বগুড়া: কয়লায় মুড়িয়ে দেওয়া হয় লোহার টুকরো। সঙ্গে ধমকা (স্থানীয় ভাষায়) রশি টেনে বাতাস দিয়ে কয়লায় আগুনে সৃষ্টি করা হয় প্রচণ্ড স্ফুলিঙ্গ।
লোহার টুকরোর পিণ্ড আগুনে বর্ণ ধারণ না করা পর্যন্ত চলে এ কর্মযজ্ঞ। একপর্যায়ে কয়লা সরিয়ে লোহার সেই টুকরো পিণ্ড বের করে আনা হয়। যথাস্থানে রেখে শুরু হয় হাতুড়ির বেধড়ক পিটুনি।
উদোম (খালি) শরীরে দু’জন দুই পাশ থেকে তাল মিলিয়ে সেই লোহার ওপর হাতুড়ি চালাতে থাকেন। আস্তে আস্তে আগুনে বর্ণ ফিকে হয়ে আসে। তখন সেই লোহার টুকরো পিণ্ড পানিতে ভেজানো হয়। তাৎক্ষণিক আবার তা কয়লায় মুড়িয়ে তাপ দেওয়া হয়। কিছু সময় পর আবারও একই কায়দায় পেটানো হয়।
![](files/kamar1_919552663.jpg)
ধারাবাহিকভাবে এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে। আর এভাবেই কারিগরি হাতের নিপুন ছোঁয়ায় একেকটি লোহার পিণ্ড হয়ে ওঠে আকর্ষণীয় মাংস কাটার লৌহ যন্ত্রে। শেষ ধাপে শান দিয়ে এসব মাংস কাটার দা-বঁটি-চাপাতি-ছুরি তুলে দেওয়া হয় ক্রেতার হাতে।
কোরবানির আর আছে মাত্র দু’দিন। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী দা,বঁটি, ছুরি তৈরির কাজ প্রায় শেষ করে এনেছেন বগুড়ার কামাররা। শেষ মুহূর্তে এগুলোর ধার তুলতে রেত হাতে তারা মহাব্যস্ত কামারশালায়।
সম্প্রতি গণ্ডগ্রাম, মাদলা, বনানীমোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক কামারের সঙ্গে কথা হলে এ তথ্য ওঠে আসে।
![](files/kamar2_659378420.jpg)
হরিচন্দ্র দাস, নুরু কামার, দেবনাথ, চণ্ডি মোহন্ত, নজরুলসহ একাধিক কামার বাংলানিউজকে জানান, কামারশালা নির্ভর আগের সেই দিন আর নেই। মানুষ নিত্যনতুন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। কারণ বাইরে থেকে আসা এসব জিনিসে দেশ ছেয়ে গেছে। তাই ক্রেতা সাধারণের এখন কামারদের ওপর নির্ভর করতে হয় না। ফলে বছরের অধিকাংশ সময় কাজ থাকে না বললেই চলে।
কিন্তু বাপ-দাদার এই পেশা ছাড়া অন্য কোনো পেশাও তাদের জানা নেই। ফলে এ পেশা ধরেই জীবিকা নির্বাহের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে প্রত্যেক কোরবানি ঈদের তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বছরের এই সময় অনন্ত বিপুল সংখ্যক মানুষ এখনও কামারের তৈরি এসব পণ্যের ওপর নির্ভর করেন।
![](files/kamar3_429776602.jpg)
তবে নতুন মাল তৈরির অর্ডার আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। সিংহভাগ মানুষজনই পুরনো জিনিসপত্র মেরামত করতে আসেন। এর মধ্যে বিভিন্ন মাপের দা, বটি ও ছুরি অন্যতম।
এসব কামাররা জানান, ঈদকেন্দ্রিক কোরবানির পশুর মাংস কাটার সামগ্রীর বানানোর কাজ প্রায় শেষ। তৈরি সামগ্রীর বেশির ভাগ বিভিন্ন হাটবাজারসহ দোকানে দোকানে চলে গেছে। এখন টুকটাক কাজের পাশাপাশি এগুলো ধার দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৫
এমবিএইচ/জেডএস/আরআই