ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ মাঘ ১৪৩১, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশে ফেরার আকুতি (ভিডিওসহ)

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৫
প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশে ফেরার আকুতি (ভিডিওসহ)

ঢাকা: শফিউল্লাহর বাড়ি কক্সবাজারের উখিয়ায়। গত মে মাসে যেসব বাংলাদেশিকে ইন্দোনেশিয়ায় উদ্ধার করা হয়েছে, তার মধ্যে তিনিও একজন।

দেশটির আচেহ লাংসায় অস্থায়ী ক্যাম্পে প্রায় ৫ মাস ধরে রয়েছেন তিনি। দেশে থাকা একমাত্র কন্যা সন্তানকে দেখার জন্যে আকুল হয়ে আছেন তিনি।
 
দ্রুত দেশে ফেরত আনতে বাংলানিউজের মাধ্যমে সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার অস্থায়ী ক্যাম্পে থাকা শফিউল্লাহসহ বাংলাদেশিরা।
 
রোববার (১২ অক্টোবর) বিকেলে লাংসা থেকে ফোনে শফিউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, এ ক্যাম্পে চার শতাধিক বাংলাদেশি ছিলেন। এখন রয়েছেন ৬০ জনের মতো।
 
তিনি বলেন, আমরা দালালের খপ্পরে পড়ে ভুল পথে মালয়েশিয়া রওনা হয়েছিলাম। আমি রওনা হওয়ার আগে বুঝতে পারিনি, নৌকায় এ অবস্থা। এতো অত্যাচার-নির্যাতন। নৌকায় একটু খাবারের জন্যে মানুষ মানুষকে খুন করে।
 
শফিউল্লাহ বলেন, ইন্দোনেশিয়ায় ক্যাম্পে আমাদের খাবার বা থাকার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু দেশে আমাদের বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানরা আছেন। তাদের জন্যে দুশ্চিন্তা হয়।
 
শিক্ষা জীবনে আলিম উত্তীর্ণ শফিউল্লাহ জানান, রমজানের ঈদের আগেই বাংলাদেশি হিসেবে তার পরিচয় নিশ্চিত করেছে উখিয়া থানা। এ কারণে তার পরিবারকে থানায় ৩ হাজার টাকা ঘুষও দিতে হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না।
 
রোববার সন্ধ্যায় শফিউল্লাহর চাচা নূর ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শফিউল্লাহর ৭ বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। পুরো পরিবারটি এখন শফিউল্লাহর ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে।  
 
আচেহতে বেসরকারি সংস্থা ইয়াইয়াসান জিউতানিওই (yayasan geutanyoe) কাজ করছে এসব উদ্ধার হওয়া মানুষদের নিয়ে। লাংসার অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে বাংলাদেশিদের একটি ভিডিও বাংলানিউজকে পাঠিয়েছে সংস্থাটি। ভিডিওটিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দেশে ফিরিয়ে আনতে আকুতি জানিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ায় উদ্ধার হওয়া এসব বাংলাদেশিরা।
 
ইয়াইয়াসান জিউতানিওই'র (yayasan geutanyoe) অার্ন্তজাতিক পরিচালক লিলিঅান্নে ফান (lilianne fan) বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশিরা এখন বাড়ি ফেরার জন্যে উদগ্রীব। তাদের পরিবার এবং সন্তানদের জন্যে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।
 
এসব মানুষকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে কর্মসংস্থান তৈরির জন্যে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
 
তিনি জানান, ইন্দোনেশিয়ার অাচেহ প্রদেশে গত ১০ থেকে ২০ মের মধ্যে ১৭৪৪ জন রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশিকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করেন সেখানকার জেলেরা। এই মানুষগুলো এর অাগে একমাস ধরে পানিতে ভাসছিলেন। এক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে এবং বাংলাদেশিদের অভিবাসনের প্রলোভনের শিকার হিসাবে গণ্য করছে সে দেশের সরকার।
 
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম’র বাংলাদেশের কর্মকর্তা আসিফ মুনির সোমবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে বাংলানিউজকে বলেন, ইন্দোনেশিয়ায় অস্থায়ী ক্যাম্পে ৭৮১ জন বাংলাদেশি আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৬৪২ জনকে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। অন্যদেরকেও ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলছে।  
 
তিনি বলেন, উদ্ধার হওয়া অভিবাসী প্রত্যাশীদের মধ্যে যাদের বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের বাড়িতে গিয়ে পরিচয় যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায় সময় লাগছে। তবে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সকলকেই ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
 
ফেরত আসা এসব অভিবাসী প্রত্যাশীদের পুনর্বাসন সর্ম্পকে তিনি বলেন, যারা ফেরত আসছেন, তাদের আমরা কাউন্সিলিং করে থাকি। যেন মানসিকভাবে কিছুটা শক্তি পান। এছাড়াও ১৫ হাজার টাকা করে এককালীন সাহায্য করছি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৫
এমএন/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।