বগুড়া: বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় বিউটি খাতুন (৩০) নামের এক নারীকে গণধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনার প্রায় দেড় মাসের মাথায় পুলিশ এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।
এ ঘটনায় পুলিশ হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীসহ ৫জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো পরিকল্পনাকারী উপজেলার রনবাঘা গ্রামের আসলাম (৩৫), অর্থের যোগানদাতা আব্দুল কুদ্দুস (৫০), তার ছেলে উজ্জল (২৫), সিডি দোকানদার রনি (২২) ও বাচ্চু (৫০)।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আসলাম ও বাচ্চু বুধবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু রায়হানের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া আব্দুল কুদ্দুস ও তার ছেলে উজ্জল তিনদিনের পুলিশি রিমান্ডে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৫টায় জেলার মিডিয়া সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি বি-সার্কেল) গাজিউর রহমান বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, গত ২৪আগস্ট নন্দীগ্রাম উপজেলার কৈডালা হয়ে উত্তর সৈয়দপুর গ্রামে যাওয়ার সড়কের পাশ থেকে একজন অজ্ঞাতনামা যুবতীর বিবস্ত্র মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
লোমহর্ষক এই ঘটনার বর্ণনা করতে এএসপি গাজিউর রহমান জানান, উত্তর সৈয়দপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে একই গ্রামের দুদু মিয়া ও আশরাফদের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে আব্দুল কুদ্দুস তার ভাগ্নি জামাই আসলামের শরণাপন্ন হন। দুই লাখ টাকায় বিউটিকে খুনসহ প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর চুক্তি হয়।
চুক্তি অনুযায়ী আসলাম একাধিক ভাড়াটে খুনির সঙ্গে যোগাযোগ করে। যুক্ত হয় কুখ্যাত খুনি বাচ্চু। খুনের জন্য তাকে একটি বাইক কিনে দেওয়া হয়। বাচ্চু শহরের সূত্রাপুরের কলগার্ল বিউটির সঙ্গে যোগাযোগ করে।
এরপর নাটোরের সিংড়া উপজেলার জামতলী এলাকায় আসলাম, বাচ্চু, রনি, কুদ্দুসসহ আরও চারজন সর্বশেষ বৈঠকে বসে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, হত্যা করা হবে একজনকে আর দায় চাপানো দুদু ও আশরাফ গংদের ওপর।
বাচ্চু ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে দেহ ব্যবসার নাম করে কলগার্ল বিউটিকে নিয়ে ২৩ আগস্ট সন্ধ্যায় রনবাঘা যায়। সেখানে পরে তারা পুলিশের চোখে ধুলো দিতে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে বিউটিকে দিয়ে আফছার ও দুদুর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো, এই হত্যাকাণ্ডের পর কললিস্টের সূত্র ধরে পুলিশ যেন আশরাফ ও দুদু গংদের গ্রেফতার করে তা নিশ্চিত করা। এতে আব্দুল কুদ্দুসের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে ঝামেলা করার কেউ থাকবে না।
পরিকল্পনা অনুযায়ী এভাবে বিউটিকে দিয়ে আফছারের সঙ্গে কয়েক দফা ফোনে কথা বলানো হয়। এরপর তারা রাত এগারোটার দিকে বিউটিকে কৈডালা ও উত্তর সৈয়দপুর গ্রামের সড়কের পাশে নিয়ে যায়। এ সময় আব্দুল কুদ্দুস ও তার ছেলে উজ্জল চলে যায়।
এরপর তারা বিউটিকে রাত ৩টা পর্যন্ত ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে বিউটি নিস্তেজ হয়ে পড়লে তারা চাঁদর দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তাকে হত্যা করে। পরে তার মৃতদেহ এই স্থানে ফেলে রেখে মোবাইলসহ ব্যাগটি দৃশ্যমান জায়গায় রেখে চলে যায়।
জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আসাদুজ্জামানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নন্দীগ্রাম থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ গত কয়েকদিন ধরে টানা অভিযান চালিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে।
বাংলাদেশ সময়: ০১১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৫
এমবিএইচ/আরআই