ঢাকা: এই বুঝি বাবা ফোন করে জানতে চাইবেন, কেমন আছিস তোরা। চিন্তা করিস না আমি সুস্থ আছি।
এমনই আশা দুরাশার মধ্য দিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে সৌদি আরবে মিনা ট্রাজেডিতে নিখোঁজ মুজিবুরের পরিবারের সদস্যদের।
‘একটু রাখ, আমি দশ মিনিট পরে ফোন দিচ্ছি’ এই বলে যে বাবা ফোন রাখলেন, এরপর একে একে সাত দিন কেটে গেল, কিন্তু বাবা আর ফোন দিলেন না। হাজার চেষ্টা করে আমরাও যোগাযোগ করতে পারলাম না বাবার সঙ্গে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন মুজিবুরের বড় ছেলে মুবিনুর রহমান।
তিনি বলেন, মোয়াল্লিম (গাইড) এর মাধ্যমে মিনাসহ মক্কার বিভিন্ন জায়গা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও বাবার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ বাবাকে খুজঁতে খুজঁতে বার বার অসুস্থ হয়ে পড়ছেন মা।
সর্ব শেষ নিজেই খুঁজতে যাওয়ার ইচ্ছা নিয়ে সৌদি দূতাবাসে যোগাযোগ করেও কোন লাভ হয়নি। নভেম্বরের আগে কাউকে ভিসা দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে সৌদি দূতাবাস।
গত ৮ সেপ্টেম্বর এয়ারওয়ে ট্রাভেলার্স এজেন্সির মাধ্যমে তার বাবা মুজিবুর রহমান (৬০) ও মা তহুরা রহমান (৫৬) পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যান। এরপর ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাবা-মা’র সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ হত মোবিনুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। মিনার দুর্ঘটনার আগের রাতেও বাবা-মা’র সঙ্গে পরিবারের সবার কথা হয়েছে।
সেই স্মৃতি মনে করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মোবিনুর।
‘দশ মিনিট পর ফোন দিচ্ছি’এই শিরোনামে গত ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলানিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
একই এলাকার পাশাপাশি বাড়ির দুই জন নিখোঁজের খবর প্রকাশিত হলেও চার দিন পর একজনের লাশ খুজেঁ পাওয়া গেলেও নিখোঁজ মুজিবুরের কোন সন্ধান আজও পাওয়া যায়নি।
রাজধানী ঢাকার সবুজবাগ থানার দক্ষিণ রাজারবাগ এলাকার বাসিন্দা মো. মুজিবুর রহমান একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। পেশায় ছিলেন ব্যাংকার। চাকরি থেকে অবসর নিয়ে চলতি বছর সস্ত্রিক হজ করতে সৌদি আরব যান তিনি। হজ শেষে আগামী ২১ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা ছিলো। মুজিবুর রহমানের পাসপোর্ট নাম্বার বিসি-০২৩৭৬৫৪, হাজি আইডি নাম্বার-০৬১১০৪৬।
দক্ষিণ রাজারবাগ এলাকা থেকে এক সঙ্গে একই এজেন্সির মাধ্যমে ১০ জন হজে যান। মিনার ঘটনায় তাদের মধ্য থেকে ছয় জন আহত হন। আর দুইজন নিখোঁজ হন। নিখোঁজ দুই জনের মধ্যে জাহিদুল ইসলাম নামে একজনের লাশ চারদিন পরে খুঁজে পায় তাদের স্বজনরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৫
এজেডকে/জেডএম