ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

বর্গাচাষিরা উপেক্ষিত ও বঞ্চিত

আবু খালিদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৫
বর্গাচাষিরা উপেক্ষিত ও বঞ্চিত ফাইল ফটো

ঢাকা: জমির মালিকরা উঁচু ও উর্বর জমি নিজেদের জন্য রাখেন। আর নীচু এবং কম উর্বরের জমি জোটে বর্গাচাষিদের কপালে।

ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে লোকসানটা বর্গাচাষিদের পকেট থেকেই যায়।
 
এছাড়া এসব চাষি ব্যাংকে গেলে ঋণের পরিবর্তে জোটে হয়রানি, আর বাকিতে কৃষি উপকরণ কিনলে দিতে হয় বেশি দাম।
 
এরকম নানা সমস্যা মোকাবেলা করেই আবাদ করছেন দেশের বর্গাচাষিরা। বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা। দেশের কৃষি আবাদে অগ্রণী ভূমিকা রাখা এই বর্গচাষিরা উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছেন।
 
উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ঘুরে ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেলো বর্গাচাষিদের এমন শোচনীয় চিত্র। কৃষি সংশ্লিষ্টদের দাবি, দেশে যে কোনো সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মধ্যে প্রান্তিক ও বর্গা চাষির সংখ্যাই বেশি।
 
গত সেপ্টেম্বর মাসে বাংলানিউজের সরেজমিনে রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নাটোর জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে জানা যায়, বছরের পর বছর ধরে বর্গাচাষিদের বঞ্চিত হওয়ার কথা।
 
রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারী এলাকায় প্রবেশ করতেই দেখা গেলো কয়েকজন বর্গচাষি মন খারাপ করে বসে আছেন।
 
এদের মধ্যে আশরাফুল, আফসার আলী, আতাউর রহমানসহ কয়েকজন বর্গাচাষি জানান, অতিবৃষ্টিতে এ অঞ্চলে রোপা আমন, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যা ক্ষতি তাদেরই হয়েছে। মালিকদের জমি উঁচু হওয়ায় দ্রুত পানি নেমে গেছে।
 
প্রায় ১২ বছর ধরে বর্গাচাষি হিসেবে ধানের আবাদ করছেন আব্দুল কাদের। তিনি হতাশ কণ্ঠে বলেন, তাদের কথা কেউ ভাবে না। এই জমির ধান দিয়েই তার পরিবারের খোরাক মেটে। কিন্তু এবার সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন তারা খাবে কী? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
 
কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার বুড়াগাড়ি ইউনিয়নের ফুলবাড়ি চরে প্রায় এক একর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে বর্গাচাষি এরশাদের। ক্ষতির ধকল কাটিয়ে উঠতে না পারায় ধানের জমি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তিনি।
 
এই চাষি জানান, যা ক্ষতি তারই হয়েছে। ধানের ফলন হলে কিন্তু জমির মালিক ঠিকই পেতেন। অথচ ক্ষতির অংশীদার কোনোভাবেই হবে না মালিক। সহযোগিতা পেলে দ্বিতীয় বারের মতো ধান লাগিয়ে অন্তত খোরাকটা যোগাড় করতে পারতেন।

এসময় তিনি ব্যাংক ঋণের সুবিধা নিতে গিয়ে পাননি বলে জানান।
 
বর্গাচাষিদের অভিযোগ, জমির মালিকরা তাদের সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করেন। কোনো বিষয়ে সহযোগিতা করেন জমিওয়ালারা। এছাড়া অনেক সময়ে জমির মালিকরা একটি ফসল করার পর জমি নিয়ে নেয়। এ সময়ে বর্গাচাষিদের কোনো কথাই শোনা হয় না।
 
তাদের জন্য কী কী সুযোগ সুবিধা আছে, তার খোঁজখবরও কৃষি কর্মকর্তারা দেন না। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকাতেও তাদের নাম থাকে না।
 
এসব চাষির দাবি, সরকারের পক্ষ থেকে সঠিক তদারকি থাকলে হয়তোবা তারা কিছুটা সুবিধা পেতেন।
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কৃষিবিদ ও কর্মকর্তারা বলেন, বর্গাচাষিরা যে উপেক্ষিত তার বড় প্রমাণ দেশে মোট বর্গা চাষির সংখ্যা নির্ণয় ও তাদের জীবন-জীবিকার ওপর কোনো গবেষণা ও ভালো পদক্ষেপ নেই। দুই একটি প্রকল্পের মাধ্যমে দায়সারাভাবে কাজ করা হয়।
 
অভিযোগ রয়েছে, সরকারিভাবে বর্গাচাষিদের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও মাঠ পর্যায়ে তদারকির অভাবে সেই সেবাও জোটে না তাদের।
 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, সারাদেশে দুই কোটি ২৬ লাখ কৃষি পরিবার আছে। এদের মধ্যে বড় চাষির সংখ্যা শতকরা সাত ভাগ। মাঝারির সংখ্যা ২০ ভাগ। আর তৃণমূল, ভূমিহীন, প্রান্তিক ও বর্গাচাষির সংখ্যা ৭০ ভাগের বেশি।
 
সার্বিক বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ হামিদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দেশের কৃষি খাতে যে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বইছে এতে অন্যতম অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন প্রান্তিক ও বর্গাচাষিরা।
 
তিনি জানান, অতীতে বর্গাচাষিদের নিয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ঋণ ও ভর্তুকি সুবিধা। তবে সংখ্যার দিক দিয়ে তা হয়তোবা যথেষ্ট না।  
 
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, যদি কোনো বর্গাচাষি তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকেন তাহলে যেনো কাছের কোনো কৃষি অফিসে জানায়। যদি স্থানীয় কৃষি অফিস পদক্ষেপ না নেয় তবে প্রধান অফিসে জানালে দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৫
একে/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।