ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

কূটনৈতিক পাড়ায় রাতভর পুলিশের সতর্ক তল্লাশি

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৫
কূটনৈতিক পাড়ায় রাতভর পুলিশের সতর্ক তল্লাশি ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: কূটনৈতিক পাড়ায় রাতভর তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। রাতের তল্লাশিতে দিনের চেয়ে বেশি সতর্কতা লক্ষ্য করা গেছে।

ঢাকায় ইতালীয় ও রংপুরে জাপানি নাগরিক হত্যার পর থেকেই কূটনৈতিক পাড়ায় এই বিশেষ তৎপরতা শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। বাংলাদেশে অবস্থানকারী পশ্চিমা নাগরিকদের ওপর আবারও সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে বলে যুক্তরাজ্য সরকারের আশঙ্কায় কূটনৈতিক পাড়ায় শুরু হয়েছে বিজিবির টহল।
 
শনিবার (১০ অক্টোবর) দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলশান, বনানী ও বারিধারায় রাতভর চলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ টহল ও তল্লাশি।

বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি, কবরস্থান সড়ক, বনানী ব্রিজ, মহাখালীর ব্রাক ইন সেন্টার ব্রিজ, গুলশান স্যুটিং ক্লাব, নতুন বাজার, বারিধারা লেক পাড় ও কাকলীতে চেকপোস্ট বসিয়ে সারারাত তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। সেই সাথে বারিধারার দূতাবাস এলাকায় সন্ধ্যা থেকে সারারাত টহল দিতে দেখা গেছে র‌্যাব ও বিজিবিকে।
 
বারিধারা লেকপাড় চেকপোস্টে তল্লাশিতে অংশ নেওয়া গুলশান থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হাফিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, সন্ধ্যা ৮টা থেকে তল্লাশি শুরু করেছি, চলবে সকাল ৮টা পর্যন্ত।
 
তিনি জানান, বিদেশি হত্যার পর থেকে পুলিশের সতর্কতা বেড়েছে। রাতের বেলায় এ এলাকায় প্রবেশ করা সব গাড়ি ও সন্দেহভাজন সবাইকে তল্লাশি করা হচ্ছে। রাতের বেলায় এ পথে গুলশান-বনানীতে কোনো ভ্যান-রিকশা চলতে দেওয়া হচ্ছে না। ফুটপাতের সব দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
 
অন্যদিকে গুলশান ১ নম্বর চেকপোস্টে দায়িত্বরত এপিবিএন’এর এএসআই বকুল মিয়া বলেন, এই এলাকায় যারা থাকেন তারা সবাই ক্ষমতাধর ও সামাজিক সম্মানের অধিকারী। তাই গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালানোয় তারা অনেকেই বিরক্ত হচ্ছেন। তাদের বিরক্ত করতে ভালো লাগে না। কিন্তু তল্লাশি না করেও উপায় নেই। আমরা প্রতিটি গাড়িই তল্লাশি করছি।
 
এদিকে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মহসিন রেজা জানান, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা করতে শনিবার রাতের জন্য কূটনৈতিক পাড়ায় বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়। এছাড়াও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষায়িত টিম ‘সোয়াত’ ওই এলাকার নিরাপত্তায় গত দুদিন ধরে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।  
 
গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কূটনৈতিক জোন হিসেবে পরিচিত গুলশানে এক ইতালীয় নাগরিককে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ৩ অক্টোবর রংপুরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন এক জাপানি নাগরিক।

দুই বিদেশি হত্যার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপানসহ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের জন্য বিশেষ সতর্কতা জারি করে।
 
এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ অক্টোবর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের নিয়ে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। তিনি বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন।
 
এই অবস্থার মধ্যেই শুক্রবার (০৯ অক্টোবর) যুক্তরাজ্য আবারও বাংলাদেশে সফরকারী ও বসবাসকারী নাগরিকদের জন্য নতুন করে সতর্ক বার্তা পাঠায়। এতে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের ওপর আবারও হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে দেশটি।

সম্প্রতি দুজন বিদেশিকে হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে এতে বলা হয়, ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভান্ট (আইএসআইএল) এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে।

তবে সরকার বলে আসছে, দুই খুনের সঙ্গে আইএসআইএল’র সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ মেলেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, আইএস বা তেমন কোনো জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা বাংলাদেশে নেই।
 
প্রধানমন্ত্রীর সন্দেহ, যারা বাংলাদেশকে ‘অস্থিতিশীল করতে চায়’ তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। হামলার পেছনে ‘বিএনপি-জামায়াতের’ হাত থাকতে পারে।
 
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিদেশি নাগরিক হত্যা নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে যে ধরনের বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে তা খুবই দায়িত্বহীন। এ ধরনের মন্তব্য তদন্তে বাধা সৃষ্টি করবে। এতে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৪১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৫
আরএম/এমজেএফ/

** কূটনৈতিক পাড়ায় বিজিবি টহল

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।