খুলনা: মহাদেব চক্রবর্তী একাত্তরে খুলনা শহরে গণহত্যার প্রথম শহীদ এবং পাইওনিয়ার কলেজটি তার বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত। সে দিক বিবেচনা করে এ কলেজটির নাম শহীদ মহাদেব চক্রবর্তীর নামে নামকরণের দাবি জানিয়েছেন ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের সংগঠকরা।
এ জাদুঘরের উদ্যোগে বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সাড়ে ৫টায় মহানগরীর সরকারি পাইওনিয়ার মহিলা কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদ মহাদেব চক্রবর্তী স্মরণে স্মৃতিফলক স্থাপন অনুষ্ঠানে এ দাবি জানানো হয়। স্মৃতিফলক উন্মোচন করেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি প্রফেসর ড. মুনতাসীর মামুন।
স্মৃতিফলক স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের উদ্যোগে গণহত্যাস্থল, বধ্যভূমি, নির্যাতন কেন্দ্র চিহ্নিতকরণ ও স্মৃতিফলক স্থাপনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে এ স্মৃতিফলক স্থাপন করা হল।
তিনি বলেন, পাইওনিয়ার মহিলা কলেজটি একাত্তরের শহীদ মহাদেব চক্রবর্তীর বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত। তিনি এ কলেজের নামকরণ শহীদ মহাদেব চক্রবর্তীর নামে করার প্রস্তাব দেন। উপস্থিত সুধীজন এ প্রস্তাবে সম্মতি দেন।
খুলনায় আর্কাইভ জাদুঘরকে একটি বাড়ি প্রদান করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান ড. মুনতাসীর মামুন।
পরে সন্ধ্যায় আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, স্বাধীনতা লাভের পর শহীদ মহাদেব চক্রবর্তীর বাড়িতে পাইওনিয়ার মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজ প্রতিষ্ঠার পর বাড়িটি প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরবর্তীতে ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় ২০১৪ সালে তা অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু মহাদেব চক্রবর্তী পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে খুলনা শহরে গণহত্যার প্রথম শহীদ হলেও এতোদিন অনেকের কাছেই বিষয়টি অজানা ছিল। অনেকেই জানেন না, যে বাড়িতে পাইওনিয়ার মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে সেই বাড়িটি শহীদ মহাদেব চক্রবর্তীর।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সরকারি পাইওনিয়ার মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর লুৎফুন্নাহার। বক্তব্য দেন ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সম্পাদক ডা. শেখ বাহারুল আলম, প্রফেসর দীপা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রফেসর ভার্গব বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রফেসর মিনতি রাণী মণ্ডল, প্রফেসর জাহানারা বেগম, অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক শংকর কুমার মল্লিক প্রমুখ।
আলোচনা সভায় জানানো হয়, ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) বেলা ১১টায় খুলনা সার্কিট হাউজের হেলিপ্যাডের বিশ্রামাগার নির্যাতন কেন্দ্রের (অধুনালুপ্ত) স্মরণে স্মৃতিফলক উদ্বোধন করা হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর এমপি।
একাত্তরের ১ এপ্রিল ভোরবেলায় খুলনাবাসীর ঘুম ভাঙ্গে মহাদের চক্রবর্তীসহ ছয়জনকে হত্যার খবর শুনে। এটি ছিল খুলনা শহরে পাকিস্তানি সেনাদের পরিকল্পিত গণহত্যার প্রথম ঘটনা। এতে খুলনা শহরসহ আশেপাশের এলাকাবাসীর মধ্যে ভয়ানক ভীতি সঞ্চারিত হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা দলে দলে শহর ছাড়েন। মানুষের ভাবনায়ও ছিল না যে, মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু অকৃতদার মহাদেব চক্রবর্তীকে পাকিস্তানি সেনারা খুন করতে পারে! অথচ তাই ঘটেছিল।
আলতাপোল লেনের মাথায় সাউথ সেন্ট্রাল রোডে সাতজনকে গুলি করে ফেলে রাখা হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন বেঁচে গিয়েছিলেন। শহীদ হয়েছিলেন মহাদেব চক্রবর্তী, মহাদেব চক্রবর্তীর বাড়ির কর্মী উদ্ভব, অ্যাডভোকেট নকুলেশ্বর চক্রবর্তীর দুই ছেলে (নাম জানা যায়নি) এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও দুই জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৫
এমআরএম/এএসআর