ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

একনেকে উঠছে সচিবালয় স্থানান্তর প্রকল্প

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৫
একনেকে উঠছে সচিবালয় স্থানান্তর প্রকল্প ছবি: ফাইল ফটো

ঢাকা: অবশেষে ‘ঢাকার শেরেবাংলা নগরে জাতীয় সচিবালয় নির্মাণ’ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। এর ফলে সচিবালয় স্থানান্তরের কাজ প্রাথমিকভাবে শুরু হবে শেরেবাংলা নগরে।


 
সোমবার (১২ অক্টোবর) পরিকল্পনা সূত্র থেকে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) একনেক সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ৮টি প্রকল্প রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সচিবালয় স্থানান্তরের প্রকল্পটি দ্বিতীয় নম্বরে রাখা হয়েছে।
 
সূত্র জানিয়েছে, নগরীর আব্দুল গনি রোডের বর্তমান সচিবালয় কমপ্লেক্সে সম্প্রসারণের কোনো সুযোগ নেই। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ভুক্ত অনেক দফতর কমপ্লেক্সের বাইরে। বর্তমানে বাংলাদেশ সচিবালয় কমপ্লেক্স তৎকালীন প্রাদেশিক সরকারের সময় নির্মিত যা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত। এসব কারণেই প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন পেতে যাচ্ছে।

প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ২শ নয় কোটি ৭০ লাখ টাকা। সব টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) থেকে মেটানো হবে। ইতোমধ্যেই প্রকল্পটির পেপার ওয়ার্কিং শুরু হয়ে গেছে। জুলাই ২০১৫ থেকে জুন ২০১৮ সালের মধেই শেরে বাংলানগরে সচিবালয় স্থানান্তর করা হবে বলে সূত্রের খবর।

নানা কারণে প্রকল্পটি একনেক সভায় তোলা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে অন্যতম, জাতীয় সচিবালয় নির্মাণের মাধ্যমে বিদ্যমান বাংলাদেশ সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অফিস স্পেস সঙ্কট দূরীকরণ। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও এসবের আওতাধীন সংস্থার মধ্যে কার্যাদির সমন্বয় উন্নয়ন এবং কর্মকর্তাদের কাজের পরিবেশ উন্নত করে কর্মদক্ষতা বাড়ানো।
 
মূল কার্যক্রম
প্রকল্পের আওতায় ৩২ একর জায়গায় চারটি ব্লকে ভাগ করে জাতীয় সচিবালয় কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। দু’টি বড় ব্লকে ৩২টি বড় মন্ত্রণালয় ও দু’টি ছোট ব্লকে ১৬টি ছোট মন্ত্রণালয়কে স্থানান্তর করা হবে। প্রকল্পের আওতায় অডিটরিয়াম, সম্মেলন কেন্দ্র, ব্যাংক, পোস্ট অফিস, মসজিদ, কার পার্কিং ইত্যাদিও থাকবে।
 
অন্যদিকে, দুই লাখ ৫৩ হাজার ৩শ নয় দশমিক ৭১ বর্গমিটার মূল ভবন (চারটি ব্লক) ও ৫৪ হাজার ৫শ পাঁচ দশমিক ৮৮ মিটার অ্যাসোসিয়েট বিল্ডিং নির্মাণ করা হবে (দু’টি ব্লক)।
 
মসজিদের আয়তন হবে ২৪ হাজার ৭শ ২৯ দশমিক ১৪ বর্গমিটার। ৫৮ হাজার ৪৩ দশমিক ১৪ বর্গমিটার অডিটরিয়ামসহ ১০ হাজার ৩৮ বর্গমিটার এনট্রান্স প্লাজা হবে। প্রকল্পের আওতায় অভ্যন্তরীণ বিদ্যুতায়ন, পানি সরবরাহ, ১০টি সিসি টিভি ও ৩২টি লিফট কেনা হবে।

এছাড়া পাঁচ হাজার ১শ ৯৯ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে চিলার রুম ও এক হাজার ৭শ ৭২ রানিং মিটার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। বহির্বিদ্যুতায়নের জন্য পাঁচ হাজার ৮শ ৬২ দশমিক ২৪ বর্গমিটার এলাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
 
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবনের স্থপতি লুই আই কানের নকশা স্থাপত্য অধিদফতর সংশোধন করেছে। কারণ, ইতোমধ্যে পূর্বের জমির পরিমাণ ১০ একর কমে গেছে। ওই জমিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সবিবালয় বর্তমান চাহিদার কথা মাথায় রেখেই নির্মাণ করা হবে। জাতীয় সংসদ ভবনের উচ্চতা ১শ ৫০ ফুট। সেক্ষেত্রে সচিবালয় নয় তলার বেশি হবে না। সংসদ ভবনের উচ্চতা সীমার বিষয়টি রক্ষার্থে বিশ্বের উন্নত দেশের মতো ভূ-গর্ভস্থ বা কয়েকটি ফ্লোর মাটির নিচে করারও পরিকল্পনা রয়েছে।
 
সূত্র জানায়, ১৯৭৪ সালে ৪২ একর জায়গায় ১০টি ব্লকে চারটি নয় তলা ভবনসহ অফিস, ব্যাংক, অডিটরিয়াম, মসজিদ, কার পার্কিং ইত্যাদি সম্বলিত জাতীয় সচিবালয় নির্মাণের চুক্তি হয়েছিলো। বাংলাদেশ সরকার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ডেভিড উইজডম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটের সঙ্গে এ চুক্তি হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এ কাজের কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির বাংলানিউজকে বলেন, শেরেবাংলা নগরে সচিবালয় স্থানান্তর পরিকল্পনা বহু আগের। অবশেষে প্রকল্পটি একনেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তোলা হবে। এর আগে পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, প্রকল্পের সারসংক্ষেপ আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছি।
 
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবনের স্থপতি লুই  আই কানের নকশায় ছিলো, জাতীয় সংসদ ও সচিবালয় কাছাকাছি হবে। এ উদ্যোগ বার বার নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি। কিন্তু বর্তমান সরকার এ বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পেলে নতুন প্রজন্মের জন্য নতুন সচিবালয়ের পরবর্তী কাজ শুরু হবে।
 
তিনি আরও বলেন, নতুন সচিবালয় পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সরকারের সব থেকে বড় পদক্ষেপ। এতে দেখা যাবে, অনেক মন্ত্রণালয় পেপারলেস হয়ে গেছে। এর ফলে মন্ত্রণালয়ের স্পেসও কম লাগবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৫
এমআইএস/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।