ঢাকা: প্রায় ১২ বছর ধরে দেশের বাইরে আত্মীয়ের কাছে জিনিসপত্র পাঠাচ্ছেন মিসেস কর্ণেল সালমান। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পার্সেল পাঠানোর জন্য বড় বড় প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠলেও সেদিকে পা বাড়াননি তিনি।
তবে এক যুগ পরে বৃহস্পতিবার সন্তুষ্টির বদলে অসন্তুষ্টিই প্রকাশ করলেন তিনি। নির্দিষ্ট সময় পার হলেও আত্মীয়ের কাছে জিনিসগুলো পৌঁছেনি। দীর্ঘদিন পর ব্যতিক্রম ঘটায় তিনিও অনেকটা অবাক হয়েছেন। তবে সমাধানের পথ পেয়ে খুশি মনেই বাড়ি ফিরলেন।
বৃহস্পতিবার (০৮ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর বনানী পোস্ট অফিসে মিসেস কর্ণেল সালমান বাংলানিউজকে বলেন, আমি খুবই খুশি পোস্ট অফিসের সেবায়। দীর্ঘদিন ধরে সেবা নিলেও কোনো গুরুতর সমস্যায় পড়তে হয়নি। এই প্রথম ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটলো।
এদিকে বেলা তিনটার দিকে বিড়বিড় করে কথা বলতে বলতে গুলশান (এক নম্বর) পোস্ট অফিসের প্রধান ফটক থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন বাড্ডার সাতারকুল এলাকার জাকির হোসেন।
কাছে গিয়ে কথা জিজ্ঞেস করতেই বেরিয়ে এলো তার অসন্তুষ্টির কথা। জাকির হোসেন বলেন, জরুরি একটি চিঠি রেজিস্ট্রি করতে এসেছিলাম। কিন্তু পোস্ট অফিসের পক্ষ থেকে বলা হলো সময় শেষ, তাই আর রেজিস্ট্রি করা যাবে না। অথচ নির্দিষ্ট সময় পাঁচ মিনিটের বেশি পার হয়নি।
![](files/duck1_107467416.jpg)
তিনি বলেন, পোস্ট অফিসের কর্মীদের ব্যবহার ভালো না। তারা গ্রাহকদের কোনো কিছুই বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেন না। মনে করে যে, ‘সেবা নিলে নাও না নিলে না নাও’ তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। কিন্তু একটা সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের এমন ব্যবহার হওয়া উচিত না।
এ বিষয়ে ওই অফিস সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে দুই শিফটে কাজ সম্পাদন করেন তারা। কিছু কাজ আছে যা আড়াইটার মধ্যে করা হয়। এর মধ্যে চিঠি রেজিস্ট্রি করার ক্ষেত্রে আড়াইটা শেষ সময়।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানী, গুলশান, ঢাকা পলিটেকনিকসহ বিভিন্ন পোস্ট অফিস সরেজমিনে ঘুরে পাওয়া গেলো গ্রাহকদের সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির কথা। তবে গ্রাহকবান্ধব সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানালেন গ্রাহকদের সবাই।
অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা গ্রাহকদের দাবি, অনেকেই জরুরি প্রয়োজনে পোস্ট অফিসে আসেন। কিন্তু অফিসের কর্মকর্তারা তা বোঝার চেষ্টাই করেন না। তাদের এমন ভাব যে দুনিয়ার সব কাজ তারাই করেন। এছাড়া তাদের সেবার মানও খুবই ধীর।
তবে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা গ্রাহকরা জানালেন, পোস্ট অফিসের সবচেয়ে বড় দিক হলো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক কম মূল্যে এখানে বিভিন্ন সেবা পাওয়া যায়। অনেক সেবা আছে যা নির্ভেজাল ভাবে পাওয়া যায়। এছাড়া কিছু সেবা আছে যা শুধুমাত্র এখান থেকেই তারা পান।
গুলশান মডেল টাউন পোস্ট অফিসে প্রথমবারের মতো এসেই অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন ব্যবসায়ী নাসরিন। তিনি বলেন, সময়ের দোহাই দিয়ে পোস্ট অফিস থেকে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এরপর আবার তিনি ফিরে গিয়ে পোস্ট মাস্টারের কাছে গিয়ে অনুরোধ করেন। তখন তার কাজটি হয়।
প্রায় আট বছর ধরে ধানমণ্ডি থেকে বনানী পোস্ট অফিসে সঞ্চয়পত্রের সেবা নিচ্ছেন শারমিন বিনতে হুদা। কেমন সেবা পাচ্ছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে এক কথায় উত্তর দিলেন, পোস্ট অফিসের সেবায় তিনি খুবই খুশি।
তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে সেবা নিলেও কোনোদিন অসন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যেতে হয়নি। তাই তিনি বিকল্প কোনো কিছুই ভাবেননি। আর কর্মীদের কাছ থেকে ব্যবহারও ভালো পেয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে পোস্ট অফিসের প্রধান কর্মকর্তাদের বক্তব্য, জনবলসহ নানা সঙ্কটের মধ্যে তারা কাজ করেন। ফলে অনেক সময়েই গ্রাহকের মর্জি মতো সেবা দিতে ব্যর্থ হন তারা।
সরেজমিনে বিভিন্ন পোস্ট অফিস ঘুরে দেখা গেলো, সকাল থেকে বেলা দু’টা পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি অফিসেই গ্রাহকদের অনেক ভিড়। অধিকাংশ গ্রাহকই ব্যবসায়িক, দাফতরিক চিঠি পাঠাতে এসেছেন। তবে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকের সংখ্যাও অনেক বেশি। মোবাইলের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর গ্রাহকের সংখ্যাও রয়েছে চোখে পড়ার মতো। তবে বেলা তিনটার পর থেকে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায় পোস্ট অফিস।
সার্বিক বিষয়ে ডাক বিভাগের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল (দক্ষিণ) ইকবাল মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ থাকতে পারে। তবে গ্রাহকদের কাছে অনুরোধ অভিযোগ থাকলে অবশ্যই যেন লিখিত অথবা মৌখিকভাবে তাদের জানানো হয়। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে ডাক বিভাগের বিভিন্ন গুরুত্বের কথা ভেবে আজ ০৯ অক্টোবর বিশ্বে ডাক দিবস পালিত হবে। তবে বাংলাদেশে আজ ডাক বিভাগের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়নি।
তবে সূত্র জানায়, ডাক বিভাগের মহাপরিচালকসহ কয়েকজন ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা দেশের বাইরে থাকায় কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৫
একে/আরআই