ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জেলা স্বর্ণশিল্পী শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি পবিত্র রঞ্জনকে দেখতে শনিবার (০৩ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালে এসেছিলেন জেলা স্বর্ণ শিল্পী শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল শিকদার (৫০)।
এর প্রায় দু’ঘন্টার মাথায় আবারো বাবুল শিকদার ফিরলেন হাসপাতালে।
বাবুলের নিথর দেহের পাশে যখন একে একে ভিড় করছেন জেলার স্বর্ণশিল্পীরা ঠিক তখন এসে হাজির হলেন মর্গের দু’ডোম। তারা হঠাৎ ট্রলি ঠেলে মর্গের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন বাবুলের মরদেহ। আর তখনই শোকাচ্ছন্ন বাবুলের বন্ধু জেলা সরকারী কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিম উদ্দিন আকন্দ তাদের সামনে দাঁড়িয়ে গতিরোধ করলেন।
কাঁদতে কাঁদতে বললেন, কার কাছ থেকে অনুমতি নিছস। লাশ নিয়া কই যাস। এ লাশ মর্গে যাইবো না। ওর বাড়িতে যাইবো।
শহরের গাঙ্গিনারপাড় মোড় এলাকায় গোল্ডেন মার্কেটের পাশেই বাবুলের বাড়ি। বিকেলে বাড়ির সরু পথে প্রবেশ করতেই প্রতিবেশী স্বজনদের হাহাকার। তারা জেনেছেন বাবুল আর নেই। কিন্তু বাড়ির ফটকে প্রথমে বিনয়ের সঙ্গে মানা করলেন বাবুলের আত্মীয় কৃষ্ণ কর্মকার।
‘ভাই ভেতরে যাবেন না। আমরা অহনও ওর স্ত্রী ও সন্তানগরে কোন খবর দেই নাই। আত্মীয় স্বজনরা না এলে ওগোরে শুনাইতে পারমু না। ’
পরবর্তীতে কৃষ্ণ কর্মকারের সঙ্গে স্বর্ণশিল্পী বাবুল শিকদারের কক্ষে গিয়ে দেখা গেলো, সড়ক দুর্ঘটনার খবর শুনে অনেক আত্মীয় স্বজনরা এসে ভিড় করছেন। কিন্তু স্ত্রী জয়ন্তী কর্মকার (৩০) জানেন না তার স্বামীর মৃত্যুর খবর। তিনি জেনেছেন দুর্ঘটনায় তার স্বামী আহত হয়েছেন। তার চিকিৎসা চলছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় বাবা’র আহতের খবরে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন ছোট ছেলে রবিন (১৪)। নিহার রঞ্জন নামে তার এক ভাই বলছেন, ‘তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও। নইলে তোমার আব্বু বকা দিবে। ’
নিষ্পাপ রবিন তখনো জানে না তার বাবা চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তাকে দেয়া হচ্ছে শুধুই মিথ্যা স্বান্তনা।
ভাগ্য বিপর্যয়ের শিকার শিশু রবিন তখন বলছে, ‘বাবা আইলে আমি খামু। ’ পাশে বসেই স্বামীর চিন্তায় ছটফট করছেন স্ত্রী জয়ন্তী কর্মকার। পরিচিত কেউ এলেই জিজ্ঞাসা করছেন, ‘তার কী খবর? কখন তারে নিয়া আসবেন?’
স্বান্তনার এ পালা শেষে বাবুলের মৃত্যু সংবাদ শুনেই স্তম্ভিত হয়ে গেলেন স্ত্রী জয়ন্তী। কিছুক্ষণ নির্বাক থেকে চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন, ‘আমার সব শেষ। ’ মাকে জড়িয়ে তখন কাঁদছে বড় মেয়ে লিমা (২২) ও লিম্পা (৭)। তাদের আর্তনাদ আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠলো গাঙ্গিনারপাড়ের বাতাস।
নিহত বাবুলের আত্মীয় কৃষ্ণ কর্মকার ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ‘আর কত সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মরবো। সরকার কেন সব মহাসড়কে ছোট যান সিএনজি চলাচল বন্ধ করে না। আর কত স্ত্রী তার স্বামী হারাবে। লিমা, লিম্পারা তাদের বাবাকে হারাবে। ’ অশ্র“সিক্ত নয়নে তার কন্ঠে সুর মেলালেন উপস্থিত আরো অনেকেই।
এ সড়ক দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রং সাইড দিয়ে বাসের চালক দ্রুতগতিতে ছুটছিলেন। তখনই ঘটে যায় এ দুর্ঘটনা। ঘটনাস্থলেই মারা যান বাবুল শিকদারসহ দু’জন। আর সংকটাপন্ন অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এক স্কুল ছাত্রীসহ ৩ জনকে।
বাংলাদেশ সময়: ০২২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৫
আরআই