ঢাকা: সড়ক দুর্ঘটনার নানামুখি সমালোচনার প্রেক্ষিতে মহাসড়কে স্পিড ব্রেকারের পরিবর্তে র্যাম্বল স্পিড বসানোর উদ্যেগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ৩২টি ঝুঁকিপূর্ণ স্পট চিহ্নত করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্যানুযায়ী গত বছর পর্যন্ত এ মহাসড়কে ১১টি ঝুঁকিপূর্ণ স্পটে র্যাম্বল স্পিড বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। আরো ২০টির কাজ চলমান। একটি স্পটে র্যাম্বল স্পিড দিয়ে হবে না। সেখানে আন্ডারপাস লাগবে। বাকীগুলোও যথা সময়ে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ককে একসময় বলা হতো মৃত্যু ফাঁদ। প্রায় সময়ই এই মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ঝড়তো তাজা প্রাণ। সাংবাদিক মিশুক মনির ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রাণ হারানোর পর নড়েচড়ে বসে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মো. ফিরোজ ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, ‘শুধু ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক নয়, সব সড়কেই দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমেছে। আমরা বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে প্রতিটি মহাসড়কে দুর্ঘটনা প্রবণ স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে কাজ করছি। বিশেষ করে মহাসড়কে অতিবাক এলাকা সোজা করা এবং ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলোতে র্যাম্বল স্পিড বসানোয় দুর্ঘটনা অনেক হ্রাস পেয়েছে’।
তিনি বলেন, মহাসড়কে কোনো ভাবেই স্পিড ব্রেকার দেওয়া যাবে না। দুর্ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন নিজেদের খেয়াল খুশিমতো স্পিড ব্রেকার বসিয়ে দেয়। এতে মহাসড়কে গাড়ি চলাচলে অনেক সমস্যা হয়। আমরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের স্পিড ব্রেকার তুলে দিয়েছি, শুধু জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি স্থানের স্পিড ব্রেকার এখনো রয়েছে। এগুলো সরিয়ে দেওয়া হবে।
সওজ’র মানিকগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মহিবুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর, কালামপুর বাসস্ট্যান্ড, বাথুলিয়া বাসস্ট্যান্ড, বড়ঙ্গাইল, মহাদেবপুর, মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের সড়ক, তরা ব্রিজ এলাকা, হেমায়েতপুর, সভারেও র্যাম্বল স্পিড বসানোর কাজ চলছে।
তিনি বলেন, আগামী ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্পটের কাজ শেষ হবে। এগুলো শেষ হলে দুর্ঘটনা আরো কমে যাবে।
সওজ সূত্রে জানা যায়, বুয়েট প্রতিনিধি দল এই ঝুঁকিপূর্ণ স্পট চিহ্নিত করেছে। এসব স্পটে কোথাও রাস্তা প্রসস্ত, কোথাও ডিভাইডার, কোথাও র্যাম্বল স্পিড বসানো হচ্ছে।
সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যাল (বুয়েট) পুর প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. শামসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, স্ট্যান্ড অনুযায়ী মহাসড়কে কোথাও স্পিড ব্রেকার দেওয়া যায় না। স্পিড ব্রেকার দিলে মহাসড়কই দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্পিড ব্রেকার হয় স্লো গতির সড়কে, মহাসড়কে নয়।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনা রোধে মহাসড়কে স্পিড ব্রেকারের পরিবর্তে র্যাম্বল স্পিড দেওয়া বেশি কার্যকরী। মহাসড়কের যেখানেই বাক বা ঝুঁকিপূর্ণ মনে হবে সেখানেই র্যাম্বল স্পিড দিতে হবে। ছোট ছোট করে ৭/৮ টি র্যাম্বল স্পিড দিলে গাড়ী চালানোর সময় চালকরা একটু ঝাকুনি অনুভব করবে, এতে করে তারা সর্তক হবে যে সামনে দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকা। তাই স্পিড ব্রেকারের চাইতে র্যাম্বল স্পিড বেশি কার্যকরী।
এদিকে মহাসড়কের পাশের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা মনে করেন স্পিড ব্রেকার না থাকলে দুর্ঘটনা আরো বাড়বে। তাই তাদের দাবি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিশেষ করে স্কুল কলেজ, হাসপাতাল যেখানে রয়েছে সেখানে যেন স্পিড ব্রেকার দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ের বাথুলিয়া বাজারের ব্যবসায়ী মো. আবু দাউদ বাংলানিউজকে বলেন, বালিথা, বাথুলিয়া বাজার এলাকায় স্পিড ব্রেকার দেওয়ার পর দুর্ঘটনা অনেক কমেছিলো। এখন স্পিড ব্রেকার উঠে যাওয়ার পর পুনরায় ঝুকিপূর্ণ হয়ে পরেছে এই এলাকা। এখানে মহিনী-মোহন উচ্চ বিদ্যালয়, বালিথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এই দুই স্কুলসহ মাদ্রাসা ও মসজিদ পারাপারে প্রতিদিন শতাধিক লোক মৃত্যু ঝুঁকি নিয়েই পার হচ্ছে। এখানে একটি স্পিড ব্রেকার খুবই প্রয়োজন।
ঈদের আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় গাবতলী থেকে শুরু করে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৩০টির মতো স্থানে স্পিড ব্রেকার ছিলো যেগুলো প্রায় নিশ্চিন্ন হয়ে গেছে।
এদিকে দশম জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনে গত ১০ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, সরকারের নানামুখি পদক্ষেপের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৩৮১ টি, ২০১০ সালে ২ হাজার ৮২৭ টি, ২০১১ সালে ২ হাজার ৬৬৭টি, ২০১২ সালে ২ হাজার ৬৩৬টি, ২০১৩ সালে ২ হাজার ২৯টি এবং ২০১৪ সালে ২ হাজার ২৭টি।
এরআগে গত ২৬ নভেম্বর জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে জানানো হয়েছিল জাতীয় মহাসড়কের ২২৭টি দুর্ঘটনা প্রবণ স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। যার ১৪৪টি এলাকার জন্য ১৬৫ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
আর বাকী ১৪৪টি স্থানের জন্য ‘ইমপ্রুভমেন্ট অব রোড সেফটি এট ব্ল্যাক স্পটস ইন ন্যাশনাল হাইওয়েজ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর একনেকে এই প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন হয়েছে। ২০১৬ সালের জুন মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১৫
এসএম/বিএস