ঢাকা: রাত পোহালেই ঈদ। ঈদের অন্যতম বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ মাঠে।
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের এই জামাতে রাষ্ট্রপতি, বিচারপতি, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সরকারের উচ্চ পযায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী, ধনী-গরিবসহ সব পেশা ও শ্রেণীর মানুষ একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য জামাতে অংশ নেবেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে জাতীয় ঈদের ময়দান প্রস্তুতির জন্য গত বছরের মতো এবারও মেসার্স পিয়ারু অ্যান্ড সন্স নামে ডেকোরেটর প্রতিষ্ঠান কাজ সম্পন্ন করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হক বাংলানিউজকে জানান, ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঈদের জামায়াতের জন্য মাঠ প্রস্তুতির কাজ শুরু করা হয়। যে সব জায়গায় পানি আটকে ছিল সেখানে বালিও দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনেরও যথাযথ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঈদের ময়দানে আলোকসজ্জা ও ফ্যান স্থাপনের কাজও শেষ হয়েছে। কার্পেট, চাদর বিছানোসহ তাৎক্ষণিক কাজগুলো শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
ঈদের দিনও বৃষ্টি থাকলে নামাজ আদায়ে কোনো সমস্যা হবে না বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
মোজাম্মেল হক বলেন, জাতীয় এই ঈদগাহ ময়দানে একসঙ্গে এক লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। মাঠের উত্তর দিকে নারীদের ঈদের নামাজ আদায়ে আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে একসঙ্গে পাঁচ থেকে ছয় হাজার নারী নামাজ পড়তে পারবেন।
দুই লাখ ৭০ হাজার বর্গফুট আয়তনের জায়গা জুড়ে ঈদের ১৮ দিন আগে থেকে মাঠ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয় জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক বলেন, প্রতিদিন শতাধিক লোক ঈদের জামাতের জন্য মাঠ প্রস্তুতির কাজ করেছেন। অবকাঠামো তৈরিতে ছোট-বড় ৪৪ হাজার বাঁশ ও হাজার পিচ ত্রিপল ব্যবহার করা হয়েছে।
এছাড়া পুরুষদের জন্য ১০০টি ও নারীদের জন্য ৪০টি পৃথক অজুখানা তৈরি করা হয়েছে। ঈদের দিন মাঠের পাশে পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার থাকছে। সেগুলো ভিআইপিরা ব্যবহার করবেন। অন্যদিকে, মাঠের পূর্বপাশে গণপূর্ত ভবনের শৌচাগার সাধারণ মুসল্লিদের ব্যবহারের জন্য খোলা থাকছে।
এদিকে ঈদের জামাতের ইমামের বসার জন্য মেহরাব ও দেয়ালে রং করা হয়েছে। এবার পুরো ময়দান জুড়ে ৫০০টি এনার্জি লাইট নতুন করে সংযোজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মোজাম্মেল হক।
ঈদের মাঠে ৬৬০টি সিলিং ফ্যান ও ১৩০টি স্ট্যান্ড ফ্যান লাগানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতির নামাজের স্থানে কুলিং ফ্যানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভ্রাটের বিকল্প হিসেবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে ৫০০ কিলোওয়াট ক্ষমতার জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ঈদের দিন সকালে ভিআইপিদের নামাজ আদায়ের জন্য ময়দানে লালগালিচা ও কার্পেট বিছানো হবে। এছাড়া সাধারণ মানুষের জন্য মাঠে ম্যাট ও চাদর বিছানো হবে বলে মোজাম্মেল জানিয়েছেন।
ঈদের মাঠ প্রস্তুতির বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। বাঁশের অবকাঠামোতে মাঠের উপরে ত্রিপল দেওয়া হয়েছে, মাঠে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য কাজও সম্পন্ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আশা করি, মুসল্লিরা কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবেন। মাঠের প্রস্তুতি দেখতে বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় মেয়র সাঈদ খোকন ঈদগাহ ময়দান পরিদর্শন করবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
এদিকে বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ জাতীয় ঈদগাহ মাঠ পরিদর্শন করেছেন। এর আগে ডগ স্কোয়ার্ড ও সুইপিং টিম নিয়ে ঈদের মাঠে নিরাপত্তা মহড়া দিয়েছে র্যাব।
মাঠ পরিদর্শন শেষে র্যাবের মহাপরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় ঈদগাহ মাঠে ঈদের অন্যতম বড় জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে রাষ্ট্রপতিসহ অন্যান্য ভিআইপিসহ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা নামাজ আদায় করবেন।
মাঠে মুসল্লিদের নিরাপত্তার বিষয়টি জোরদার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, র্যাবের পোশাকধারী ও সাদা পোশাকের সদস্যরা ঈদের জামাতে নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ওয়াচ টাওয়ার, সিসি ক্যামেরা ও ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে নিরাপত্তা নজরদারি করা হবে।
ঈদগাহ মাঠে প্রবেশের প্রধান গেটের বাম দিকে র্যাব ও ডান দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের আলাদা দু’টি বুথ তৈরি করা হয়েছে। ঈদের মাঠ জুড়ে সিটি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ঈদের মাঠের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে।
পোশাকধারী ও সাদা পোশাকের পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ঈমাম, ক্বারি ও উপস্থাপক নিয়োগ
জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাতের জন্য ইমাম, ক্বারি ও উপস্থাপক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে জানানো হয়েছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা বিল্লাল বিন কাশেম জানান, জাতীয় ঈদগাহে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মিজানুর রহমান মূল ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এ জামাতে বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন শায়খুল হাদিস মুফতি ওয়াহিদুজ্জামান।
ঈদের জামাতে মূল ক্বারি হিসেবে থাকবেন বায়তুল মুকাররম মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারি মাওলানা হাবিবুর রহমান ও বিকল্প ক্বারি হিসেবে থাকবেন ক্বারি আতাউর রহমান।
অন্যদিকে, জাতীয় ঈদগাহ জামাতের মূল উপস্থাপক হিসেবে থাকবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক মাওলানা এটিএম ইনামুল হক ও বিকল্প উপস্থাপক থাকবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে আরো জানানো হয়, ঈদের দিন যদি বৃষ্টি অথবা অন্য কোনো কারণে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান নামাজ আদায়ে অনুপযোগী হলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় সেই জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৫
টিএইচ/এএসআর