ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

মানিলন্ডারিং বিশেষজ্ঞ দলকে নিজেদের সফলতার তথ্য দিয়েছে দুদক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৫
মানিলন্ডারিং বিশেষজ্ঞ দলকে নিজেদের সফলতার তথ্য দিয়েছে দুদক ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: আন্তর্জাতিক অর্থপাচার বিশেষজ্ঞ দলের কাছে নিজেদের তদন্তের সফলতার তথ্য তুলে ধরেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আট সদস্যের বিদেশি এ বিশেষজ্ঞ দলকে (এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানিলন্ডারিং-এপিজিএমএল) দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অর্থপাচারে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি দমন সংস্থাটি স্বাধীনভাবে কাজ করছে।


 
বৈঠক সূত্র এসব বিষয়ে নিশ্চিত করে জানায়, বিশেষজ্ঞ দলের কাছে দুদকের পক্ষ থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা অর্থ সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আনার তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে।
 
রোববার (১১ অক্টোবর) দুপুরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নে প্রতিরোধে এপিজিএমএলের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সঙ্গে দুদকের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। আট সদস্যের বিশেষজ্ঞ দলটির নেতৃত্বে ছিলেন এপিজিএমএলের সেক্রেটারিয়েটের কর্মকর্তা ডেভিড শিনন।
 
দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান।

দুদক ছাড়াও এ সভায় বাংলাদেশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীন ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্ট ইউনিটের (বিএফআইইউ) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
 
সিআইডি ও বিএফআইইউ’র প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকলেও বৈঠক জুড়ে আলোচনায় ছিলো দুদকের অর্থপাচার সংক্রান্ত অনুসন্ধান ও তদন্তের বিভিন্ন বিষয়। বৈঠকে ডেভিড শিনন ও তার দলের কর্মকর্তারা দুদকের অর্থপাচার অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম কিভাবে পরিচালনা করা হয় তা জানতে চান। দুদকের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধতন কর্মকর্তারা অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম তুলে ধরেন।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা এফএটিএফের অবশিষ্ট শর্তগুলো পরিপালনে আমাদের সর্বোচ্চ সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করেছি। ২০০৮ ও ২০১২ সালের এপিজি’র অনসাইট ভিজিটের পর্যবেক্ষণগুলোর আলোকে সেগুলোকে মূল্যায়ন ও বাস্তবায়নের দিকটি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করেছি।
 
তিনি আরও বলেন, দুদক আইন’২০০৪, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন’২০১২ এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন অধ্যাদেশ’২০১৩ এর আলোকে দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি ও মানিলন্ডারিং মামলাগুলো নিবিড়ভাবে পরিচালনা করছি। আমি বিশ্বাস করি, এক্ষেত্রে আমাদের সফলতা উৎসাহব্যাঞ্জক।

কোকোর পাচার করা টাকা আনাকে নিজেদের বড় সফলতা দাবি করে দুদক চেয়ারম্যান এপিজিএমএলের প্রতিনিধি দলকে বলেন, আমরা সফলতার সঙ্গে পাচার করা ২১ কোটি টাকা সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরত আনতে পেরেছি। বিদেশে পাচার হওয়া আরও অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছি।
 
কমিশনের মহাপরিচালক ব্রি. জে. (অব.) এম এইচ সালাহ্উদ্দিন কমিশনের কার্যক্রম ও ন্যাশনাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের কার্যক্রম সংক্রান্ত লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কমিশনের কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ও কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ।
 
দুদক সূত্র জানায়, আগামী মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এপিজিএমএলের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় বৈঠক হবে।

দুদক সূত্র জানায়, এপিজি’র সঙ্গে বৈঠক সামনে রেখে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি কয়েকদিন আগেই বিশদ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এ বৈঠকে অর্থপাচার সংক্রান্ত দুদকের অনুসন্ধান-মামলাসহ নানা বিষয় বিশেষজ্ঞদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে।
 
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নে প্রতিরোধে গঠিত ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের আদলে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য গঠিত এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানিলন্ডারিং  (এপিজিএমএল) গঠিত হয়েছে।
 
২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়নের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় নাম ছিল বাংলাদেশের। তবে বিশ্বের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নির্ধারণকারী সংস্থা ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর সংস্থাটির নজরদারির মধ্যে পড়ে বাংলাদেশ। এ সময় তারা ৪০টি শর্ত প্রতিপালনের পরামর্শ দেয়। একই সঙ্গে সংস্থাটি তাদের দেওয়া শর্ত ঠিকমতো বাস্তবায়ন হচ্ছে কি-না, তারও মূল্যায়ন করে। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার নানা পদক্ষেপ নেয় এবং তার তথ্য ওই সংস্থাটিকে সরবরাহ করে।
 
এসবের ফলে বাংলাদেশ মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়নে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা থেকে ২০১৪ সালে বের হয়ে আসে। ওই সময়ে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপ সত্যিকার অর্থেই যথাযথ ছিল কি-না, নাকি মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছিল, তা সরেজমিন খতিয়ে দেখতে ঢাকায় এসেছে মানিলন্ডারিং রোধ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ দলটি।
 
** এপিজি’র সঙ্গে চলছে দুদক-সিআইডি-বিএফআইইউ’র বৈঠক


বাংলাদেশ সময়: ১৭৭৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৫
এডিএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।