ঢাকা: রাজধানীর অভ্যন্তরে চলাচলকারী বিভিন্ন রুটে বর্ধিত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১ অক্টোবর থেকে। তবে কিলোমিটারপ্রতি ১০ পয়সা বাড়ানো নির্দেশনা থাকলেও বেড়েছে ১ টাকা পর্যন্ত।
মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন রুটে বাসে চলাচল করে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
রাজধানীর শ্যামলী থেকে ফার্মগেট যেতে আগে যাত্রীপ্রতি ভাড়া নেওয়া হতো ৫ টাকা। এখন সেই ভাড়া ৮ টাকা।
গাবতলী থেকে ২২নং (সাবেক-৮) মিনিবাস চলাচল করে ফার্মগেট-শাহবাগ, কাকরাইল, মতিঝিল হয়ে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত। আগে গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত যাত্রীপ্রতি ভাড়া ছিলো ২৫ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ৩৫ টাকা। ফার্মগেটের ভাড়া আগে নেওয়া হতো ৫ টাকা, এখন ৮ টাকা। একইভাবে ৭নং রুটের গাড়িতে শ্যামলী থেকে সায়েন্সল্যাব পর্যন্ত আগে ভাড়া ছিলো ৫ টাকা, এখন ৮ টাকা।
রাজধানীর উত্তরা থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত চলাচলকারী সুপ্রভাত পরিবহনেও নেওয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। গত ১ অক্টোবরের আগে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত ভাড়া ছিলো ১৫ টাকা, এখন নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা। একইভাবে গুলিস্তান থেকে রামপুরা আসতেই যাত্রীদের দিতে হচ্ছে ১০ টাকা করে। আগে ৫ টাকা দিয়ে যাতায়াত করা যেত।
গুলিস্তান থেকে সুপ্রভাত পরিবহনে ওঠেন মো. শাহিন। বাসের ভেতরে ভাড়া দেওয়ার সময় কন্ট্রাক্টর রফিকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করতে দেখা গেছে। এগিয়ে জানতে চাইলে বলেন, আগে গুলিস্তান থেকে রামপুরা আসতাম ৫ টাকা দিয়ে, এখন ১০ টাকা হয় কিভাবে? ভাড়া বাড়লেও দুই এক টাকা বাড়তে পারে। এভাবে ৫ টাকা বাড়তি ভাড়া দিতে হলে প্রতিদিন কতো টাকা যায় ঠিক আছে?
কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে তর্ক করতে করতে রেগে যান শাহিন। বলেন, আমি ৫ টাকা বাড়তি দিতে পারবো না। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে বেশ কথা কাটাকাটি হয়। পরে কন্ট্রাক্টর রফিক বলেন, আমার কি করার আছে। মালিকের কাছে হিসাব দিতে গেলেই আমাদের গালি শুনতে হয়। সরকার যে ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে, আমরা তাই নিচ্ছি। আমাদের চার্ট দেওয়া আছে।
এভাবে প্রতিদিন রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া নিয়ে। মোহাম্মদপুর থেকে মতিঝিল যেতে আগে ২০ টাকা নেওয়া হতো এটিসিএল পরিবহনে, এখন নেওয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। এটিসিএল বাসে প্রেসক্লাব থেকে সায়েন্সল্যাব পর্যন্ত আগে ভাড়া ছিলো ১০ টাকা, এখন ১৫ টাকা।
এটিসিএল পরিবহনের যাত্রী ওয়াহিদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, সরকার ভাড়া বাড়িয়েছে কিলোমিটার প্রতি ১০ পয়সা। এ সুযোগে বাস মালিকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়ে একটা চার্ট টাঙিয়ে দিয়েছেন, কিছু বলার নাই।
রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী হিউম্যান হলারগুলোতে ভাড়া বৃদ্ধির হার আরও বেশি। শ্যামলী থেকে শিয়া মসজিদ মোড় পর্যন্ত এক কিলোমিটারও হবে না। হিউম্যান হলারে আগে নেওয়া হতো ৫ টাকা, এখন নিচ্ছে ৭ টাকা।
এভাবে প্রতি রুটেই ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কথা স্বীকার করে বিআরটিএ’র পরিচালক (প্রশাসন) ও ভাড়া নির্ধারণ কমিটির আহ্বায়ক মো. মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ আসছে, সরকার যে ভাড়া বাড়িয়েছে তার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আমরা যেখানে এর সত্যতা পাচ্ছি, সেখানেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, পাঁচটি জেলায় বর্ধিত ভাড়া নেওয়ার কথা রয়েছে। জেলাগুলো হচ্ছে- ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ এবং গাজীপুর। এ জেলাগুলোতে বর্ধিত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আমাদের চার্টের বাইরে যারাই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করবে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বর্ধিত ভাড়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে নিন্মমানের যাত্রীসেবা দিয়ে যে ভাড়া ছিলো, সেটাই অযৌক্তিক। আবার নতুন করে ভাড়া বাড়িয়ে যাত্রীদের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে সরকার।
তিনি বলেন, সারা দেশে বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলারসহ সাড়ে ৩ লাখ গণপরিবহন চলাচল করে। সরকার ভাড়া বাড়িয়েছে মাত্র ৪ হাজার গাড়ির। কিন্তু বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে সবাই। সরকার সাধারণ যাত্রী ও বিশেষজ্ঞদের মতামতকে উপেক্ষা করেই এ ভাড়া বাড়িয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৫
এসএম/এএসআর