হবিগঞ্জ: পানির অপর নাম জীবন। সুস্থ থাকতে তাই বিশুদ্ধ খাবার পানির কোনো বিকল্প নেই।
আর্সেনিকসহ ক্ষতিকর নানা রাসায়নিক উপাদান ও পানিবাহিত রোগ থেকে নিরাপদে রাখতে পানির ফিল্টার হতে পারে অন্যতম সেরা উপায়।
কিন্তু বাজারে প্রচলিত ফিল্টার কেনার মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই অনেকেরই। মূলত এ শ্রেণির মানুষের কথা চিন্তা করেই তৈরি হচ্ছে মাধবপুরের ফিল্টার।
![](files/October2015/October02/saradeshe_bishuddo_panir_chahida_methay_madhobpur_er__filter_22.09.15__1__207906810.jpg)
অল্প টাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় তৈরি হচ্ছে এ পরিবেশবান্ধব পানির ফিল্টার।
মাধবপুর পৌরসভার কাচারীপাড়া ও মালাকারপাড়ার অন্তত ১৫টি পরিবারের সদস্যরা বংশানুক্রমিকভাবে ফিল্টার তৈরির আদি পেশা এখনো ধরে রেখেছেন। তাদের তৈরি তুলনামূলক বেশ কম দামের এ ফিল্টার এখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাজারজাত হচ্ছে।
বালু ও সিমেন্ট দিয়ে তৈরি এ ফিল্টারের দাম ৬শ থেকে ৮শ টাকার মধ্যে। তবে বর্তমানে ফিল্টারের গায়ে টাইলসও ব্যবহার করছেন কারিগরদের কেউ কেউ। এ ফিল্টারের দাম একটু বেশি।
![](files/October2015/October02/saradeshe1_535500808.jpg)
মাধবপুরের এ ফিল্টার তৈরিতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ৫ থেকে ৮ জন কারিগরকে হাত লাগাতে হয়। ফিল্টার তৈরির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ফিল্টারের ফর্মা তৈরি, মোজাইক ও কার্বন (ফিল্টারের প্রধান ছাকনি) তৈরি করা। এ ছাড়াও ছোটখাট আরো কিছু কাজ রয়েছে।
তবে ফিল্টার তৈরির এ পেশায় আগের মতো আর লাভ নেই। অনেকটা বাপ-দাদার পেশা রক্ষার্থে এটা করছেন বলে দাবি এসব ফিল্টার কারখানার মালিক ও কারিগরদের।
এ নিয়ে কথা হয়, কাচারীপাড়ার প্রদীপ কুঠিরের ব্যবস্থাপক জীবন রায়ের সঙ্গে। তিনি জানান, তার কারখানায় প্রতিদিন গড়ে ১০টি ফিল্টার তৈরি করা হয়। পরে এগুলো খুচরা ও পাইকারি বাজারে বিক্রি করা হয়।
![](files/October2015/October02/saradeshe2_390756396.jpg)
তিনি জানান, কারিগরদের পারিশ্রমিক দিয়ে আর তেমন লাভ থাকে না। তবুও বংশের স্মৃতি রক্ষার্থে এ কাজ করে যাচ্ছেন। এ শিল্পে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
মালাকারপাড়ার কারখানা মালিক রাজকুমার মালাকার (৪৫) বাংলানিউজকে বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে ফিল্টার তৈরির কাজ করছি। আমাদের ফিল্টার সারাদেশে বিক্রি হয়। যা লাভ হয় তা দিয়ে কোনরকমে সংসার চালাই।
![](files/October2015/October02/saradeshe3_736881582.jpg)
মালাকারপাড়ার কারখানা মালিক নিতু মালাকারের স্ত্রী রেবা রাণী মালাকার (৩৫) জানান, তার পরিবারের সবাই এ পেশায় জড়িত। ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করলেও তারাও কারখানায় কাজ করে। তবে ফিল্টার বিক্রি করে এতো লোকের শ্রমের মূল্য আসে না। বংশের পেশা বলে করতে ভালো লাগে, তাই এখনো এতে জড়িয়ে আছেন।
কারিগর সবিতা দেবনাথ (৪৫), সাধন দাশ (৫০), কল্পনা দেবী (৪০) ও সবিতা মালাকার (৪০) জানান, তারা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কারখানায় কাজ করেন। বেতন পান মাসে দেড় থেকে ২ হাজার টাকা।
![](files/October2015/October02/saradeshe_b_198076935.jpg)
এ ব্যাপারে মাধবপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ উম্মে কুলসুম জানান, মাধবপুরের ফিল্টার দামে সস্তা হলেও এর ছাকনি প্রক্রিয়াটি উন্নতমানের। ফলে আয়রন ও আর্সেনিকমুক্ত শতভাগ বিশুদ্ধ পানি পাওয়া সম্ভব হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৫
এসআর