খুলনা: নদী ও নৌকাকে ঘিরে সূচিত বাঙালির নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নৌকা বাইচ। নদীমাতৃক এদেশে নৌকাবাইচ লোকায়ত গ্রামবাংলার লোকসংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বিলুপ্তপ্রায় প্রাচীন এই নৌকাবাইচের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে শনিবার (১০ অক্টোবর) খুলনার রূপসা নদীতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১০ম বারের মতো নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা ২০১৫।
দেশের বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোন এই আয়োজনের স্পন্সর। গ্রামীণফোণ প্রতিযোগিতা চলাকালীন রেখেছে সেলফি কনটেস্ট ।
নগর সামাজিক ও সংস্কৃতিক কেন্দ্রের আয়োজনে শনিবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রূপসা নদীর ১নং কাষ্টম ঘাট থেকে খান জাহান আলী রা. (রূপসা সেতু) পর্যন্ত এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
গ্রামীণফোণ প্রতিযোগিতা চলাকালীন সেলফি কনটেস্ট রেখে দর্শনার্থীদের জন্য বাড়তি উৎসাহ এনে দিয়েছে। পছন্দের সেলফি তুলে NSSK.KHULNA ফেসবুক পেজে রোববার রাত ১১টার মধ্যে আপলোড করতে হবে। নৌকাবাইচকে উপজীব্য ধরে যেকোন স্থান থেকে তোলা সেলফি এ প্রতিযোগিতার জন্য বিবেচিত হবে। সেরা ১০টি সেলফি আপলোডকারীকে পুরস্কৃত করা হবে।
নগর সামাজিক ও সংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি মোল্লা মারুফ রশীদ বাংলানিউজকে জানান, গ্রামীণফোনের সহায়তায় দশম নৌকাবাইচের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নদীর দু’পাড়ে লাখো মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি প্রতিযোগীদের উৎসাহিত করবে। নগর জীবনের ব্যস্ততা, কোলাহল, ক্লেদ, পঙ্কিলতা, নানা টানাপোড়েন ভুলে ক্ষণিকের উৎসবের আমেজে মাতবে খুলনাবাসী।
তিনি জানান, নৌকা বাইচ শুরু হওয়ার আগে দুই প্রান্তে কার্গো, বার্জসহ অন্য জলযান চলাচল বন্ধ থাকবে। বাইচ চলাকালীন ব্রিজের উপরে নারী ও শিশু দর্শনার্থী ছাড়া পুরুষ উঠতে পারবেন না। সেতুর পশ্চিম পাশে কোনো গাড়ি পার্কিং করা যাবে না। দুর্ঘটনা এড়াতে নদীর দুই পাড়ের পল্টুনে যাতে কোনো দর্শক না ওঠে সেদিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এ ছাড়া নৌকা বাইচ চলাকালে রূপসা সেতুতে যানজট এড়ানোর লক্ষ্যে গল্লামারী-বটিয়াঘাটা রোড হতে রূপসা সেতু পর্যন্ত এবং রূপসা ফেরিঘাট হতে রূপসা সেতু পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
আয়োজক সূত্রে জানা যায়, এবারের প্রতিযোগিতায় ৬৫ হাত থেকে ৯৬ হাত দৈর্ঘ্যর বড় নৌকা গ্রুপে অংশ নিচ্ছে ১৮টি নৌকা। ছোট নৌকা গ্রুপে অংশ নিচ্ছে ৮টি নৌকা যার দৈর্ঘ্য ৩৯ থেকে ৫০ হাত। এসব নৌকা আসছে সাতক্ষীরা, তালা, পাইকগাছা, কয়রা, ডুমুরিয়া, তেরখাদা, নড়াইল, কালিয়া, মাগুরা, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও খুলনা থেকে। বিজয়ী বড় গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন দলকে ১লাখ, প্রথম রানার আপ ৬০হাজার ও দ্বিতীয় রানার আপ ৩০হাজার টাকা এবং ছোট গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন ৫০হাজার, প্রথম রানার আপ ৩০হাজার ও দ্বিতীয় রানার আপকে ২০হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।
সন্ধ্যা ৭টায় রূপসা সেতু চত্বরের পশ্চিম পাড়ে পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে দেশের প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী আঁখি আলমগীরসহ স্থানীয় জনপ্রিয় শিল্পীরা অংশ নেবেন।
আয়োজনের প্রধান সমন্বয়কারী খুলনা জেলা প্রশাসক মো. মোস্তফা কামাল। উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন এসএম মোস্তফা রশিদী সুজা এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন মো. মিজানুর রহমান মিজান এমপি, কেসিসি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি, বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুস সামাদ, ডিআইজি এস.এম মনির-উজ-জামান বিপিএম, জেলা পরিষদ প্রশাসক শেখ হারুনুর রশীদ, জেলা প্রশাসক মো. মোস্তফা কামাল, পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান, বিপিএম, গ্রামীণফোনের হেড অফ রিজিওনাল সেল্স-খুলনা এস.এম সাজ্জাদ হোসেন ও বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৫
এমআরএম/বিএস