ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

জাতিসত্তা নির্মাণের অন্যতম পথিকৃত সাহিত্যবিশারদ

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৫
জাতিসত্তা নির্মাণের অন্যতম পথিকৃত সাহিত্যবিশারদ

ঢাকা: বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান গবেষক আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদকে বাঙালি জাতিসত্তা নির্মাণের অন্যতম পথিকৃত পুরুষ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।  

আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের ১৪৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমির একক বক্তৃতানুষ্ঠানে রোববার (১১ অক্টোবর) এ কথা বলেন বক্তারা।



বিকেল চারটায় একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।

‘আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ: ঐতিহ্যপ্রেমী অগ্রপথিক’ শীর্ষক একক বক্তৃতা প্রদান করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম মুস্তাফা।

একক বক্তা অধ্যাপক গোলাম মুস্তাফা বলেন, প্রাচীন পুঁথি সংগৃহীত না হলে আমাদের সাহিত্যের ইতিহাস রচনা সম্ভবই হতো না।

সাহিত্যবিশারদের আর্থিক সঙ্গতি ছিলো না, কিন্তু স্বদেশের ভাষা- সাহিত্য এবং ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা ছিলো। পুঁথি সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি অসম্মানজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন বহুবার। তার সংগ্রহ পরিকল্পনা ছিলো সম্প্রদায় নিরপেক্ষ। মুসলমান ও হিন্দু-উভয় সম্প্রপ্রদায়ের পুঁথিই তিনি সংগ্রহ করেছিলেন।

গোলাম মুস্তাফা বলেন, সাহিত্যবিশারদের এ সংগ্রহ-উদ্যোগের ফলে বাঙালির সাহিত্য ইতিহাস পূর্ণতা পেল। বাঙালি জানলো, মধ্যযুগের সাহিত্য সাধনা মুসলমান ও হিন্দু লেখকদের মিলিত প্রয়াসে সমৃদ্ধ হয়েছে।

তিনি বলেন, সাহিত্যবিশারদ সাহিত্যে মনুষ্যত্বের প্রতিফলন চেয়েছিলেন। বহুবিভাজিত বঙ্গীয় সমাজের মধ্যে চেয়েছিলেন সমন্বয়ধর্মিতা। সকল বৈচিত্র্য নিয়েই বাঙালি এক জাতিতে পরিণত হবে- এ স্বপ্ন ছিলো তার।

সাহিত্যবিশারদ আমাদের ঐতিহ্য সচেতন করতে চেয়েছেন, জীবনের পাথেয়রূপে ঐতিহ্যকে ব্যবহার করতে অনুপ্রাণিত করেছেন। কিন্তু ঐতিহ্য বিলাসী হয়ে জীবনের অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করতে বলেননি। জাতির সম্মুখযাত্রার পথ তিনি প্রশস্ত করে গেছেন। এ কারণে তার প্রতি শ্রদ্ধায় আমাদের বিনম্র হতে হয়।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, পুঁথি সংগ্রহ বিষয়ে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ এক জীবনে যে শ্রম ও ঝুঁকি নিয়েছেন তা তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি রক্ষণশীল সমাজের ধর্মীয় বিধি-নিষেধ অতিক্রম করে অসামান্য ধৈর্য ও নিষ্ঠায় পুঁথি সংগ্রহ ও গবেষণার যে কাজ সম্পন্ন করেছেন তা বাংলা সাহিত্যের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস প্রণয়নে সহায়ক হয়েছে। বাংলাকে ‘হিন্দু-মুসলমানের মিলিত জাতীয় ভাষা’ আখ্যা দিয়ে তিনি তার মাতৃভাষা প্রীতিরও পরিচয় রেখেছেন।

স্বাগত ভাষণে শামসুজ্জামান খান বলেন, বাঙালি জাতিসত্তা নির্মাণের অন্যতম পথিকৃত-পুরুষ আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ। তার পুঁথি সাধনা কেবল কাগুজে বিষয় ছিল না। বরং বাঙালির সমন্বয়ধর্মী লৌকিক জাগরণের সৃজনশীল সূত্র লিপিবদ্ধ আছে সাহিত্যবিশারদ সংগৃহীত ও গবেষিত পুঁথিতে। বাঙালি মুসলমানের সাংস্কৃতিক বোধের সংকট নিরসনে তার অবদান তুলনারহিত।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৫
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।