচই আছে ৪৫ হাজার টাকা। হাটের ইজারাদারদের দিতে হবে ৩৬ হাজার টাকা। চার জন লোকের থাকা-খাওয়া তো আছেই।
পাবনা থেকে আটটি গরু নিয়ে গাবতলী এসেছেন লিটন মন্ডল। একেকটি গরুর দাম হাকাচ্ছেন ছয় লাখ টাকা। এরই মধ্যে তার সবচেয়ে বড় গরুটির দাম পাঁচ লাখ টাকা উঠেছে বলে এ প্রতিবেককে জানালেন।
তিনি বলেন, পাবনা থেকে আটটি গরু ঢাকায় আনতে খরচ পড়েছে ১৫ হাজার টাকা। একেকটি গরুর জন্য ইজারাদারদের দিতে হবে চার হাজার টাকা করে। কোনো কারণে যদি গরুগুলো বিক্রি করতে না পারি, তাহলে আবার ১৫/২০ হাজার টাকা খরচ করে ফিরিয়ে নিতে হবে। সব মিলে ৬০/৭০ হাজার টাকা খরচ হয়ে যাবে। সেজন্য লাভ একটু কম হলেও বিক্রি করে যাওয়ার চেষ্টা করব।
![](files/September2015/September23/6_Cow_766150888.jpg)
এদিকে সোমবার গভীর রাতেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গাবতলী গরুর হাটে ট্রাক ভরে গরু আসছে। মধ্য রাতেও হাট ছিল জমজমাট। তবে গরু বিক্রি হতে দেখা যায়নি। বেশির ভাগ লোকই গরু দেখতে এসেছেন। কিনবেন শেষ দিন। কাউকে কাউকে গরুর সঙ্গে সেলফি তুলতেও দেখা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৫
এজেড/আরএম