ঢাকা: ভোর হলেই মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে কোরবানি ও ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি ফিরছেন মানুষ।
বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না সদরঘাটের লঞ্চে, পল্টুন ও ঘাটে। ভোর থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের ঘরমুখো মানুষের চাপ ছিল রাজধানী ঢাকার সদরঘাটে। লঞ্চের ডেক, কেবিন, ছাদ, সিঁড়ির উপরে-নিচে, প্রবেশপথে এমনকি সাইলেন্সারের পাশে বসেও বাড়ি ফিরছেন মানুষ।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় চিত্র। দুপুরের দিকে যাত্রীর তুলনায় ঘাটে লঞ্চ ছিল কম। কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। ২/৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করে গন্তব্যে যাত্রা করতে হয়েছে।
বিকেলে লঞ্চ বেড়ে যাওয়ায় কমে গেছে চাপ। চাঁদরাতে তুলনামূলক স্বাচ্ছন্দ্যেই বাড়ি ফিরছেন মানুষ। যাত্রীদের উপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে পর্যাপ্ত সংখ্যক লঞ্চ থাকায় তেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়নি দক্ষিণাঞ্চগামী মানুষের।
বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে ঘাটে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
পটুয়াখালীগামী জামাল উদ্দিন কাজ করেন গার্মেন্টসে। সব কিছু গুছিয়ে মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করতে একটু দেরিতেই যাত্রা করেছেন। টেনশন ছিল, লঞ্চ পাবেন কিনা, বা লঞ্চ পেলেও সিট পাবেন কিনা? এসে চাহিদা মতো সিট পেয়েছেন, তাতেই খুশি তিনি। ভাড়া একটু বেশি নিলেও প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে এতোটুকু ছাড় দিতে রাজি জামাল উদ্দিন।
কথা হয় বরগুনার সাবিনার সঙ্গে। ঢাকায় স্বামী-স্ত্রী মিলে গার্মেন্টস এ চাকরি করেন। বাড়িতে ক্লাস থ্রিতে পড়ুয়া ছেলেটা থাকে তার মার (ছেলের নানি) কাছে। ছেলের সঙ্গে ঈদ করতে স্বামীকে রেখেই বাড়ি যাচ্ছেন। স্ত্রীর নিরাপদ যাত্রার জন্য স্বামী আলমগীর নিজেই লঞ্চে উঠিয়ে দিয়ে গেছেন।
অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে আলমগীর বলেন, সন্তান-স্ত্রীর জন্য দুয়েকশ’ টাকা বেশি খরচ করতে গায়ে লাগে না। তারপরও ঠিকমতো পৌঁছাক।
মানুষের এ স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ যাত্রায় খুশি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক জয়নাল আবেদিনও।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, যাত্রীদের নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি ফেরার জন্যই আমরা কাজ করছি। সকালে আমাদের বেগ পেতে হয়েছে অনেক। মানুষ উপস্থিতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘাটে লঞ্চ পাওয়ায় এখন আর সে ঝামেলা নেই। যে যার মতো করে এসে লঞ্চে উঠছে। যথারীতি লঞ্চও ছেড়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গতকাল (২৩ সেপ্টেম্বর) সারাদিনে ১৩২টি লঞ্চ ছেড়েছি আমরা। আজ দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৪২টি গেছে। রাতেরগুলো মিলিয়ে গতকালের সমানই হবে। আশা করছি, এখন যে যাত্রীরা আসবেন, তাদের বেগ পেতে হবে না। কারণ অধিকাংশই চলে গেছেন। তুলনামূলক যাত্রীর চাপ কম।
সকালে নৌ-পুলিশ, পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যদের পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হলেও এখন তারা স্বাভাবিক আছেন। নির্বিঘ্নেই দায়িত্ব পালন করছেন, জানালেন দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, এখন আর ঝামেলা নেই। মানুষ অনেক কমে গেছে। যারা আসছে তাদের জন্য পর্যাপ্ত লঞ্চও আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৫
এসইউজে/আরএম
** তিল ধারণের ঠাঁই নেই, গলাকাটা ভাড়া আদায় সদরঘাটে