পটুয়াখালী: শুকনো মৌসুম আসতে না আসতেই ঢাকা-পটুয়াখালীসহ জেলার অভ্যন্তরীণ ১২টি নৌরুটে নাব্যতা সংকট প্রকট আকার ধারন করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি পয়েন্ট বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
![](files/October2015/October07/patuakhali_pic_9_588508180.jpg)
নৌযানগুলোও তাদের নির্ধারিত সিডিউল রক্ষা করতে পারছেনা। ফলে জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে নৌযানগুলোকে।
পটুয়াখালী নৌ বন্দরের সহকারী উপ-পরিচালক আবদুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে জেলার অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় নদীর ১২টি রুটে ৬৫ ফুটের নিচের ১২টি লঞ্চ নিয়মিতভাবে যাত্রী বহন করছে। এসব রুটগুলো হলো পটুয়াখালী-কোড়ালিয়া ভায়া গলাচিপা, বাবলাতলা বাজার-গলাচিপা, পটুয়াখালী-বাহেরচর ভায়া গলাচিপা, খেপুপাড়া-নিজকাটা, কেশবপুর-পটুয়াখালী, পটুয়াখালী-ভোলা টার্মিনাল ভায়া কালিশুড়ি, কনকদিয়া-পটুয়াখালী, চরমোন্তাজ-গলাচিপা, চরমোন্তাজ-উলানিয়া ভায়া চরকাজল, নিজকাটা-গলাচিপা, উলানিয়া টলারঘাট-গইনখালী এবং কোড়ালিয়া-বোয়ালিয়া স্লুইস গেট।
![](files/October2015/October07/patuakhali_pic_4_584999176.jpg)
এছাড়াও পটুয়াখালী-বগা-চরগরবদি-ফতুল্লা-ঢাকা রুটে চলাচল করছে ডাবল ডেকারের আরো সাত থেকে আটটি যাত্রীবাহী লঞ্চ।
পটুয়াখালী জেলার ইতিহাস থেকে পাওয়া তথ্যমতে, আট মাইল দৈর্ঘ্যের লাউকাঠি নদীতে অন্তত পাঁচটি, ১২ মাইল দৈর্ঘ্যের আন্ধারমানিক নদীতে অন্তত সাতটি, ৩০ মাইল দৈর্ঘ্যের লোহালিয়া নদীতে ২০টি, ৩৫ মাইল দৈর্ঘ্যের তেঁতুলিয়া নদীতে কমপক্ষে ২৫টি ডুবোচর আছে।
![](files/October2015/October07/patuakhali_pic_3_301824450.jpg)
ভূক্তভোগি এমভি বাগেরহাট-২ লঞ্চের মাস্টার সোহরাব বাংলানিউজকে জানান, ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে গলাচিপা থেকে সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে লঞ্চটি। পথিমধ্যে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পটুয়াখালী শহর সংলগ্ন লোহালিয়া নদীর (জৈনকাঠি এলাকার) মোড়ে নাব্যতা সংকটের কারণে লঞ্চটি আটকে যায়। ওই দিন রাত ১টার দিকে জোয়ারের চাপ বৃদ্ধি পেলে লঞ্চটি ছাড়া পায়। এর আগে ঢাকাগামী যাত্রীদের ট্রলারে করে পটুয়াখালীর লঞ্চে উঠিয়ে দেওয়া হয়।
![](files/October2015/October07/patuakhali_pic_8_485161783.jpg)
ঢাকা-পটুয়াখালী রুটে চলাচলরত কুয়াকাটা-১ লঞ্চের মাস্টার মো. ইব্রাহিম বাংলানিউজকে জানান, এ রুটের বিভিন্ন পয়েন্টে নাব্যতা সংকট আর ডুবোচর থাকলেও পটুয়াখালীর অংশে তা মারাত্মকভাবে লঞ্চ চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।
তার মতে, পটুয়াখালী লঞ্চ ঘাটের আশপাশ, লোহালিয়া ও লাউকাঠি নদীর একাধিক স্থান, বগার আগে পালেরডাঙ্গা, ঝিলনা, কবাই, তাপাল কাঠি, শশীর মোড় এলাকায় নাব্যতা সংকট চরম আকার ধারন করছে। এসব স্থানে মাঝে মধ্যে দুই থেকে আড়াই মিটার পর্যন্ত পানি থাকে। এ সময় লঞ্চ চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। যাত্রীদের পোহাতে হয় দুর্ভোগ।
![](files/October2015/October07/patuakhali_pic_6_739418306.jpg)
একই অভিযোগ সুন্দরবন-৫ ও ৬ লঞ্চের মাস্টার নজরুল ও মজিবুর রহমানের।
এদিকে ডুবোচর আর নাব্যতা সংকটের কারণে শুধু লঞ্চ চলাচলই বাধাগ্রস্ত হচ্ছেনা, বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের লেবুখালী ফেরিঘাটে চলাচলরত ফেরিগুলোও। এখানে প্রায়ই ঘটে বিপত্তি। লেবুখালী ফেরিঘাটের উত্তর পাড়ের একাধিক ডুবোচর আর নাব্যতা সংকটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এটা যেন এখন নিয়মিত রুটিনে পরিণত হয়েছে-জানালেন ফেরির ইজারাদার সুমন।
![](files/October2015/October07/patuakhali_pic_10_118780904.jpg)
তার মতে, এখানকার ফেরি চলাচল নির্ভর করে জোয়ারের ওপর। কারণ ভাটার স্রোতে ফেরি চলাচল করতে না পারায় স্বাভাবিক কারণেই ফেরি বন্ধ রাখতে হয় তিন থেকে চার ঘণ্টা। অথচ দেখা যায়, এই সময়টায় সবচেয়ে বেশি গাড়ি ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় থাকে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হয় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কুয়াকাটায় আগত অথবা সেখান থেকে ফেরার পথের হাজারো পর্যটক। আর এ সময় এ্যাম্বুলেন্স বহনকারী রোগীর অবস্থা আরো শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছে।
পটুয়াখালী নৌ বন্দর কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে জানান, জেলার অভ্যন্তরীণ ১১টি পয়েন্টে সাত হাজার আটশ’ মিটার ড্রেজিং অতি জরুরি ভিত্তিতে করার লক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৫
আরএ/এসএস