ঢাকা: রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনকে (ডিএনসিসি) ‘গ্রিন ঢাকা’ ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে (ডিএসসিসি) ‘ক্লিন ঢাকা’ করার অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে ঢাকা থেকে সব ধরনের অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এ অভিযান সম্পন্ন হবে বলে দুই সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এর পর সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় নগরীর সৌন্দর্য বর্ধন করবে এমন নির্দিষ্ট সংখ্যক বিলবোর্ড স্থাপনের পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজও এগিয়ে চলছে বলে কর্মকর্তারা জানান।
দুই সিটি মেয়রের নির্বাচনী অন্যতম ওয়াদা ‘গ্রীন’ ও ‘ক্লিন’ ঢাকা। এই লক্ষে রাজধানীর আকাশ থেকে সব ধরনের অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদের উদ্যোগ দেওয়া হয়। সেই লক্ষে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে নগরীর সব ধরনের বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে।
সিটি করপোরেশনের মতে, দুই সিটি করপোরেশন থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত বিলবো্র্ডের চেয়ে অবৈধ বিলবোর্ডের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। যত্রতত্র ও অপরিকল্পিতভাবে সড়কের উপর, ভবনের ছাদে, দেয়ালে, মাঠ ও পার্কের পাশে, বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ড স্থাপনের ফলে সৌন্দর্য নষ্ট ও ঝুঁকিপূর্ণ নগরীতে পরিণত হয়েছে ঢাকা শহর।
এ কারণে অবৈধ ও অপরিকল্পিত সব ধরনের বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হচ্ছে দাবি করে সিটি করপোরেশন থেকে বলা হচ্ছে, নতুন করে বিলবোর্ড স্থাপনে নীতিমালা তৈরি করতে একটি নাগরিক কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, কিছু দিনের মধ্যে খসড়া সেই নীতিমালা সিটি করপোরেশনে জমা দেওয়া হবে।
তবে বিলবোর্ড ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশে বিলবোর্ড আজ একটি শিল্পে রূপান্তরিত হয়েছে। এতে হাজার হাজার কর্মী নিয়োজিত থাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তাই এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা দরকার। সিটি করপোরেশনও এই খাত থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে।
ইতোমধ্যে নগরীতে উচ্ছেদের মুখে পড়া বিভিন্ন বিলবোর্ডে কালো রঙ এর উপরে এই শিল্পকে বাঁচানোর দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিভিন্নভাবে আবেদন জানাতে দেখা গেছে। আবার বিলবোর্ড ব্যবসায়ীরাও বেশ কিছু বিলবোর্ড নিজেদের উদ্যোগে উচ্ছেদ করছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
দুই সিটি করপোরেশনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির অনুমোদিত বিভিন্ন বিলবোর্ড, ইউনিপোল, টি-সাইন, মেগা সাইন, পরিচিতিমূলত ওভারহেড রয়েছে ২ হাজার ৬০০টির বেশি। এর মধ্যে ডিএনসিসিতে রয়েছে ১ হাজার ৯০০টিরও বেশি ও ডিএসসিসিতে রয়েছে প্রায় ৭০০টি বিভিন্ন বিলবোর্ড ও ইউনিপোলসহ অন্যান্য বিজ্ঞাপন। এসব বিলবোর্ডের মেয়াদ গত ৩০ জুন শেষ হলেও নতুন করে আর নবায়ন করতে দেওয়া হয়নি।
তবে রাজধানীতে মোট কতটি অবৈধ বিলবোর্ড রয়েছে এর কোনো সুর্নিদিষ্ট হিসাব সিটি করপোরেশনের কাছে না থাকলে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যানে এ সংখ্যা ১৮ হাজারের বেশি বলে জানা যায়।
কোনো ধরনের নীতিমালা না মেনে অবৈধভাবে বিভিন্ন ভবন ও সড়কে ঝুঁকিপূর্ণভাবে গড়ে তোলা হয়েছে এসব বিলবোর্ড।
ডিএনসিসি’র বিলবোর্ড সংক্রান্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন বিপন কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, বিলবোর্ড মালিকদেরকে তাদের অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিলবোর্ড সরিয়ে নিতে একাধিকবার সময় দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা সেগুলো সরায়নি। এজন্য সিটি করপোরেশন থেকেই সব অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
নিয়মিতভাবে এ অভিযান অব্যাহত আছে। প্রতিনিয়ত ২০/৩০টি করে বিলবোর্ড উচ্ছেদ হচ্ছে। মোট বিলবোর্ডের মধ্যে ৪০ শতাংশের মতো উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে সিটি করপোরেশনের বৈধ বিলবোর্ডগুলো একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে আনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি একটি নীতিমালার মাধ্যমে নির্ধারণ করবে নগরীর কোথায় কতটি ও কী ধরনের বিলবোর্ড স্থাপন করা যায়। কিছু দিনের মধ্যে খসড়া নীতিমালা পাওয়া যাবে বলেও ক্যাপ্টেন বিপন কুমার জানিয়েছেন।
আউটডোর এডভারটাইজিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ বলেন, অবৈধ বিলবোর্ড সরানোর জন্য সিটি করপোরেশন থেকে আমাদের বলা হয়েছিল। এছাড়া বৈধ বিলবোর্ড ও ইউনিপোলের বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়নে যৌথ আলোচনার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের সাথে আলোচনা না করে দুই সিটি করপোরেশন একতরফাভাবে শর্ট নোটিশের মাধ্যমে বিলবোর্ড উচ্ছেদ শুরু করেছে।
তিনি বলেন, বিলবোর্ড ও ইউনিপোল একটি প্রতিষ্ঠিত শিল্প। নগরীর বিভিন্ন জায়গার সিটি করপোরেশনের অনুমোদন নিয়ে বিলবোর্ড স্থাপন ও নির্ধারিত ট্যাক্স পরিশোধ করা হচ্ছে। এতে হাজার হাজার লোক জড়িত। এভাবে উচ্ছেদের মাধ্যমে একটি পেশাজীবী সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ডিএসসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বাংলানিউজকে বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের মতো দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার সব ধরনের বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আগামী দুই মাসের মধ্যে এ অভিযান শেষ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, উন্নত দেশের মতো নির্দিষ্ট এলাকায় ডিজিটাল বিলবোর্ড স্থাপনের মাধ্যমে নগরীর সৌন্দর্য বর্ধন করাই হবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৫
টিএইচ/জেডএম