ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, লুণ্ঠন, নির্যাতনের সাতটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
একই মামলার ওই পাঁচ আসামির মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ। পলাতক চারজন হচ্ছেন শামসুদ্দিনের সহোদর সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসিরউদ্দিন আহমেদ এবং রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলাম।
সোমবার (১২ অক্টোবর) অভিযোগ গঠন করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মাদ আনোয়ার উল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। আগামী ০৪ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন ও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর দিন ধার্য করা হয়েছে।
আসামি অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনালের দোষী না নির্দোষী প্রশ্নের জবাবে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন তিনি।
গত ২১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষে অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল-মালুম, সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন। অন্যদিকে ০৪ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আসামিদের আইনজীবী আব্দুশ শুকুর খান।
গত ১৩ মে পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
আসামিরা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার বিদ্যানগর, আয়লা, ফতেরগুপ বিল, পীরাতন বিল ও আশেপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন রাষ্ট্রপক্ষের মোট ৪০ জন সাক্ষী।
গত ১৫ এপ্রিল এ মামলায় তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন। ১৩ এপ্রিল এ প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দেন তদন্ত সংস্থা।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার করিমগঞ্জ মধ্যপাড়া (দুলিপাড়া) গ্রামের মো. নাসিরউদ্দিন ও মো. শামসুদ্দিনের বাবার নাম মৃত আব্দুর রাজ্জাক মুন্সি ও মায়ের নাম মৃত লুৎফুন্নাহার লতা। এ দু’জনের মধ্যে বড় ভাই নাসিরউদ্দিন সেনাবাহিনীর ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন ছিলেন। তিনি ১৯৯৪ সালের ৫ জুলাই তিনি সেনাবাহিনীর কমিশন লাভ করেন। ২০০২ সালের ১৩ জানুয়ারি তিনি অকালীন বাধ্যতামূলক অবসরে যান। অন্যদিকে ছোট ভাই শামসুদ্দিন কিশোরগঞ্জে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
এ মামলার তদন্ত শুরু হয় গত বছরের ৬ জুন। তদন্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান গত বছরের ২৬ নভেম্বর নাসিরউদ্দিন-শামসুদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলেও আরও অধিক তদন্তের জন্য ফেরত পাঠান প্রসিকিউশন। তাদের বিরুদ্ধে ১২ জনকে হত্যা, গণহত্যা, আটক, নির্যাতন ও লুণ্ঠনের ৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল সে সময়।
পুনর্তদন্ত শেষ করে গত ১৩ এপ্রিল তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেন তদন্ত সংস্থা। এর ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তৈরি করে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন তদন্ত সংস্থা।
পুনর্তদন্তে আরও নতুন নতুন অভিযোগ পাওয়া যাওয়ায় অন্য তিনজনকে এ মামলার আসামি এবং অভিযোগ বাড়িয়ে সাতটি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৫
এমএইচপি/এএসআর