ঢাকা: পশু জবাইয়ের জন্য রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত স্থানে কোরবানির পশুর দেখা নেই। কোরবানি হচ্ছে, অলি-গলির রাস্তায়, মহাসড়কে, বাড়ির গ্যারেজে, মার্কেটের সামনে ও বাড়ির সামনের ফুটপাতে।
রাজধানীর গুলশান, বনানী, মহাখালী, উত্তরা, সেগুনবাগিচা, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকায় শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্রই দেখা গেছে।
কেবল যত্রতত্র কোরবানি দেওয়াতেই স্থির নেই নগরবাসী। রাস্তার ওপরই তারা ফেলছেন গরু-ছাগলের গোবর, রক্ত ও উচ্ছিষ্ট। নির্ধারিত স্থানে কোরবানি না দেওয়ার কারণ হিসেবে সবাই এ বিষয়ে তাদের কেউ কিছু বলেননি বলেই দাবি করছেন। সিটি কর্পোরেশনের প্রয়োজনীয় সতর্কতা ও সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের অভাবকেও দায়ী করেন তারা।
বনানী ২৭ খেলার মাঠে বনানীবাসীর কোরবানির স্থান নির্ধারণ করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে কর্পোরেশনের লোক বসে আছেন। আছে প্রয়োজনীয় প্যান্ডেলও। কিন্তু কোনো গরু ও কোরবানির ছাগল নেই সেখানে। অথচ একটু দূরেই কোরবানি হচ্ছে রাস্তার ওপরে।
![korbani_spot_02 korbani_spot_02](files/September2015/September25/korbani_spot_02_550936508.jpg)
মাঠে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আব্দুর রহীম বাংলানিউজকে জানালেন, সকল প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু কেউই এখানে আসেননি।
পাশেই কোরবানি হচ্ছে ২৭ নম্বর রোডের ৫৫ নম্বর বাড়ির সামনে। তিনটি গরু কাটা নিয়ে ব্যস্ত সবাই। মাত্র ১০০ গজ দূরের মাঠে না যাওয়া সম্পর্কে তারা বলেন, সবাই বাড়ির সামনেই কোরবানি দিচ্ছেন। মাঠে তো কেউই যাননি। তাই আমরাও যাইনি।
উত্তর সিটির মেয়রের নিজ এলাকা পুরো বনানী আবাসিক এলাকা জুড়েই একই চিত্র। রাস্তায়, গ্যারেজে ও ফুটপাতে কোরবানি দিয়ে গোবর ও রক্ত ফেলা হচ্ছে বাড়ির সামনের ফুটপাত ও ড্রেনে।
গুলশান ২ নম্বর চত্ত্বরের সামনের অফিস ও মার্কেটের সামনে চলছে কোরবানি ও মাংস কাটার উৎসব। কিন্তু গুলশানবাসীর জন্য নির্ধারিত গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের মাঠে কোনো পশু জবাই হয়নি। তবে মাঠের পাশের রাস্তায় তিনটি গরু ও একটি ছাগল জবাই হয়েছে।
গুলশান ২ নম্বর মোড়ে মার্কেটের সামনে পশু জবাইকারী সুমন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা টিভিতে দেখছি, নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই দিতে হবে। কিন্তু পরবর্তীতে কেউই আর এ নিয়ে কিছু বলেননি। দেখেন, সবাই যে যার মতো কোরবানি দিচ্ছেন। তাই আমরাও দিচ্ছি।
![korbani_spot_01 korbani_spot_01](files/September2015/September25/korbani_spot_01_156724444.jpg)
ইয়ুথ ক্লাবের পাশের মাঠে কোরবানি না দিয়ে রাস্তায় কোরবানি দিচ্ছেন পাশের বাড়ির লোকজন। এখানকার অন্য সবাই বাড়ির গ্যারেজে পশু জবাই করলেও তারা কেন রাস্তায় কোরবানি দিচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো উত্তর দিতে চাননি তারা।
মহাখালীর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশেই ফুটপাতে পশু জবাই হতে দেখা গেছে। আর পশুর বর্জ্য রাখা হচ্ছে রাস্তায়। এর কারণ হিসেবে সাইফুল আলম রাসেল বাংলানিউজকে বলেন, নির্ধারিত জায়গায় কোরবানি দিতে হবে এমন কথা আমাদের কেউ বলেননি। এটা জানলে তো নিজের বাড়ির সামনে পশু জবাই দিতাম না। কারণ, এর গন্ধ তো আমাদেরই সহ্য করতে হবে।
ঢাকার প্রায় সব জায়গারই চিত্র এক। দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও সচেতনতার অভাবকে এজন্য দায়ী করছেন অনেকে। তবে জবাইয়ের অনেক নির্ধারিত স্থানে কাঁদা ও পানি জমে থাকায় মানুষ সেখানে যেতে পারেননি বলেও দাবি করেছেন কেউ কেউ। কেউ আবার বাসা থেকে নির্ধারিত স্থানের দূরত্বের অজুহাত দেখিয়েছেন।
এদিকে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে থাকা নূর আলম বলেন, মাঠ ফাঁকা রেখে সবাই বাড়ির সামনে কোরবানি দিচ্ছেন। আমরাতো মাঠে সব ব্যবস্থা করে বসে ছিলাম। এখন আমাদের ডাবল কাজ করতে হবে। মানুষই আসলে নিয়মের মধ্যে থাকতে চান না। শুধু শুধু আমাদের দোষ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২৯১৫
আরএম/এমআইএস/এএসআর
** রাজধানীতে যত্রতত্র পশু জবাই
** জনসচেতনতা চাইছে দুই সিটি কর্পোরেশন
** বর্জ্যমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অপসারণ চলবে