ফেনী: দিনক্ষণ গোণা শুরু হয়ে গেছে। এখন অপেক্ষা।
বছর ঘুরে আবার দুর্গতিনাশিনী দশভূজা দেবী দুর্গা আসছেন আমাদের মাঝে। আসছে ১৯ অক্টোবর মহা ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে দেবী আগমনের ঢামাঢোল। এ উপলক্ষ্যে সারাদেশের ন্যায় ফেনী শহরসহ জেলার সবকটি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের পূজা মণ্ডপগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রতিমা নির্মাণ ও মন্দির সাজসজ্জায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কারিগররা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও পূজা উদযাপন পরিষদ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেনীতে প্রায় চার লাখ পূণ্যার্থী জেলার ১৩৮টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় দূর্গাৎসব পালন করবে। ইতোমধ্যে পূজা উদযাপন করতে পরিচালনা কমিটি, পূজাঙ্গন প্রস্তুতি ও নিরাপত্তার নানা প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। ওই সূত্র আরও জানায়, সদর উপজেলায় ৫৪টি, দাগনভূঞায় ১৬টি, সোনাগাজীতে ২২টি, ছাগলনাইয়ায় ৫টি, ফুলগাজীতে ৩৫টি ও পরশুরামে ৬টি পূজা মণ্ডপে উৎসব পালিত হবে। আগামী ১৯ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর চার দিনব্যাপী এ উৎসবে নিরবিচ্ছিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে।
উৎসবের প্রথম দিন দেবীর আগমন বোধন ষষ্ঠী পূজা, দ্বিতীয় দিন মহাসপ্তমী, তৃতীয় দিন মহাঅষ্টমী, চতুর্থ দিন মহানবমী ও সন্ধি পূজা এবং শেষ দিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দশমী বিহীত পূজা উদযাপিত হবে।
জানা যায়, ফেনী শহরের জগন্নাথ বাড়ি কমপ্লেক্স, গুরুচক্র মন্দির, কালী বাড়ি মন্দির ঘুরে দেখা গেছে এখানকার মণ্ডপের জন্য প্রতিমা নির্মাণ, সাজ-সজ্জার কাজ শেষ পর্যায়ে।
জগন্নাথ বাড়ি কমপ্লেক্স, গুরুচক্র মন্দির, কালী বাড়ি মন্দির ছাড়াও রামকৃষ্ণ মিশন ও বাঁশপাড়া কোয়ার্টার, পরশুরামে সাতঞ্জী বাড়ি মন্দির, ফুলগাজীর জগন্নাথ বাড়ি মন্দির, ছাগলনাইয়া ও দাগনভূঞার কেন্দ্রীয় মন্দিরের বেশি সংখ্যক পুণ্যার্থীর আগমন ঘটে।
সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লিটন চন্দ্র সাহা বাংলানিউজকে বলেন, মন্দির ছাড়াও সবকটি পূজা মণ্ডপে পুষ্পমাল্য ও বিলপত্রের মাধ্যমে পুষ্পাঞ্জলী, ধূপ ও কুশীর মাধ্যমে প্রতিমা আরতি, অষ্টমী ও নবমীতে অন্ন প্রসাদ ও পুরোহিত দ্বারা চন্ডিপাঠসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পূজা উদযাপন করা হয়।
বিগত প্রায় একমাস ধরে শিল্পীরা নান্দনিক ছোঁয়ায় প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। ফেনীতে প্রতিমা তৈরির শিল্পী না থাকায় ফরিদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম থেকে শিল্পী এনে জেলার প্রতিটি পূজা মণ্ডপে প্রতিমা তৈরি করা হয়। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে প্রতিমা নির্মাণে প্রকারভেদে ১৫ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা শিল্পীদের দিতে হয়।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রাজীব খগেশ দত্ত বাংলানিউজকে জানান, শারদীয় দূর্গাৎসবের কাজ পুরোদমে চলছে। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
কালী বাড়ী মন্দিরে সহযোগী তিন শিল্পীকে নিয়ে কাজ করছিলেন ফরিদপুরের প্রতিমাশিল্পী কানাই পাল। যেখানে তিনি কাজ করছিলেন, তার পাশেই সারি করে রাখা ছিল দুর্গাপ্রতিমা। এবার জেলার আটটি পূজামণ্ডপে যাবে তাঁর তৈরি প্রতিমা। ইতিমধ্যে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করেছেন। কেবল বাকি আছে রঙের কাজ। প্রতিমার গায়ে তুলির আঁচড় পড়লেই বাজবে পূজার ঘণ্টা।
জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্রশীল বাংলানিউজকে বলেন, ২৩ অক্টোবর শহরের কালিপাল এলাকায় বিসর্জন ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। এ সময় প্রতি বছরের মতো এবারও হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটবে বলে তিনি আশা করেন।
এদিকে, পূজা উপলক্ষে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে ফেনী জেলা পুলিশ। ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শামসুল আলম সরকার বাংলানিউজকে বলেন, আসন্ন দুর্গা পূজা যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হতে পারে সে জন্য পুলিশ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেবে। শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপগুলোতে পুলিশ ও আনসার ভিডিপি মোতায়েন থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৫
আরআই