ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বাটি চালান দিয়েও পাওয়া যাবে না...

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৫
বাটি চালান দিয়েও পাওয়া যাবে না... ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নেপাল থেকে ফিরে: কাঠমান্ডু সিটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে নারায়ণহিতি মোড়। ঐতিহাসিকও বটে।

চৌরাস্তাটির পশ্চিমে সার্ক সচিবালয়, দক্ষিণ রয়েছে নেপাল নির্বাচন কমিশন, আমেরিকান দূতাবাস, উত্তরে বিশাল এলাকা জুড়ে দেশটির পার্সপোর্ট অধিদফতর। কাছাকাছি রয়েছে দরবার স্কয়ারসহ অনেকগুলো ঐতিহাসিক স্থাপনা।

ব্যস্ততম এই চৌরাস্তাটিতে নেই বিশাল এলাকা জুড়ে সড়কদ্বীপ। নেই সড়ক দখল করে পুলিশ বক্সও। টি টেবিল সাইজের ছোট্ট একটি কংক্রিটের সড়কদ্বীপ। আবার চারিদেকে ট্রাফিক পুলিশের সাজ সাজ রবও নেই। নেই ট্রাফিকের যুদ্ধাংদেহী মনোভাবও।

নেই ঢাকার মতো স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল। মাত্র একজন ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করছেন যান চলাচল। কিন্তু তার ভয়েই তটস্থ গাড়ি চালকরা। পুরো লেন মেনেই চলছে সব গাড়ি।

আর লেন মেনে চলার কারণে নেই কোনো যানজট। সিগন্যাল ছেড়ে দিলে সাঁই সাঁই করে ছুটে চলছে সব গাড়ি।

বামদিকের সবগুলো খোলা। সিগন্যাল পড়লে নির্ধারিত দূরত্বে সবগাড়ি এক লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। কেউ ‍বামের লেন ‌বন্ধ করছে না। এমনকি সামান্য মাথাও বাঁকা করছে না। বামের লেনের গাড়ি দ্রুত এগিয়ে চলছে।

রাস্তাটিতে কোনো ডিভাইডার নেই। তরপরও কোনো যানবাহন বিপরীত দিকের লেনে প্রবেশের চেষ্টা করছে না। বিপরীত দিকের গাড়িও চোখের পলকে ছুটে চলছে।

কিন্তু বাংলাদেশের কী হাল! লেন নির্ধারিত থাকলেও কেউ তা মানছে না। সামনে গাড়ি দেখলেই বামের লেনে ঢুকে পড়ছে। আবার বামের লেনে যদি জায়গা নাও থাকে তবুও গাড়ির মাথা বাঁকা করে রাস্তা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পড়ে।

রোড ডিভাইডার রয়েছে তবুও আগের সিগন্যাল থেকে রং সাইডে প্রবেশ করে মোড়ে এসে জ্যাম তৈরি করছে। এই হচ্ছে নিত্যদিনের চিত্র।

রেলের লেভেল ক্রসিংয়ের অবস্থা আরও নাজুক। সিগন্যাল পড়লেই রং সাইডে ঢুকে পড়ছে যানবাহন। ট্রেন চলে গেলে প্রথমে রং সাইডের গেট আগে খুলে দেওয়া হচ্ছে।

দিন দিন এই প্রবণতা যেন আরও বাড়ছে। অন্যদিকে সিগন্যাল ছেড়ে দিলেও গাড়ি চলে মন্থর গতিতে। পেছন থেকে বোঝার কোনো জো থাকে না রাস্তা বন্ধ না-কি পুরোপুরি চালু।
 
যাত্রীবাহী বাসগুলো রাস্তায় আড়াআড়িভাবে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের বক্স ঘেঁষে। রাস্তা এমনভাবে বন্ধ করে দাঁড়ায় যাতে পেছনের বাস তাকে পাশ কাটিয়ে পরের স্টপেজে গিয়ে আগে যাত্রী তুলতে না পারে।

কিন্তু সেখানে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি দেখলে মনে হবে তাদের বড় কোনো মহড়া রয়েছে। আর তাদের যুদ্ধাংদেহী মনোভাব?

বেসরকারি টেলিভিশন আরটিভির স্টাফ করেসপন্ডেন্ট জুলহাস কবীর বলছেন, এটা সবটাই সাড়ম্বর।

চলতি পথের আলোচনায় ‍অংশ নেন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের হাসনাত রাব্বি। বললেন, ‘আমাদের দেশের রাস্তায় গাড়ি বেশি। রাস্তার স্পেস বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে পুলিশ বক্স তৈরি করে রাস্তা সংকুচিত করে রাখা হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও বিশাল এলাকা জুড়ে সড়কদ্বীপ তৈরি করা হয়েছে। যার না আছে শ্রী, না আছে উপযুক্ততা!

হাসনাত রাব্বি বলেন, আমাদের দেশের কর্মকর্তারা কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ ভ্রমণ করেন। এসব কী তাদের চোখে পড়ে না? নাকি তারা শুধু প্রমোদ ভ্রমণই করেন! আরেকজন বলে উঠলেন আরে বাদ দাও ওদের কথা। ওরা তো বৌ বাচ্চা নিয়ে শপিং করতে যায় বিদেশে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে দেখেন ফ্লাইওভার হয়েছে। কিন্তু সেই ফ্লাইওভার উঠতে নামতে রাস্তা বন্ধ করে যাত্রী উঠা-নামা করছে বাসগুলো। কিন্তু নেপালের চৌরাস্তা থেকে কমপক্ষে হাফ কিলোমিটার দূরে বাস স্টপেজ রয়েছে। আর গাড়িগুলো থেমে থাকছে না।

বাস নির্ধারিত স্টপেজ পয়েন্টে গিয়ে যাত্রী নিয়েই ছুটে চলছে গন্তব্যে।

নেপালের থামেল থেকে বধানিকন্ঠ এলাকায় যাতায়াতের জন্য রয়েছে বাস ও মাইক্রোবাস সার্ভিস। মাইক্রোবাসগুলো অনেকটা বাংলাদেশে বন্ধু পরিবহন সাইজের মতো। ভেতরে দাঁড়িয়ে লোক নিচ্ছে। কিন্তু মাথা সোজা করে দাঁড়ানো যায় না। এরা কিন্তু বন্ধু পরিবহনের মতো গলাকাটা ভাড়া আদায় করে না।

সেই মাইক্রোবাসে যাত্রার দারুণ অভিজ্ঞতা সত্যিই উল্লেখ করার মতো। এতে ‍সামনের সিটে ড্রাইভারে পাশে দুইজন, পেছনে প্রথম সিটে নারীদের জন্য নির্ধারিত ৪টি আসন।

এর পেছনে দুই সিটের সারি রয়েছে দুইটি, তার পেছনে তিন সিটের লাইন একটি পেছনে। আর সবার পেছনে রয়েছে ৫ সিট। তরুণ-তরুণীরা অনেক সময় পেছনের সিটে বসেই প্রেম নিবেদন করতে করতে গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছে।

এক নারী তার গন্তব্যের জন্য ২০ রুপির নোট দিলেন। ভাড়া উত্তোলনকারী তরুণটি ৫ রুপি ফেরত দিলেন।

নারী বললেন, ভাড়া তো ১০ রুপি। তরুণটি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বললেন, ভাড়া বেড়েছে। তারপর চালকের আসনের উপরে ছাঁদে সাঁটানো ভাড়ার তালিকা দেখে নিলেন। ‌আর তালিকা দেখার পর বললেন ভুল হয়েছে ভাড়া ১২রুপি হবে। আর সঙ্গে সঙ্গে ৩ রুপি ফেরত দিলেন। বাংলাদেশে কী এমন অবস্থা পাওয়া যাবে।

ঈদে বাড়ি যাওয়ার জন্য ডিপজল পরিবহনে রংপুর ‍যাওয়ার টিকিট কিনেছি (রূপনগর থানার ওসি তদন্ত মতলুবর রহমানের সহায়তায়) ১২শ’ টাকায়। ফেরার টিকিটের জন্য ফোনে যোগাযোগ করলে একই গাড়ির রংপুর কাউন্টার থেকে ১৫শ’ অর্থাৎ ৩শ’ টাকা বেশি চাওয়া হয়েছে। অন্যথায় সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে।

অথচ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দিয়েছেন ভাড়া বেশি নিলেই কঠোর শাস্তি। মন্ত্রীর এই কথা বিশ্বাস করেন এমন লোক মনে হয় বাটি চালান দিয়েও পাওয়া যাবে না।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৫
এসআই/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।