ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

সাংবাদিক দীপঙ্কর হত্যাকাণ্ড

তদন্তেই কেটে গেলো ১১ বছর

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১৫
তদন্তেই কেটে গেলো ১১ বছর সাংবাদিক দীপঙ্কর চক্রবর্তী

শেরপুর (বগুড়া) থেকে ফিরে: বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) তৎকালীন সহ-সভাপতি সাংবাদিক দীপঙ্কর চক্রবর্তী হত্যাকাণ্ডের এগারোতম বার্ষিকী শুক্রবার (২ অক্টোবর)।

২০০৪ সালের এই দিনে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বগুড়া থেকে বাড়ি ফেরার পথে শেরপুর পৌর শহরের স্যানালপাড়ার নিজ বাসার সামনে দুর্বৃত্তরা তাকে নিমর্মভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।


 
এ দীর্ঘ সময়ে এ হত্যাকাণ্ডের রহস্যভেদ করতে পারেনি সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। সংস্থাগুলোর মোট ১১ জন তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করতেই কাটিয়ে দিলেন ১১ বছর। কিন্তু এখন পর্যন্ত মামলার কোনো কূল-কিনার করতে পারেননি তারা।
 
বরং সিআইডি মামলাটি পুনঃতদন্ত শেষে আদালতে তৃতীয়বারের মতো চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। পরে মামলার বাদী ২০১৪ সালে সেই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে আবারও নারাজি আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত বাদীর আবেদন মঞ্জুর করে চতুর্থবারের মতো জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওপর মামলাটির তদন্ত ভার দেন।   
 
এ অবস্থায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে চরম ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করা হয়েছে। সাংবাদিক সমাজও চরম ক্ষুব্ধ। এদিকে দীপঙ্কর চক্রবর্তী হত্যাকাণ্ডের এগারোতম বার্ষিকী উপলক্ষে শেরপুর প্রেসক্লাব নানা কর্মসূচি পালন করছে। এর মধ্যে রয়েছে- বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান ও শুক্রবার (২ অক্টোবর) সকালে কালোব্যাচ ধারণ ও ১০টায় শহরের বাসস্ট্যাণ্ডে মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
 
বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
 
মামলার বাদী নিহতের বড় ছেলে পার্থ সারথী চক্রবর্তী বাংলানিউজকে জানান, ২০০৪ সালের ২ অক্টোবর শেরপুরের নিজ বাসার সামনে দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের কয়েক মাসের মাথায় মামলাটি চাঞ্চল্যকর হিসেবে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। সিআইডির তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে বগুড়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে বাদী আদালতে সেই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করেন। আদালত মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য শেরপুর থানায় প্রেরণ করেন।
 
২০১৩ সালের ৬ আগষ্ট শেরপুর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল ইসলাম দ্বিতীয় দফায় আদালতে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। বাদি আবারও আদালতে নারাজি আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সিআইডির একজন সিনিয়র এএসপি পর্যায়ের কর্মকর্তাকে মামলাটি পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন।
 
এরপর নবম তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে সিআইডির সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) আব্দুস সামাদ মিঞা মামলাটির তদন্ত শুরু করেন। কিন্তু তিনিও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হন এবং তৃতীয় দফায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। বাদী পার্থ সারথী আদালতে আবারও নারাজি আবেদন করে এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে বিশেষ কোনো সংস্থাকে দিয়ে পুনঃতদন্তের দাবি জানান।
 
সর্বশেষ মামলাটি চতুর্থবারের মতো পুনঃতদন্ত ভার পড়েছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) মজিবর রহমানের ওপর।
 
গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, ২০১৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর তিনি এ মামলার নথিপত্র বুঝে পান। তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে তিনি মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী মা ভবানীর মন্দিরের দেবত্তোর সম্পত্তি ও ক্রয়ফায়ারে নিহত কুখ্যাত সন্ত্রাসী লিয়াকত ও তার সহযোগীদের বিষয়টি অন্যতম।
 
কারণ হিসেবে পুলিশ কর্মকর্তা মজিবর রহমান জানান, সাংবাদিক দীপঙ্কর চক্রবর্তী মন্দিরের দেবত্তোর সম্পত্তি উদ্ধারে কাজ করছিলেন। এ কারণেও তিনি খুন হয়ে থাকতে পারেন। পাশাপাশি কোনো ব্যক্তি বা বাহিনীর ভাড়াটে হয়ে কিলার লিয়াকত ও তার সহযোগীদের হাতে তিনি খুন হয়ে থাকতে পারেন। সব মিলিয়ে এ দু’টি বিষয়কে কেন্দ্রে রেখে মামলাটির তদন্ত কাজ চালানো হচ্ছে।      
 
প্রসঙ্গত, সাংবাদিক দীপঙ্কর শেষ জীবনে বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক দুর্জয় বাংলা’র নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও তিনি একাধিকবার শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতির পালন করেছেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৫
আরএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।