ঢাকা: আমেরিকা প্রবাসী একমাত্র সন্তানের অপেক্ষায় দিন কাটছে মিরা চৌধুরীর। আর মেরি ফোলিয়া স্বামীর মৃত্যুতে নিঃসঙ্গ জীবন পার করছেন।
ঢাকার কাঁচপুরের তৈয়ব আলী ভাড়া থাকেন আদাবরে। সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন কাজে আসেন আগারগাঁও প্রবীণ নিবাসে। বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর)
আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসে প্রতিদিনের মতোই কাজে যোগ দিয়েছেন তৈয়ব আলী।
বিশ্রামের কথা মাথায় নেই তার। কাজের ফাঁকে বিশ্রামও নিতে চান না তিনি। তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকেই প্রয়োজনীয় কথা সেরে নিতে চান।
প্রবীণ নিবাসের বাগানে ফুলের টবে পানি দিতে দিতে তৈয়ব আলী বলেন, ‘যা জানতে চান তাড়াতাড়ি কন। ’
কাজের পরে কথা বলতে চাইলে তৈয়ব আলী বলেন,‘সময় হবে না। কাজ শেষ হলেও সমাজসেবা অধিদফতরে যেতে হবে। ওখানকার কর্তারা প্রবীণ দিবসের দাওয়াত করেছেন তাকে। ’ আর তাছাড়া সময় নষ্টও করতে চান না তিনি।
তৈয়ব আলীর কয়েকটা ছবি তুলে তার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটতে থাকলে তৈয়ব আলী বলেন,‘শুধু ছবিই তো তুলছেন, কী জানবেন কন?’ এরপর নাম ঠিকানা জানতে চাইলে এক এক করে অনেক কিছুই বলে ফেলেন তৈয়ব আলী।
বাথরুম থেকে পানি এনে প্রবীণ নিবাসের আঙ্গিনার ফুলের টবে পানি দিচ্ছিলেন তিনি। হাতের পাত্রটি থেকে হঠাৎ পানি দেওয়া বন্ধ করেন। এ সময় আবেগী হয়ে ওঠেন তৈয়ব আলীও।
বলেন, ‘ছুটির দিনে কাজ থাকে না। দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক কাজে যা আসে তা দিয়ে সংসার চলে কোন রকমে। মাসে ৪/৫টি শুক্রবার, আবার সরকারি অন্য ছুটিও থাকে। অনেকগুলো টাকা মাইর (বঞ্চিত) যায়। ’
দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে প্রবীণ নিবাসে কাজ করেন তৈয়ব আলী। জানান, প্রতিদিন ৩০০ টাকা পাই। মাসে আসে ছয় থেকে ৭ হাজার টাকা। তিন ছেলে দুই মেয়ে তার। এখনও ছোট মেয়েটির বিয়ে হয়নি। বড় ছেলে শাহজাহান রিক্সা চালায় এবং নিজের রিক্সা আছে তার। তা দিয়ে ভাড়া খাটিয়ে নিজের সংসার চালায়। অন্য ছেলেরা যে যার মতো চলে। কেউ তেমন ভাল নেই। তাই তাকে দেখারও কেউ নেই।
তৈয়ব আলীর স্ত্রী নূরীর বয়স পঞ্চাশের উপরে। তার শরীর প্রায় সময় ভাল থাকে না। তার চিকিৎসার জন্যও টাকা লাগে। এছাড়া রয়েছে নাতি-নাতনি। তাই তার বসে থাকার সুযোগ নেই। বসে থাকেনও না, থাকতে চান না। কাজ চান শুক্রবার কিংবা সরকারি ছুটির দিনেও। প্রবীণ দিবসে এটাই তার চাওয়া।
কুষ্টিয়ার ৬৬ বছর বয়সী চিরকুমারী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, শুধু প্রবীণদের জন্য নয়, ভিক্ষুকদের জন্য কাজের প্রয়োজন। তাদের পুনর্বাসন জরুরি। সরকার ও বিত্তবানদের কাছে তার চাওয়া আর যেন কাউকে ভিক্ষা না করতে হয়। কোনো প্রবীণ যেনো অবহেলার শিকার নয় হয়।
ছেলের জন্য অপেক্ষা মিরা চৌধুরীর
৫৭ বছর বয়সী মিরা চৌধুরী দুই বছর ধরে রয়েছেন প্রবীণ নিবাসে। একমাত্র ছেলে অপূর্ব হাসান চৌধুরীকে স্কলারশিপে আমেরিকায় পাঠানোর পর আসেন প্রবীণ নিবাসে। দিলু রোডের বাড়িটা বিক্রি করে ব্যাংকে টাকা রেখেছেন। টাকার কোনো অভাব না থাকলেও এই মানুষটিকে কাছে রাখার মত আপন কেউ নেই। ছেলে লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরে আসলে তখন ছেলের সঙ্গে সময় কাটাবেন তিনি।
নিজেদের অধিকার সম্পর্কে জানেন না প্রবীণরা
সরকার জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা করেছে ২০১৩ সালে। গেজেট প্রকাশ হয়েছে ২০১৪ সালে। বয়স্কদের জন্য ভাতাও দেওয়া হচ্ছে। তবে পুনর্বাসন সহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা এখনও নিশ্চিত হয়নি।
সরকারের এ উদ্যোগ আগারগাঁওয়ের প্রবীণ নিবাসের অনেকের জানা থাকলেও বেশিরভাগ প্রবীণই জানেন না তাদের অধিকার রয়েছে। প্রবীণ নিবাসের কর্মী সত্তরোর্ধ্ব তৈয়ব আলী জানান, তিনি কিছুই (বয়স্কভাতা) পান না।
বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান চিকিৎসা নিতে আসা সাবেক সরকারি কর্মকর্তা বরিশালের ফজলে এলাহী (৭০) জানান, ‘কবে সব সুযোগ সুবিধা পাবেন প্রবীণরা তা জানি না। তবে প্রবীণদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা জরুরি। অন্তত সরকার স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে ব্যবসা বাণিজের ব্যবস্থা করলে হয়তো প্রবীণরা অবহেলার শিকার হবেন না। আর সমাজ ও পরিবারের বোঝাও হবেন না। ’ তিনি চিকিৎসায় অধিকার ও সুযোগ সুবিধা দ্রুত নিশ্চিত করার আহ্বান জানান সরকারের কাছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৬ ঘণ্টা,অক্টোবর ০২, ২০১৫
এসএমএ/আরআই