ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

শিক্ষকের বর্বরতায় মৃত্যু যন্ত্রণায় মাদরাসা শিক্ষার্থী

মু. রিগান উদ্দিন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৫
শিক্ষকের বর্বরতায় মৃত্যু যন্ত্রণায় মাদরাসা শিক্ষার্থী ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মিরসরাই (চট্টগ্রাম): মাদরাসা শিক্ষকের নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নের হাবিলদারবাসা এলাকার রশীদিয়া আমজাদুল উলুম (কওমি) মাদরাসার এক শিক্ষার্থী।

গত সোমবার (৫ অক্টোবর) সকাল ১১টায় মাদরাসাটিতে রান্না-বান্নার কাজ করতে গিয়ে পুড়ে দগ্ধ হয় ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ (১০) নামে ওই মাদরাসা ছাত্র।



ইব্রাহিমের বাড়ি নোয়াখালী জেলার লক্ষ্মীপুর উপজেলার পুকুরদিয়া গ্রামে। মিরসরাইয়ের পাশ্ববর্তী উপজেলা ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার জয়পুর পূর্বজোয়ার গ্রামে মামীর তত্ত্বাবধানে থাকে ইব্রাহিম।

জানা যায়, এ ঘটনা চাপা দিতে কর্তৃপক্ষ বিনা চিকিৎসায় ছয়দিন মাদরাসার একটি কক্ষে তাকে আটকে রাখে। পরে শনিবার (১০ অক্টোবর) সকালে সুযোগ পেয়ে মাদরাসা ছেড়ে পালিয়ে পরিবারের কাছে চলে যায় ইব্রাহিম। শনিবার দুপুরের দিকে পরিবারের লোকজন দগ্ধ ইব্রাহিমকে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মাস্তাননগর হাসপাতাল ভর্তি করে।

দগ্ধশিশু ইব্রাহিমের মা বিবি আয়েশা অভিযোগ করেন, মাদরাসা সুপার সবসময় তার ছেলেকে দিয়ে রান্না-বান্না, লাকড়ি কাটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজকর্ম করাতেন। তিন মাস আগেও লাকড়ি কাটতে গিয়ে ইব্রাহিমের পা কেটে যায়।

আয়েশা বলেন, ওরা শিক্ষক নয়, পাষণ্ড। আমার ছেলেটা গরম তেলে পুড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে অথচ হাসপাতালে না নিয়ে ছয়দিন ধরে মাদরাসায় আটকে রেখেছে। আমি তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইব্রাহিম সাংবাদিকদের জানায়, মাদরাসা সুপার ইসমাঈল এবং অন্যান্য শিক্ষকরা ছোট ছোট ছেলেদের দিয়ে রান্না-বান্নার কাজ করায়। সোমবার আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর সে যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে বাড়ি আসতে চাইলেও তাকে আসতে দেয়নি। বাড়ির কাউকে এ ব্যাপারে কিছুই জানায়নি মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। পরে ইব্রাহিম সুযোগ পেয়ে মাদরাসা থেকে পালিয়ে আসে।

মাস্তাননগর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক নিবেদিতা ঘোষ জানান, গরম তেলে ইব্রাহিমের শরীরের ৯ শতাংশ পুড়ে গেছে। দুর্ঘটনার ছয়দিন পর্যন্ত চিকিৎসা না পাওয়ায় তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া গেলে এতটা ক্ষতি হতো না।

এ বিষয়ে জোরারগঞ্জ থানার জ্যেষ্ঠ উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিপুল চন্দ্র দেবনাথ জানান, শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে দ্রুত তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে বেশ কয়েকবার মাদরাসা সুপার মোহাম্মদ ইসমাঈলের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে সাংবাদিক পরিচয় জানার পর মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২১০৫
এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।