ঢাকা: অক্টোবরের মধ্যে রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের ৪৩টি স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নিয়েছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক।
ইতোমধ্যে ১০টি স্থানে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।
নির্বাচিত হয়েই ময়লা ফেলার জন্য ওয়ার্ডবাসীর মধ্যে বিনামূল্যে প্লাস্টিকের ময়লার ঝুঁড়ি ও পলিথিন ব্যাগ দিয়ে এলাকাবাসীর নজরে আসেন তরুণ এ কাউন্সিলর। ওয়ার্ডটিকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে উদ্যোগটি গ্রহণ করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য বিভাগের এই সদস্য।
![](files/hasibur1_375879435.jpg)
২৬ নম্বর ওয়ার্ডের রাস্তা ঘেঁষে গড়ে ওঠা চা, ফল ও খাবারের দোকানে ময়লা ফেলতে দেওয়া হয় প্লাস্টিকের ঝুঁড়ি। আর বাসা-বাড়ির ময়লা ফেলতে দেওয়া হয় পলিথিন ব্যাগ। এখনও বাসা-বাড়িতে নিয়মিত বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে পলিথিন। প্রতিমাসে এক একটি বাসায় দেওয়া হচ্ছে ১৫টি করে পলিথিন ব্যাগ।
শনিবার (১০ অক্টোবর) লালবাগে অবস্থিত ২৬ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যলয়ে গিয়েও বাসা-বাড়িতে পলিথিন ব্যাগ সরবরাহ কার্যক্রমের দৃশ্য দেখা যায়। সেখানে কয়েকজন যুবক বাসা-বাড়িতে পলিথিন ব্যাগ পৌঁছে দিতে বান্ডিল (একটি বান্ডিলে ১৫টি পলিথিন) করতে ব্যস্ত ছিলেন।
এদিকে, ওয়ার্ডটিতে ঢুকে পলাশী মোড়ের দোকানগুলোতে তাকালেই চোখে পড়বে বিনামূল্য কাউন্সিলরের দেওয়া ময়লার ঝুঁড়ি। অনেকটা নিয়ম করেই সেই ঝুঁড়িতে খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ ফেলছেন দোকানী ও ক্রেতারা।
![](files/hasibur2_184671838.jpg)
পলাশী মোড় ছাড়াও ওয়ার্ডটির বাকি স্থানগুলোতে ময়লা ফেলতে প্লাস্টিকের ঝুঁড়ি দেওয়া হয়। তবে পলাশী মোড় ছাড়া ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের আর কোথাও কাউন্সিলরের দেওয়া সেই ঝুঁড়ির দেখা মেলেনি। তারপরও ওয়ার্ডটি রাজধানীর অন্য ওয়ার্ডের তুলনায় বেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন দেখা যায়।
এ বিষয়ে ওয়ার্ডটির ৩৪ জন দোকানদারের সঙ্গে কথা হয়েছে বাংলানিউজের। এরমধ্যে ৯ জন জানিয়েছেন তারা কাউন্সিলরের দেওয়া ঝুঁড়ি পেয়েছিলেন। কিন্তু রাতের আধারে তা চুরি হয়ে গেছে।
বাকি ২৫ জন জানিয়েছেন তারা ঝুঁড়ি পাননি। এর মধ্যে ১১ জন জানিয়েছেন তারা নতুন দোকান দিয়েছেন। বাকিরা জানিয়েছেন যেদিন ঝুঁড়ি দেওয়া হয় সেদিন তারা দোকানে ছিলেন না।
জানতে চাইলে কাউন্সিলর কার্যলয়ের সামনের রাস্তার চায়ের দোকানদার নাজিম বলেন, ‘মানিক ভাই আমগোরে ময়লা ফালানোর লাইগা ঝুঁড়ি দিছিলো। মাগার (কিন্তু) রাইতের বেলা চুরি হইয়া গেছে। অহন নিজ টেকা দিয়া ঝুঁড়ি কিননা লমু’।
![](files/hasibur3_234895321.jpg)
পলাশী মোড়ের খাবার দোকানদার ওমর বলেন, যেখানে-সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলতে কাউন্সিলর বিনামূল্যে প্লাস্টিকের ঝুঁড়ি দিয়েছেন।
আমরা সারাদিন সেই ঝুড়িতেই ময়লা রাখি। সকালে দোকান খোলার আগেই পরিচ্ছন্নকর্মীরা ময়লা নিয়ে যান।
যোগাযোগ করা হলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মানিক বাংলানিউজকে বলেন, রাজধানীর অন্য ওয়ার্ডগুলোর থেকে আমি ২৬ নম্বর ওয়ার্ডকে ব্যতিক্রম দেখতে চাই। এটিকে আমি রাজধানীর শ্রেষ্ঠ ওয়ার্ড হিসেবে পরিচিত করতে চাই।
এ লক্ষেই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বর্জ্য সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাসা-বাড়িতে বিনামূল্যে ময়লা ফেলতে পলিথিন ব্যাগ দেওয়া হচ্ছে।
দোকানে দোকানে ময়লা ফেলার ঝুঁড়ি বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। কোরবানির ঈদের সময় ময়লা ফেলতে বস্তা দেওয়া হয়েছিলো। ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ময়লা যাতে নির্ধারিত স্থানে ফেলা হয় সেজন্য আমার কর্মীরা নিয়মিত মনিটরিং করছেন ও মাইকিং করা হচ্ছে।
![](files/hasibur4_807081313.jpg)
বাংলানিউজের পক্ষ থেকে ময়লার ঝুঁড়ি চুরি হয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মানিক বলেন, দোকানদারদের সচেতনতার অভাবে এটি হয়েছে। আমরা সারাদিন ময়লা ঝুঁড়িতে রেখে রাতের বেলায় দোকানের সামনে ঢেলে রেখে ঝুঁড়ি দোকানের ভিতরে রাখতে বলেছিলাম। আমাদের কর্মীরা ভোর ৩টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যেই তা পরিস্কার করে দিবে। কিন্তু দোকানদাররা তা না করে সারারাত ঝুঁড়ি বাইরে ফেলে রাখছেন।
এ সময় তিনি বলেন, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডকে সিসি ক্যামেরার মধ্যে আনার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধ করতে সিসি ক্যামেরা বসানো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ জন্য নিজ উদ্যোগে ও নিজ খরচে ওয়ার্ডের ৪৩টি স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানোর কার্যক্রম চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে ১০টি স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাকি স্থানগুলোতে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনকে দিয়ে উদ্বোধন করা হবে। আমার ইচ্ছা আছে ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপস্থিত করা, বলেন হাসিবুর রহমান মানিক।
ময়লা ফেলতে বিনামূল্যে পলিথিন ব্যাগ ও ঝুঁড়ি দিয়ে কি ধরনের সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে মানিক বলেন, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভালো সহযোগিতা পাচ্ছি। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। কলোনিগুলোকে তারা ময়লার স্তূপে পরিণত করেছে। কলোনির প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারিরা আমাদের পরিচ্ছন্ন কাজে নানাভাবে অসহযোগিতা করছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৫
এএসএস/পিসি