ঢাকা: বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে এসে পৌঁছেছে। শুরুটা সেই ২০০৯’র মহাজোট সরকারের আমল থেকে।
অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও রাজনীতিতে নারী-পুরুষ সমতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে দেশটির উন্নতি অভূতপূর্ব, মন্তব্য ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ)। তারা বাংলাদেশকে নারীর উন্নয়নে একটি আদর্শ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। গত বছর অর্থাৎ, ২০১৪ সালে ডব্লিউইএফ’র লিঙ্গ বৈষম্য সূচকের বার্ষিক প্রতিবেদনে ১৪২টি দেশের মধ্যে ৬৮তম স্থান দখল করে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে ১৩৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৫। তারও আগে ২০১২ সালে যা ছিল ৮৬ এবং ২০০৯ সালে ৯৩। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে ক্রমাগত উন্নতির দিকে বাংলাদেশ, কমছে নারী-পুরুষের বৈষম্য। এশিয়ার মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, জাপানকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের এ অর্জন। ডব্লিউইএফ’র তথ্যমতে, ২০১৩ সালের সূচকে ভারতের অবস্থান ছিল ১০১, পাকিস্তান ১৩৫, জাপান ১০৫ ও চীন ৬৯। রাজনীতিতে অংশগ্রহণ, অর্থনৈতিক সমতা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্যতার ভিত্তিতে ২০০৬ সাল থেকে এ তালিকা প্রকাশ করে আসছে ডব্লিউইএফ।
এদিকে নারীর ‘রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে’ বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর একটি। মোট ৪টি বিবেচ্য বিষয়ের ওপর গবেষণা করতে গিয়ে ডব্লিউইএফ দেখেছে, কেবলমাত্র নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের বিচারে বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক বড় বড় দেশকে পেছনে ফেলেছে।
শুধু তাই নয়, সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের প্রতিযোগিতামূলক সূচকে দুই ধাপ এগিয়েছে গণতান্ত্রিক এ দেশটি। মোট ৩ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট পেয়ে বাংলাদেশ ১০৯ থেকে ১০৭’র ঘরে প্রবেশ করেছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বিশ্বের ১৪০টি দেশের উৎপাদনশীলতার ওপর ভিত্তি করে ২০১৫-১৬ সালের জন্য এ তালিকা প্রকাশ করে। এখানে ১১৩টি বিষয়কে বিবেচনা করে সূচক তৈরি করা হয়েছে।
![](files/nari1_162387579.jpg)
সার্বিকভাবে লিঙ্গ বৈষম্যের দিক দিয়ে বাংলাদেশ ১১১তম, যেখানে পাকিস্তান ১২৩ এবং ভারত ১৩৩ নম্বরে। এই সূচকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ়। বিষয়টিতে আরও এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। রাজনীতিতে লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাস করে আঞ্চলিক নেতৃত্বে সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ মর্যাদাপূর্ণ ওমেন ইন পার্লামেন্টস (ডব্লিউআইপি) গ্লোবাল ফোরাম অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের জোনাল ক্যাটাগরিতে রাজনীতিতে লিঙ্গ বৈষম্য কমিয়ে আনায় অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ এ বিজয় গৌরব অর্জন করে। ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকান ইউনিয়নের সদর দফতরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম চলতি বছরের মার্চে এ পুরস্কার গ্রহণ করেন। যা বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট সম্মান। এটি নারী উন্নয়নে কাজ করে অন্তর্জাতিক বড় বড় স্বীকৃতিগুলোর একটি।
জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকেও এগিয়েছে বাংলাদেশ। উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন সূচকে চলতি বছর বাংলাদেশ ১৪২ নম্বরে উঠে এসেছে। ১৮৭টি দেশের মধ্যে আগের বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৩। গতবারের মতো এবারও দ্রুত এগিয়ে চলা ১৮ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। নারী উন্নয়ন, প্রত্যাশিত আয়ু, সাক্ষরতা, শিক্ষা এবং মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে সারাবিশ্বে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইউএনডিপি।
নারীদের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পূর্ণ পদক্ষেপের ফলে তারা আরও উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছেন। সর্বস্তরে নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, চাকরির ব্যবস্থা করা, সমতা-শ্রমে অংশ নেওয়া, নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা, ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশগ্রহণ বৃদ্ধিসহ নারীর দক্ষতা বাড়াতে আরও দৃঢ়ভাবে এগিয়ে চলেছে বর্তমান সরকার। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শতকরা ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ জোরদার করার ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। এ কাজে রয়েছে সুষ্ঠু সমন্বয়। এতে ২০৫০ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।
বাংলাদেশে নারী উন্নয়নের বীজ আরও গভীর থেকে বুনন করা। এর একটি অংশ জয়িতা ফাউন্ডেশন। বর্তমান সরকার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতা নেওয়ার পর ২০১১ সালের নভেম্বরে জয়িতা প্রতিষ্ঠা করে। সারা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তুলে আনা হয় বেশ কিছু নারী উদ্যোক্তা। দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা নিবন্ধন করা ১৬ হাজার নারী সমিতি থেকে বাছাই শেষে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত ১৮০টি সমিতিকে প্রাথমিক পর্যায়ে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। দিন দিন এ সংখ্যা বেড়েছে, বেড়ছে জয়িতার সদস্য সংখ্যাও। রাজধানীর ধানমন্ডির রাপা প্লাজার পাশে জয়িতার জন্য সরকার একটি বাড়ি বরাদ্দ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, পুরো বাংলাদেশব্যাপী তৃণমূল নারীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে এ ফাউন্ডেশন।
![](files/nari2_250859742.jpg)
মূলত উৎপাদন থেকে শুরু করে বণ্টন পর্যন্ত নারীর কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এক্ষেত্রেও সফলতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। এতে সর্বপরি এগিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ থেকে শুরু করে সমাজের সবস্তরের নারীরা। অর্থিক প্রণোদনায় নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে বলেই এ অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়েছে, মত অর্থনীতিবিদদের। ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৮৬০ মিলিয়ন ডলার ৫৭ হাজার ৭২২ জন নারীকে ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এতে তারা গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। এর মধ্যে ২০১০ সালে ১৩ হাজার ৮৩১ জন নারীকে ২৩১ মিলিয়ন, ২০১১ সালে ১৬ হাজার ৬৯৬ জনকে ২৫৭ মিলিয়ন এবং ২০১২ সালে ১৭ হাজার ৩৬২ জন নারীকে ২৮২ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ হার প্রতিবছরই বাড়ছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি তহবিল থেকে পুনরায় বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা। কোনো জামানত ছাড়াই এসব ঋণ দেওয়া হচ্ছে।
৩০ লাখ নারী শ্রমিক কাজ করছেন পোশাকখাতে। এটি বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টরে নারী বিপ্লবের একটি বড় ক্ষেত্র। এছাড়া মোট নারী শ্রমশক্তির হার ২০১০ সালে ছিল ২৪ শতাংশ যা ২০১৩ সালে বেড়ে ৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সরকারের নানান দূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে আরও উন্নতির দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও দেশের নারীরা।
স্বাস্থ্যখাতে নারীর উন্নয়ন:
চলতি অর্থবছরের (২০১৫-১৬) বাজেটে নারীদের জন্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া বাল্যবিয়ে রোধ করে শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া, অসহায়-অবহেলিত-প্রতিবন্ধী নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় নিয়ে আসা, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কর্মযজ্ঞ, নারীদের দক্ষতা বাড়াতে কার্যক্রম পরিচালনা, তৃণমূল নারীদের বাণিজ্যিকভাবে পণ্য উৎপাদন ও বিপণনের জন্য জয়িতা ফাউন্ডেশন (কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত করা হয়েছে) কাজ করছে। এছাড়াও নারীদের ড্রাইভিং, ক্যাটারিং প্রশিক্ষণসহ আইসিটি সেক্টরেও কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
দেশে এখন মাতৃ-মৃত্যুর হার ৬৬ শতাংশ কমে এসেছে। প্রতিলাখে ১৪৩ জনের বেশি নয়, এমন লক্ষ্য বাস্তবায়নে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার ২০৩০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা ৬৩’র ঘরে নিয়ে আসার। দেশে মাতৃ-মৃত্যু হ্রাস করে নারী উন্নয়নের পথকে আরও সুগম করতে কাজ করছে সরকার।
প্রতিটি গ্রামে গ্রামে, তূণমূলে, প্রান্তিক মানুষের হাতের নাগালে রয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক। যা আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৯৬ সালের ভাবনা। এর ফলে নারীরা খুব সহজে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। এছাড়া প্রতিটি জেলায় নারীবান্ধব জেলা হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে নারীদের চিকিৎসায় আলাদা সেল রয়েছে। যাতে করে তারা দ্রুত উন্নত সেবা পেতে পারেন। দেশব্যাপী ১২ হাজার ৯৫৬টি মাতৃসদন রয়েছে, যাতে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন নারীরা।
সেই মহাজোট আমল থেকে শিক্ষায় নারীদের উন্নয়ন এক ভিন্নমাত্রা পেয়েছে। শিক্ষা নীতির পাশাপাশি নিশ্চিত হয়েছে ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী প্রায় শতভাগ মেয়ে শিশুর শিক্ষা প্রাপ্যতার হার। কমেছে উচ্চ শিক্ষায় ঝরে পড়ার হার, নারী শিক্ষার প্রসারে দেওয়া হচ্ছে বৃত্তি এবং অর্থ সহায়তা। ১৯৯১ সালে প্রাথমিকে মেয়েদের অংশগ্রহণ ৬০ দশমিক ০৫ শতাংশ থাকলেও এখন প্রায় ৯৮ শতাংশ। এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত নারী শিক্ষা অবৈতনিক করা হয়েছে।
![](files/nari3_278437312.jpg)
জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ২০২১ সালের রূপকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতায়ন এবং সার্বিক উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্তকরণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় নারীর দারিদ্র্য বিমোচন, নারী নির্যাতন বন্ধ, নারীপাচার রোধ, কর্মক্ষেত্রসহ সব ক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তা বিধান ও আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডে পূর্ণ ও সম অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
হতদরিদ্র নারীদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তাদের ভাতা কর্মসূচি। শহরাঞ্চলে কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিত্তহীন নারীদের খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত ভিজিডি কর্মসূচি, দারিদ্র্য বিমোচন ঋণ কর্মসূচি। নারীদের কৃষি, সেলাই, ব্লক-বাটিক, হস্তশিল্প, বিউটিফিকেশন, কম্পিউটার ও বিভিন্ন আয়বর্ধক বিষয়ে ব্যাপক প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থন সৃষ্টি, শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ও বিনা জামানতে ঋণ সহায়তা, পৃষ্ঠপোষকতার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নানা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ সনদ, নারীর মানবাধিকার ও সংবিধান, নারী ও আইন, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০, নারী মানবসম্পদ, নারী উন্নয়নে সাংগঠনিক ও প্রতিষ্ঠানিক উত্তরণ, জায়গা-জমিতে ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিতে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখছে।
বিশেষ করে বর্তমান সরকারের নেওয়া নারীর প্রতি সহিংসতা মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণেও উন্নতির ধারা উপরের দিকে। আরও রয়েছে- পারিবারিক, সামাজিক ও নানামুখী সহিংসতা মোকাবিলায় আইন, কেন্দ্রীয় সেল, ডিএনএ ল্যাব প্রতিষ্ঠা, নারীপাচার রোধ, সাত বিভাগে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার প্রতিষ্ঠা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর নজরদারি, কাউন্সিলিংয়ে হেল্প লাইন ইত্যাদি।
বাল্যবিয়ে রোধেও সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ১৯৮৪ সালে ৫২ শতাংশ মেয়েশিশু বাল্য বিয়ের শিকার ছিল। এখন (২০১৪ সালের হিসাব) এ হার কমে ১৭ শতাংশ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার- এ সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা হবে ২০৪০ সালের মধ্যে। তিনি সে টার্গেট নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন। আর সে লক্ষ্য পূরণে কাজ করছে বর্তমান সরকার।
রাজনীতি প্রশাসন ও নিরাপত্তায় নারীর অংশগ্রহণ অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন সর্বাধিক। আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদ এবং এর আগে আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোট আমলের একটি হিসাব বলছে, ২০ শতাংশ সংসদ সদস্য (এমপি) নারী। দেশব্যাপী এখন ১২ হাজার নির্বাচিত নারী প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলের নেতা, জাতীয় সংসদ স্পিকার, সংসদ উপনেতা সবাই নারী।
নারীদের যে ক্রম উন্নয়ন ধারা বাংলাদেশে রয়েছে তা আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা, উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নে কেবল বাহবাই দিচ্ছে না, এই দেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবেও চিহ্নিত করছে। এজন্য তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করছেন।
মাস্টার কার্ড ইনডেক্সের তথ্য বলছে (২০১৫ সাল), নারীর কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতি সাধন করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে অর্থনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে পরিচালিত বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায়ও এগিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৪-১৫ সালের জন্য প্রকাশিত জেনেভা-ভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডাব্লিউইএফ) বিশ্বের ১৪৪টি দেশের ওপর এবারের র্যাংকিং প্রস্তুত করে। যাতে ৩ দশমিক ৭২ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এক ধাপ এগিয়ে ১০৯তম হয়েছে। ডাব্লিউইএফ বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নের বেশ প্রশংসা করেছে।
শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাপক প্রশংসা করেছে ইউনেস্কো। বাংলাদেশে নারী শিক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া সবগুলো পদক্ষেপকে আধুনিক বলেছে তারা।
যে রাষ্ট্র যত সভ্য, সে রাষ্ট্রে মা তত নিরাপদ, তত নিশ্চিন্ত। সেই বিচারে বিশ্ব মাতৃপরিস্থিতি সূচকে ২০১৪ সালে ১৭৮ দেশের মধ্যে ১৩০তম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। ২০১২ সালে ১৬৫টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৬। এক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বাংলাদেশের নারীদের স্বাস্থ্য উন্নয়নে বেশ প্রশংসা করেছে। তারা বলেছে, নারীদের উন্নয়নে বাংলাদেশ যেমন দ্রুত এগিয়ে যাওয়া একটি দেশের নাম, ঠিক তেমনি নারীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে একটি আদর্শ দেশ।
নারীদের পথ চলায় বাংলাদেশ সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে এবং যেসব পদক্ষেপ চলমান তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বের প্রতিটি সূচকেই বাংলার নারীদের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, জয় বাংলার শক্তিতে উজ্জীবিত বাংলাদেশ আগামীর বিশ্ব দরবারের শীর্ষদের দেশগুলোর একটি।
** প্রধানমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৫
আইএ/এএ