ঢাকা: সংসদ নির্বাচনের মত সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনও দলীয়ভাবে সম্পন্ন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু বাস্তবতার বিচারে ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) তা ‘অসম্ভব’ বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
দেশে বর্তমানে পাঁচ ধরনের স্থানীয় সরকার রয়েছে। এগুলো হলো-ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন। এগুলোর মধ্যে কেবল জেলা পরিষদ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিমালা করা হয়নি। বাকি চারটি স্থানীয় সরকারের নির্বাচনই এদেশে দীর্ঘদিন ধরে নির্দলীয়ভাবে সম্পন্ন করা হচ্ছে। আইনেই নির্দলীয়ভাবে এসব নির্বাচন সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে।
সাম্প্রতিককালের নির্বাচনগুলোতে দলীয়ভাবে প্রকাশ্যে প্রার্থী প্রদান এবং সেভাবেই প্রচার-প্রচারণা হওয়ার কারণে নড়েচড়ে বসে সরকার। যার অংশ হিসেবেই দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার বিধান রেখে বর্তমানে আইনও সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে পাঁচটি স্থানীয় আইনই সংশোধন করার জন্য খসড়া প্রস্তুত করছে। শিগগিরই তা চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং এর জন্য পাঠানো হবে। এরপর মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন নিয়ে আইনগুলোর সংশোধন আনবে মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য দেশের ২৪৫টি পৌরসভা নির্বাচনও দলীয়ভাবে সম্পন্ন করা হতে পারে।
২০১১ সালের পৌরসভা নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ দলগুলো প্রকাশ্যেই তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছিলো। এরপর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও দলীয়ভাবেই প্রার্থী দিয়েছিলো দলগুলো। আবার ২০১৩ সালে চার সিটি নির্বাচন, গাজীপুর, রংপুর সিটি নির্বাচন, ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচন এবং সর্বশেষ ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনেও দলীয়ভাবেই প্রার্থী সমর্থন করা হয়েছিলো।
এতে প্রতিটি নির্বাচনেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছে। বিভিন্ন সময় নির্বাচন কমিশনাররা আইন বহির্ভূতভাবে নির্দলীয় নির্বাচনে দলীয় সমর্থন না দিয়ে আইন সংশোধনের কথাও বলেছেন।
প্রায় পাঁচ বছর ধরে স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে সম্পন্ন করার বিষয়ে নানা গুঞ্জন শোনা গেলেও অবশেষে তার বাস্তব রূপই দিতে চাইছে সরকার। তবে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, সিটি নির্বাচন থেকে শুরু করে পৌরসভা পর্যন্ত দলীয়ভাবে করা যেতে পারে। কিন্তু ইউপি নির্বাচন করা দুরুহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। তাদের মতে, দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন করা হলে নির্দলীয় প্রার্থীরা অনুৎসাহিতও হবেন। এতে স্থানীয় পর্যায়ে সরকার ব্যবস্থায় সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য বা ভালো মানুষের নির্বাচিত হওয়ার হার কমে যাবে। তাদের প্রতিনিধিত্ব আর পাওয়া যাবে না।
এ বিষয়ে ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে সম্পন্ন করলে বেশ কিছু সমস্যা সৃষ্টি হবে। আবার সব সমস্যা কাটিয়ে নির্বাচন করা গেলেও তা কেবল সিটি করপোরেশনে ভালোভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। উপজেলা বা পৌরসভায় কিছুটা কষ্টকর হবে। আর ইউপিতে একেবারে অসম্ভব।
তিনি বলেন, ইউপিতে দলীয়ভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে না পারার পেছনে অন্যতম বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে এর আকার। কেননা, সারাদেশে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এই নির্বাচন যদি দলীয়ভাবে হয়, তবে নিবন্ধিত ৪০ টি দলের জন্যই ব্যালট পেপার ছাপাতে হবে। আর প্রতিটি ইউনিয়নে ১২ কাউন্সিলর ও ১ চেয়ারম্যান পদের জন্য প্রার্থী দেওয়া হবে। আবার স্বতন্ত্র প্রার্থীও থাকবে।
ইসি সচিব বলেন, যেহেতু দলীয়ভাবেই নির্বাচন হবে, সেহেতু আমাদের ধরেই নিতে হবে সবগুলো দলই অংশ নেবে। আর তা যদি নাও হয় কিংবা যদি ২০টি দলও প্রার্থী দেয়, তবুও ব্যালট পেপার হয়ে যাবে অনেক লম্বা। যা ব্যবস্থাপনা করা অসম্ভব। সাড়ে ৪ হাজার ইউপির জন্যই ব্যালট ছাপাতে হবে। এতে ব্যয়ও বেড়ে যাবে অনেক।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাদের পরিকল্পনা জানিয়ে আমাদের মতামত চাইলে আমরা বাস্তবতার নিরিখেই মতামত জানিয়ে দেব।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৪
ইইউডি/জেডএম