ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘ছোটাসা এক ঘর চাহিয়ে, অর কুছ নেহি’

ঊর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৫
‘ছোটাসা এক ঘর চাহিয়ে, অর কুছ নেহি’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নেপাল থেকে ফিরে: নেপালের ছোট্টগ্রাম সিন্ধুলি। সেখানে তিন সন্তান, স্ত্রী ও মা-বাবাকে নিয়ে বেশ ভালোই দিন কাটছিলো পাক্ষা’র।

কিন্তু এক ভূমিকম্পে সব শেষ। আশ্রয় নিয়েছেন কাঠমান্ডুতে। এখন তার কেবল একটিই স্বপ্ন, পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ।

বাংলানিউজকে অশ্রুসজল চোখে পাক্ষা বলেন, ঘর বানানে কে লিয়ে কোশিশ কররাহাহু।

তার স্ত্রী দুলারি বাসা-বড়িতে ঝিয়ের কাজ করছেন। পাক্ষা জানান, সিন্ধুলিতে তার সঙ্গে নিজেদের জমিতে চাষাবাদ করতেন দুলারি। ভূমিকম্পের পর কাঠমান্ডুতে এসে মানুষের বাসা-বাড়িতে কাজ করছেন। দুই ছেলে, এক মেয়েকে কাঠমান্ডুর একটি স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। ভূমিকম্পে নিঃস্ব কিছু মানুষকে কাঠমান্ডুর মাহেন্দ্রজায়দীর একটি মাঠে পলিথিন দিয়ে ছোট ছোট ঘর করে দেওয়া হয়েছে। এরই একটি ঘরে গাদাগাদি করে বাস করতে হচ্ছে এ পরিবারটির। দু’জন মিলে কাজ করছেন, কিছু টাকাপয়সা জমিয়ে আবার সিন্ধুলিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য। পাক্ষা কাঠমান্ডুতে একটি দোকানে কাজ করছেন।

রাজু গিরি’র অবস্থা আরও করুণ। ভূমিকম্পে বাড়িঘর হারিয়েছেন রাজু গিরি ও তাদের পরিবার। এক সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ছিলো রাজুর জীবন। কিন্তু ভূমিকম্পে সব হারিয়ে আজ নেপালের পথে ট্যুরিস্টদের গাড়িচালক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। তারও স্বপ্ন পাক্ষার মতোই। বাংলানিউজকে রাজু গিরি বলেন, ছোটাসা এক ঘর চাহিয়ে, অর কুছ নেহি।

৬৫ বছর বয়সী বুখা গোরখার অবস্থাও শোচনীয়। সব হারিয়ে মা বুখা গোরখার দায়িত্ব নিতে পারছেন না তার সন্তানরা। তাই কাঠমান্ডুর মন্দিরের সামনে মোজাসহ ট্যুরিস্টদের আকর্ষণকারী ছোটখাট জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেছেন তিনি।
বুখা জানান, সকাল ৬টায় মন্দিরের আসেন তিনি। দোকানের সব পসরা সাজিয়ে নেন নিজের মতো করে। রাত ৭টা পর্যন্ত এখানে থাকেন। রাতে থাকেন আশ্রয়কেন্দ্রে।

তিনি আরও জানালেন, দোকান, বাড়িঘর- ভূমিকম্পে সব শেষ। ছেলেমেয়েরা নিজেদের সংসারই চালাতে পারছেন না। তাকে দেখবেন কিভাবে। তাই দোকান দিয়েছেন। উপরওয়ালা চাইলে আবার হয়তো সব হবে। নয়তো সব শেষ।  

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল নেপালে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়। এতে প্রায় ৬ হাজার মানুষ নিহত হন। ভূমিকম্পে নেপালের গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী অনেক স্থাপনা গুড়িয়ে যায়। গ্রামাঞ্চলের বেশির ভাগ ঘরবাড়ি পরিণত হয় ধ্বংসস্তুপে। এ ভূমিকম্পটি হিমালয় ভূমিকম্প নামেও পরিচিত। ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের দুঃসহ স্মৃতি আজও বয়ে বেড়াচ্ছে নেপালের মানুষ। এখনো আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজ বাড়িতে যেতে পারেনি অনেকেই।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৫
ইউএম/ইএস/আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।