ঢাকা: ঈদুল আজহার নামাজ শেষ করে সারাদেশের মতো রাজধানীতেও একযোগে শুরু হয়েছে কোরবানির পশু জবাই। তবে রাজধানীতে একই সময়ে লাখ লাখ গরু-ছাগলসহ অন্য পশু জবাই ও মাংস প্রস্তুতের কারণে দেখা দিয়েছে কসাই সংকট।
যদিও মৌসুমি কসাইয়ের কারণে এ সংকট অনেকটা লাঘব হয়েছে বলে মনে করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে ঈদের নামাজ আদায় শেষে বরাবরের মতো এবারও রাজধানীতে কোরবানি দেওয়া শুরু হয়।
অনেকে অভিযোগ করেন, কসাইয়ের অভাবে সকালে জবাই দিতে পারছি না। আবার কসাই না পেয়ে নিজেরা মিলে পশু জবাই ও মাংস প্রস্তুতের কাজ করতে দেখা গেছে অনেককে।
আবার পাশের বাসার পশু জবাই শেষ হলে পরবর্তীতে তাদের পশু জবাই দেওয়া হবে, এমনটাও আশা করছেন অনেকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর সড়ক, মহাসড়ক, রাস্তাঘাট, অলিগলি, বাড়ির আঙ্গিনা, গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গাসহ সর্বত্র চলছে পশু জবাই। রাজধানীর এমন কোনো এলাকা বাদ নেই, যেখানে পশু জবাই দেওয়া হচ্ছে না। এ সময় কসাই সংকটের কারণে কোথাও কোথাও একেকটি কসাই দল চার-পাঁচটি পশু জবাইয়ের কাজও করছে।
আবার অপেশাদার ও মৌসুমি কসাইয়ের চেয়ে পেশাদার কসাই দিয়ে পশু জবাইয়ের জন্য বেশি টাকা নেওয়ার কথা শোনা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পেশাদার কসাইয়ের মাধ্যমে পশু জবাই করলে চামড়া নষ্ট হয় না। আর অপেশাদার মৌসুমি কসাইয়ের মাধ্যমে জবাইয়ের ফলে পশুর চামড়া কেটে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর, মগবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ও মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুব সকালে যেসব কসাইয়ের সিরিয়াল পাওয়া গেছে তাদের ডিমান্ড একটু বেশি। সেজন্য তাদেরকে বেশি অর্থ দিতে হয়েছে। আবার পেশাদার কসাইদের নাগাল পাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একটি পশুর প্রতি হাজার দামের জন্য ২০০ টাকা হারে জবাই ও মাংস প্রস্তুতের জন্য বহু কসাইরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বলে জানা যায়। দুপুরের পর সেই দর আরো কমে আসবে বলে নগরীর একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন।
মালিবাগের স্থানীয় বাসিন্দা হুমায়ুন কবির জানান, তিনি দুই দিন আগে ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনেছেন। কিন্তু কসাই জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে চার জনের একটি কসাই দলকে সকালে নয় হাজার টাকা দিয়ে জবাই করিয়েছেন।
বগুড়া থেকে আসা মৌসুমি কসাই মিজানুর রহমান জানান, রামপুরা এলাকায় তাদের দলে চার জন পশু জবাই ও মাংস প্রস্তুতের কাজ করছেন। ১০ হাজার টাকা দিয়ে তারা দু’টি গরু জবাইয়ের কাজ নিয়েছেন। সেই কাজ শেষ হলে আবারও অন্যজনের পশু জবাই করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
গাইবান্ধা থেকে আসা তোয়াব আলী রাজধানীতে রিকশা চালান। কোরবানির দিনে রিকশা চালানো বন্ধ রেখে কয়েকজনকে নিয়ে পশু জবাইরে কাজ করছেন। তিনি জানান, মালিবাগে চারটি পশু জবাই ও মাংস প্রস্তুতের জন্য জন্য তিনি আগেই চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
এদিকে, বাড্ডার বাসিন্দা আয়ুবুর রহমান জানান, গত বুধবার ৮৫ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনেছেন। এরপর দু’দিন অনেক চেষ্টা করেও কোনো কসাই পাওয়া গেলো না। অবশেষে তিনি, তার ভাই, তাদের গাড়ির চালক ও বাড়ির কাজের লোক দিয়ে জবাই ও মাংস প্রস্তুতের কাজ করছেন।
মগবাজারের বাসিন্দা মোশারফ জানালেন, তার পাশের বাড়ির বাসিন্দা পশু কেনার সময় হাটেই গরু জবাই ও মাংস প্রস্তুতের জন্য কসাইয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। সকালের মধ্যে তাদের জবাইয়ের কাজ শেষ হলে দুপুরের দিকে মোশারফের পশু জবাই করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৫
টিএইচ/জেডএস