ঢাকা, শনিবার, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

‘সরকারকে বিব্রত করতেই আইএস নাম ব্যবহার’

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৫
‘সরকারকে বিব্রত করতেই আইএস নাম ব্যবহার’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ : জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নাম ব্যবহার করে সরকারকে বিব্রত করতেই ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে স্কুল পড়–য়া মোল্লা ফয়সালের (১৬) নেতৃত্বে ওরা ৩ জন গোপন প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সংঘবদ্ধ এ চক্রের সঙ্গে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সমর্থন রয়েছে।

তারা শিবির সদস্য হলেও আইএস সদস্য নয়। ’

শনিবার (০৩ অক্টোবর) রাত পৌনে ৯টার দিকে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমারত হোসেন গাজী বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।

এর আগে শুক্রবার বিকেল, রাত ও শনিবার দুপুরে আইএস সদস্য সন্দেহে মোট ৯ জনকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশ।

শনিবার রাতে ডিবি পুলিশ এ বিষয়টি খোলাসা করে জানায়, আটককৃতরা কেউই আইএস সদস্য নয়। এ প্রসঙ্গে ডিবি’র ওসি ইমারত হোসেন গাজী জানান, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠাড়বাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র মোল্লা ফয়সাল ওরফে ফাহিম আল ফয়সাল ইবনে মূসা বিন জুলকার নাইন (১৬) কয়েকজনকে নিয়ে গোপন সভা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

আর এ লক্ষ্যেই মোল্লা ফয়সাল প্রচারণার জন্য নীল কাগজে কালো কালিতে ‘মধ্যপ্রাচ্যের ডাক’ শীর্ষক লিফলেট শুক্রবার বিকেলে লাগানোর চেষ্টা করছিল। এ সময় তাকে হাতেনাতে আটক করা হয়।

পরে তার দেয়া স্বীকারোক্তি মোতাবেক উপজেলার আঠারবাড়ি এলাকা থেকে মিজানুর রহমান (২৬) ও নতুন বাজার সুপার মার্কেটের নাবিল টেলিকম থেকে বদিউল হাসানকে (২৪) আটক করা হয়।

ওসি ইমারত জানান, তারা জঙ্গি সংগঠন আইএস’র নাম ব্যবহার করে দেশে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব আছে এটা প্রমাণ করতে চেয়েছিল। এ ৩ জনের শিবির কানেকশন রয়েছে।

বাদ বাকি ৬ জনকে কী কারণে আটক করা হয়েছে, এ বিষয়ে ইমরাত হোসেন গাজী জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের আটক করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে এদের দলে সদস্য সংখ্যা কতজন এ বিষয়টি জানতেও তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।

আটককৃত ফাহিম, মিজানুর ও বদিউল হাসানের বিরুদ্ধে শনিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) মফিজুল ইসলাম বাদী হয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধনী ২০১২) এর ৬/৭/৮/৯/১১/১৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন।

কী ছিল লিফলেটে ?
মোল্লা ফয়সালের কাছ থেকে এ সিক্স আকারের নীল কাগজে কালো কালিতে লেখা লিফলেটে বড় করে লেখা, ‘মধ্যপ্রাচ্যের ডাক’। নিচ দিয়ে বড় করে তার নাম লিখেছেন। সেখানে একটি ছড়া লিখেছেন এমন, ‘এসো মধ্যপ্রাচ্যে যাই/ইসরাঈল তাড়াই/থেকো না ঘরে বসে/ওরা ফিলিস্তিনিদের রক্ত নিলো চুষে/দুনিয়ার যত অন্যায়/ভাসিয়ে দাও বন্যায়/এসো ছুটে এসো/ইয়াহুদীবাদীদের নাশো। ’

লিফলেটে প্রচারে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) এর কথা উল্লেখ রয়েছে। আর আর্থিক সাহায্যদাতার নাম কিং ফয়সাল ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব ইসলামিক ব্রিগেড অব প্যালেস্টাইন। নিচে লিখেছেন, ইসলামিক স্টেট (আইএস)।

যেভাবে এ পথে ফয়সাল
ছোটবেলা থেকেই ইসলামিক আন্দোলনে উৎসাহী ছিল ফয়সাল। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন খবর নিয়ে নিয়মিত রিসার্চ করতো দশম শ্রেণির এ শিক্ষার্থী। তার নানা নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলা জামায়াতের আমির শামসুদ্দিন আহমেদ। ৮৬ সালে তিনি জামায়াতের দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। ফয়সাল জড়িয়ে পড়েন শিবিরের রাজনীতিতে।

বছরখানেক আগে ফয়সাল একই এলাকার মিজানুর রহমানের সঙ্গে শিবিরের আদলে ইসলামিক আন্দোলন নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করে। এরপর তারা দু’জনে মিলে তাদের চক্রের সদস্য বাড়ানোর তৎপরতা চালায়। স্থানীয় বদিউল হাসানের দোকানে বসেই তারা এসব আলাপ-আলোচনা করতো বলে জানান ডিবি’র ওসি ইমারত হোসেন গাজী।

বাংলাদেশ সময়: ০১০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৫
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।