ঢাকা, বুধবার, ২২ মাঘ ১৪৩১, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

গ্রামীণ নারী দিবস

ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত ‘কানন বালারা’

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৫
ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত ‘কানন বালারা’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের বেশিরভাগ নারীই কুটির শিল্প, মাছ শিকার ও কৃষি কাজ করে। সে হিসেবে জীবনমুখী অর্থনীতির অনেকটাই ধারক গ্রামীণ নারী।

তারা জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখছেন। তাদের অনেকেরই বাজারের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত না হওয়ায় উৎপাদিত পণ্য ন্যায্য মূল্যে বাজারজাত করতে পারছেন না। এসব নারীরা উৎপাদক হলেও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত তারা। ১৫ অক্টোবর গ্রামীণ নারী দিবস উপলক্ষে প্রান্তিক জনপদ ঘুরে এসে পাথরঘাটা উপজেলা করেসপন্ডেন্ট শফিকুল ইসলাম খোকন এর ২ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনে পড়ুন প্রথম পর্ব:
 
উপকূলীয় প্রান্তিক জনপদ ঘুরে এসে: একটা সময় ছিল গ্রামীণ নারীরা সারা দিন সংসারে গৃহস্থালি কাজ, সন্তানদের লালন-পালন নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। অর্থনৈতিকভাবে কম-বেশি স্বামীর ওপর নির্ভরশীল ছিলেন।

কিন্তু যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমাজের বিবর্তনের চিত্র পাল্টেছে। নারীর পরিচয় নৈতিক থেকে বদলে আর্থিকে পরিবর্তন হয়েছে। এখন নারীরা রাজনৈতিক ক্ষমতায়নই শুধু নয় অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নসহ নারীকে সব ধরনের অধীনতার দিকে নিয়ে যায়।

নারী তার কর্মদক্ষতার দ্বারা উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে চলেছে। তেমনি উপকূলীয় প্রান্তিক জনপদে ঘুরে দেখা যায় গ্রামীণ উৎপাদক নারীদের।

বেত দিয়ে সাজি, ঝুড়ি, ফুল দানি, চাই, খাট-পালঙ্ক, ড্রেসিং টেবিল, টি-টেবিল, পুড়া, কুলা, ধান বা চাল রাখার ডোলাসহ অন্যান্য গৃহস্থালি সামগ্রী তৈরি করে এ পেশার সঙ্গে জড়িত হস্ত শিল্পী নারীরা। এছাড়াও গৃহিণীদের ঘর গোছানো অনেক সামগ্রী তৈরি হয় বেত দিয়ে। এ পেশার সঙ্গে পিছিয়ে নেই প্রান্তির নারীরাও। পুরুষদের সঙ্গে সমান তালে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।

তেমনি এক উৎপাদক কানন বালা। উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের আমড়াতলা গ্রামে তার বাড়ি। কানন বালার মতো উপজেলায় অসংখ্য প্রান্তিক নারী হস্ত শিল্পের উপর নির্ভরশীল। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এসব নারীরা হস্ত শিল্পের কাজ করে থাকেন। গৃহস্থালীর কাজ, সন্তানদের দেখাশুনার পাশাপাশি জীবিকার তাগিদে এসব কাজ করতে হয় তাদের।

কিন্তু এসব নারীরা হস্ত শিল্পের উৎপাদক হলেও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত থাকে। বর্তমানে প্লাস্টিকের বিভিন্ন পণ্য বাজারে আসার কারণে বেত ও বাঁশের তৈরি পণ্যের দিকে মানুষ ঝুঁকছে কম। এছাড়াও কম মূল্যে প্লাস্টিকের পণ্য পাওয়ায় বাংলার ঐতিহ্য বেত ও বাঁশের তৈরি পণ্যের ব্যবহার দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের আগ্রহও কমে যাচ্ছে।

আমড়াতলা গ্রামের কানন বালা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা নারীরা মাঠে-ঘাটে কাজ করছি, উৎপাদন করছি। পুরুষের চেয়েও বেশি কাজ করতে হচ্ছে আমাদের। কিন্তু সরকার বা ব্যাংক থেকে আমাদের কোনো সুযোগ দেওয়া হয় না। সুযোগ-সুবিধা পেলে গ্রামীণ নারীরা কৃষি ও উৎপাদনে আরও বেশি অবদান রাখতে পারবে। ’

অপর এক প্রান্তিক নারী শিউলী রাণী বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাপ-দাদার পেশা ছাড়াতেও পারছিনা। যেভাবে কষ্ট করে উৎপাদন করছি সেভাবে মূল্য পাচ্ছি না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছ থেকে কম মূল্যে পণ্য নিয়ে মধ্যস্থভোগীরা বেশি লাভ করছেন। আর বঞ্চিত হচ্ছি আমরা। ’

নারীর স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংকল্প ট্রাস্ট্রের অ্যাডভোকেসি অর্গানাইজার নাইমা জান্নাত মুন্নি বাংলানিউজকে বলেন, ‘নারীরা শুধু স্বাস্থ্য অধিকার থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে না। প্রান্তিক নারীরা তাদের মেধা, মনন দিয়ে পণ্য উৎপাদন করেও সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তথা নারী উদ্যোক্তাদের দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৫
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।