ঢাকা: প্যারিসে এবারের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২১) বাংলাদেশের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক বেড়ে গেছে বলে দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ পুরস্কার পাওয়ায় এ দায়িত্ব চেপেছে বলে মনে করে সংস্থাটি।
জলবায়ু অর্থায়নে শিল্পোন্নত দেশের প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং তহবিল ব্যবহারে বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট সকল দেশের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতের দাবিতে বৃহস্পতিবার টিআইবির কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানানো হয়।
আসন্ন বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ ২১) উপলক্ষে বাংলাদেশের করনীয় ও ভূমিকা সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন টিআইবির জলবায়ু ফিন্যান্স কোঅর্ডিনেটর এম জাকির হোসাইন। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও উপ নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া খায়ের।
টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন,“ ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দা আর্থ’ পুরস্কার পাওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টিআইবি’র পক্ষ থেকে অভিনন্দন। এই পুরস্কার অর্জনের প্রেক্ষিতে পরিবেশ সুরক্ষায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলো যে ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে তা মোকাবেলা এবং বিশ্বের কোটি কোটি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। তাই প্যারিসে অনুষ্ঠিতব্য ‘কপ-২১’ এ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দক্ষতার সাথে উন্নত রাষ্ট্রগুলোর সামনে এ সংক্রান্ত দাবি বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরতে হবে। ”
আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে এবারের ১৯৬ জাতির বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে রাষ্ট্রগুলো তাদের এজেন্ডা জমা দিয়েছে। এবং জাতিসংঘ জলবায়ু সংস্থা প্যারিস ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির খসড়া তৈরি করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন প্যারিস বৈঠকে ‘দূষণকারী দেশ কর্তৃক ক্ষতিপূরণ’ নীতি অবলম্বন করে ঋণের পরিবর্তে উন্নয়ন সহায়তার ‘অতিরিক্ত’ ও ‘নতুন’ অনুদানকে অন্তর্ভুক্ত করে জলবায়ু অর্থায়নের সর্বসম্মত সংজ্ঞা নির্ধারণ, শিল্পোন্নত দেশসমূহকে ২০১৬ হতে ২০৩০ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহকে প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়নের পথনকশা (রোডম্যাপ) নির্ধারণ ও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল ব্যবস্থাপনার সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিতের ওপর জোর দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলন দাবি করা হয়, সম্মেলনে ২০১৬ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ দেশসমূহের অভিযোজন এবং প্রশমনের জন্য শিল্পোন্নত দেশসমুহের দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের পথ নকশা প্রণয়ন এবং প্রতিশ্রুত তহবিল প্রাক্কলন, যাচাই এবং ব্যবস্থাপনায় প্রত্যাশিত স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং শুদ্ধাচার নিশ্চিতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি আর্ন্তজাতিক রিভিউ প্যানেল গঠনে ঐক্যমত হতে হবে। এছাড়া জলবায়ু তহবিলের নামে জিসিএফ বা অন্যান্য ফান্ডের টাকা কোন অবস্থাতেই ঋণ নয়, শুধুমাত্র অনুদান দেওয়ার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পক্ষ থেকে জোরালো দাবি জানাতে হবে বলেও দাবি করে টিআইবি।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, উন্নত দেশগুলো যেখানে জাতিসংঘের সাধারণ সম্মেলনে ২০১৬ সাল থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, সেখানে তারা কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিজেরা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর দিকে ঠেলে দিয়েছে। রামপাল ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র তেমনই প্রকল্প। জাপান মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তাদের বিনিয়োগকে আবার জলবায়ু ফান্ডের ঋণ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করা হয়।
টিআইবি’র প্রধান নির্বাহী পরিচালক জানান, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে প্যারিসে এবার অনেক কথা হবে। তাই সরকারের উচিত প্যারিসে যাওয়ার আগেই একটি নিরপেক্ষ গ্রহনযোগ্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এর পরিবেশগত সমীক্ষার বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট ঘোষণা নিয়ে যাওয়া।
বিভিন্ন জলবায়ু ফান্ডের প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, কোন প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে কি না তা এখনই বলা যাবে না। তবে আমরা যেসব প্রকল্প নিয়ে কাজ করেছি, সেখানে অনেক অনিয়ম দেখেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৫
আরএম/আরআই